
এ বি এন এ : বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে ‘এমএল ঐশী’ নামের লঞ্চডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে আরো ৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো মোট ১৮। এখনো আরো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
এরআগে, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি টেনে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ‘এমএল ঐশী’ -২ লঞ্চটিকে প্রায় ৪০ ফিট গভীর থেকে উপরে তোলা হলে ৪ শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়।
লঞ্চ থেকে উদ্ধার নিহত চার শিশু হলো, রিয়াদ (৬), মাইশা (৪), রাব্বি (৯) ও শাফোয়ান (৩)। এরআগে বুধবার শাফোয়ানের বাবা মিলন ঘরামীর (৪০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার।
এদিকে, উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে খুলনা থেকে আসা নৌ বাহিনীর ৯ ডুবুরিসহ ১৬ সদস্যের একটি দল রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও ডুবুরিরা এবং বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরিসহ কয়েকটি দল উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও স্থানীয় জনসাধারণ উদ্ধার কাজে সহায়তা করছেন।
বুধবার বিকেলে দুর্ঘটনা কবলিত স্থান উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের দাসের হাট বাজারের মসজিদ বাড়ি ঘাটের অদূরে সন্ধ্যা নদীর প্রায় ৪০ ফিট গভীরে তলদেশে লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করে ডুবুরিরা।
পুলিশের হিসাব অনুসারে এখনো অন্তত ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশের কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।
কন্ট্রোলরুমের তালিকানুযায়ী নিখোঁজ রয়েছেন, নিহত মিলন ঘরামীর স্ত্রী খুকুমনি (২৫) ও তাদের সন্তান সাফওয়ান (০৩), রেহানা বেগমের ছেলে রিয়াদ হাওলাদার (৫), ফিরোজা বেগমের স্বামী আ. মজিদ হাওলাদার (৪৫)। উজিরপুরের খলিল হাওলাদারের স্ত্রী হামিদা বেগম (৪০) ও তার ছেলে নাফফি (৯), মনিশঙ্করের স্ত্রী কল্পনা রানী (২৫), উজিরপুরের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে রাফি (৭) এবং বানারীপাড়ার আলমগীর হোসেনের শিশু মেয়ে মারিয়া বেগম (৩), মালেক সরদারের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), মনোয়ার বেগম (৪৫), মুজা মোল্লা (৬২) ও দিদার (০৭)।
তবে ২৫-৩০ জন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও স্থানীয়রা।
অপরদিকে লঞ্চডুবির খবর পেয়েই আশেপাশের লোক এবং যাত্রীদের স্বজনরা ছুটে আসে সন্ধ্যার তীরে। মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এ সময় স্বজনদের আর্তনাদে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে।
এছাড়া লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার কারণ জানতে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বানারীপাড়া উপজেলার সয়ৈদকাঠি ইউনিয়নরে মসজিদবাড়ি সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীতে অর্ধশতাধকি যাত্রী নিয়ে এমএল ঐশী-২ নামের লঞ্চটি ডুবে যায়।
Share this content: