জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ বেনজীরকে দুদকে তলব

এবিএনএ: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তানদেরও তলব করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক নোটিশে বেনজীর আহমেদকে আগামী ৬ জুন দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

পৃথক একটি নোটিশে বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদেরও আগামী ৯ জুন হাজির হতে বলেছে দুদক। এর আগে আজ দুপুরে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে থাকা শেয়ার বাজারের সব বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট বা বিও হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করে রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেগুলো ফ্রিজ করেন।

গত ২৩ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের এসব একাউন্ট অবরুদ্ধ বা ফ্রিজের আদেশ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি থেকে আজ এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন আদালত। গত ২৩ ও ২৬ মে আদালত থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত ২৩ মে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। অন্যদিকে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্লাট জব্দের আদেশ দেন।

এর পর থেকে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

গত ২১ এপ্রিল বেনজীরের দুর্নীতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকে আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

জানা যায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানেই বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল সম্পদের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন সাভানা ইকো রিসোর্ট, দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ছয়টি কোম্পানি, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বিপুল জায়গা-জমি, পূর্বাচলে ৪০ কাঠার ওপর নির্মিত নজরকাড়া ডুপ্লেক্স বাড়ি ও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতনভাতা বাবদ আয় করেছেন আনুমানিক ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু তার বর্তমানে যে সম্পদ রয়েছে, বাজারমূল্য অনুযায়ী হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উল্লেখ, সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি ও বিপুল সম্পদের তথ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড়, হইচই পড়ে যায়। তার সম্পদের অনুসন্ধানে দুদককে চিঠি দেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এমপি। এরপর দুদক বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পদের অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে।

Share this content:

Related Articles

Back to top button