আমেরিকালিড নিউজ

চটপটি মেলা যেন দক্ষিণ এশীয়দের মিলনমেলা

এবিএনএ: জ্যাকসন হাইটসকে বলা হয় বিশ্বের নামকরা ‘ডাইভারসিফাইড’ এলাকা। এখানে অনেক দেশ থেকে আসা বহু ভাষা ও সংস্কৃতির অভিবাসীরা বাস করে। এই অভিবাসীদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ানদের আধিপত্য বেশি। এসব অভিবাসীদের নিয়েই ২১ জুলাই ‘ছায়া সিডিসি’ থার্টি সেভেন অ্যাভিনিউর সেভেন্টি সেভেন স্ট্রিটে চটপটি মেলার আয়োজন করেছিল।
নামে চটপটি মেলা হলেও এটি ছিল আসলে স্থানীয় দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের মিলনমেলা। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, তিব্বতের নানা বয়সী নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে মুখর ছিল এই মেলা। চটপটি মেলায় নিজের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে এসেছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর প্রার্থী সিনথিয়া নিক্সন।
সিনথিয়া নিক্সনের আরেকটি পরিচয় হলো তিনি এইচবিও’র বিখ্যাত সিরিজ ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’র আইকনিক চরিত্র মিরান্ডা হবসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ছায়া আয়োজিত চটপটি মেলায় ছিল দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রদর্শনী। ছিল তাদের তৈরি পোশাক, শাড়ি, টুপি ও জুয়েলারির স্টল। আর পুরোটা সময় জুড়ে ছিল নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন।
‘সাসটেইনিং হোম স্ট্রেথিং কমিউনিটিজ’ এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে চলা ছায়া মেলায় ঘোষণা দিয়েছে, সংস্থাটি এত দিন শুধু গ্রাহকদের বাড়ি কেনার ব্যাপারে সাহায্য করেছে। এখন তারা ক্ষুদ্র পরিসরে ঋণও দেবে, যাতে করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন।
সংস্থাটি মনে করে, সবাইকে একত্রিত করার জন্য এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আসলে উপলক্ষ। তবে মূল লক্ষ্য হলো স্থানীয় দক্ষিণ এশিয়ানদের একাত্মতা সৃষ্টি করা।
১৮ বছর ধরে ছায়া হাজারো গ্রাহককে বাড়ি কিনতে সাহায্য করেছে। ব্যক্তি বা পরিবারকে বাড়ি রক্ষা করতে, বাড়ির দখল নিতে, নিজের অধিকার আদায়ের জন্য ইংরেজি শিক্ষা, ইমিগ্রেশন সুবিধা, অর্থনৈতিক শিক্ষা, ক্রেডিট সৃষ্টি করতে সাহায্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছায়ার নির্বাহী পরিচালক অনীতা শ্রীচরণ।
অনীতা শ্রীচরণ আরও বলেন, ‘আমরা আজ চটপটি মেলায় দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, যেটা খুব গভীরে মিশে আছে জ্যাকসন হাইটসের অধিবাসীদের মধ্যে।’
ব্রাউন গার্ল ম্যাগাজিনের কো-ফাউন্ডার ও সিইও তৃষা সাকুজা বলেন, ‘গত ৯ বছর ধরে জ্যাকসন হাইটসে এই চটপটি মেলার আয়োজন করে চলেছে ছায়া। তাদের এই আয়োজনের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত, কারণ আমরা উভয়ই দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকানদের নিয়ে কাজ করছি।’
এই অনুষ্ঠানে আরও ছিল ক্ল্যাসিক্যাল ভরতনাট্যম, বলিউড ড্যান্স ও ভাংরা নাচ। নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার পারিজাত দেশাইয়ের নির্দেশনায় ‘এ গারবা স্ট্রিপটিজ’ অংশটি ছিল দারুণ উপভোগ্য। এতে আরও অংশ নিয়েছিলেন ত্রিনিটি বোবো, সামিনা মিত্তা, মেলিসা মরোন।
আমেরিকার বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাও উঠে এসেছে ‘ছায়া’র এই আয়োজনে। মেলায় আগতরা অধিকারের বুথে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। হেইট ফ্রি জোন নামে একটি আর্ট প্রজেক্টেও নিজেদের কাজ তুলে ধরেছে ‘অধিকার’। স্থানীয় অলাভজনক সংগঠন ‘ড্রাম’ অ্যান্টি স্ট্রিট হ্যারাসমেন্ট ওয়ার্কশপের আয়োজন করে এই মেলায়।
চটপটি মেলার আয়োজনে কমিউনিটি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পান ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাউল দাদা ও ইন্ডিয়া হোমের কর্ণধার ড. বসুন্ধরা কালাসপুদি। তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন কুইন্স বারো প্রেসিডেন্ট মেলিন্দা কার্টজ।
বাউল দাদা ফুটপাতের দোকানদার। এক কথায় ভেন্ডর। তাঁর আসল নাম সানোয়ার আহমেদ। বাউল গান ও মজাদার ঝালমুড়ির জন্য তিনি বেশ জনপ্রিয়।
অ্যান্থনি বোর্ডেনের ‘পার্টস আননোন সিরিজ’ ফিচারের বদৌলতে বাউল দাদাকে এখন নিউইয়র্কের অনেকেই চেনে। বাউল দাদার বয়স ৮৯ বছর। ৩৮ বছর ধরে নিউইয়র্কে থাকার পরেও বৈধতা মেলেনি। এখন তিনি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান। সবার আর্থিক সহায়তায় তিনি যেন স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে যেতে পারেন এ জন্য ‘গো ফান্ড মি’ নামে এক প্রচারণার আয়োজন করেছেন।
এদিকে ইন্ডিয়া হোম কাজ করে দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটির বয়স্কদের নিয়ে।
আর্ট ও অ্যাক্টিভিটির জন্য রাজ কুমার কালচারাল সেন্টারকেও পুরস্কৃত করা হয়। তারা ইন্দো-ক্যারিবিয়ান সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত দেশ যেমন গায়ানা, ত্রিনিদাদ, জ্যামাইকা ও সুরিনাম নিয়ে কাজ করে।
দক্ষিণ এশিয়ান হেনা পেইন্টিং করে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের নীনা কামাল। মেলার আকর্ষণ ছিল কে কত দ্রুত পানিপুরি খেতে পারে-এই প্রতিযোগিতা। এটা অনেকটা কনি আইল্যান্ডের ‘হটডগ খাওয়ার প্রতিযোগিতা’র আদলে করা হয়।
অনুষ্ঠানে আসা শিল্পী ও দলগুলো হলো—চিত্রা সিং, গানগাদাই কৃতান, হাবিবি এক্সপ্রেস কর্মা, মালিনী শ্রীনিবাসন ও ড্যান্সার, মাসুম মৈত্র, উদীচী যুক্তরাষ্ট্র, মীনমুভস, পানজিত দেশাই, নেপালি ড্যান্স থিয়েটার, মাসালা ভাংরা, শরীফ রাব্বী, উমেশ মানগি।

Share this content:

Related Articles

Back to top button