এবিএনএ : সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। হাতে সময় কম থাকলেও এই সময়ে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব বলে মনে করে দলটি। মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টি এই প্রস্তাব করে। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা রাষ্ট্রপতিকে বলেন, যদিও আইনমন্ত্রী বলছেন আইন প্রণয়নের যথেষ্ট সময় নেই। তবে পার্লামেন্টেই উদাহরণ আছে যে, এর চেয়েও কম সময়ে আইন প্রণয়ন কেবল নয়, সংবিধানও সংশোধন হয়েছে। যেটা প্রয়োজন সেটা হলো সংবিধানকে অনুসরণ করা।
সংলাপ শেষে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। রাষ্ট্রপতি আলোচনাকালে আমাদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন হওয়া উচিত। তিনি আইন প্রণয়নের ব্যাপারে ইতিবাচক। ইসি গঠন বিষয়ে আইন করা সম্ভব। রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিলেই এটি হয়। কারণ এটি জাতীয় দাবি।’ আইন না করে ইসি গঠন করা হলে আপনারা নির্বাচনে যাবেন কি না? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখি দল, নির্বাচনে যাব। এর থেকে কঠিন সময়েও আমরা নির্বাচনে গেছি।’ এদিকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি জানিয়েছে, তারা রাষ্ট্রপতিকে একটি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাবে বলা হয়-
১. নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাই এর প্রতি তদ্রুপ মান্যতা ও মর্যাদা থাকতে হবে যাতে করে নির্বাচন পরিচালনা, তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন পরিবেশে কাজ করতে পারে।
২. সংবিধানের ১১৮ বিধি বাস্তবায়নার্থে আইনের বিধানাবলি অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন তৈরি করতে হবে। জাতীয় সংসদের নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই এই আইন উত্থাপন করে জরুরি ভিত্তিতে তা পাস করা যেতে পারে। এখানে উল্লেখ করতে চাই দেশের সকল রাজনৈতিক দলই এই আইন প্রণয়নের পক্ষে। নাগরিকবৃন্দের পক্ষ থেকেও একই দাবি উত্থাপিত হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগসংক্রান্ত সংবিধান বর্ণিত বিধি পরিপূরণে আপনি সরকারকে এই নির্দেশ দিতে পারেন। অন্যথায় প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক জন্ম দেবে এবং এ ধরনের আস্থাহীনতার পরিবেশে নির্বাচন কমিশন যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে না।
৩. এই আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ নিয়োগের জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এই সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠিত হবে। এই সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পরামর্শমত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ করবেন।
৪. যদি আইন প্রণয়ন একান্তই সম্ভব না হয় তবে বিকল্প হিসেবে যে সার্চ কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীদের নিয়ে তা গঠন করা যেতে পারে। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতি পদে চারজনের নাম প্রস্তাব করবে। সার্চ কমিটির দেয়া নামের তালিকা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটি বাছাই করে সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। রাষ্ট্রপতি ওই তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দেবেন।
৫. নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুজন নারী সদস্য থাকবেন।
৬. নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আইনসমূহের যথাযোগ্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, কামরূল আহসান, আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান ও নজরুল ইসলাম হক্কানী সংলাপে অংশ নেন।