এবিএনএ: কোয়াড কি চীনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে? অনানুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া কোয়াড গঠন করেছে। এই চারটি দেশের নেতারা গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে সশরীরে সাক্ষাত করেছেন। এখন থেকে কয়েক বছর আগেও এমন মিলন ছিল কল্পনাতীত। ওই সময়ে চীনের স্পর্শকাতরতা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন ছিল অধিক বেশি বৈশ্বিক আদর্শ। কোয়াড তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে কিনা তা এত শিগগিরই বলা যাবে না। তাদের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে, এশিয়ায় বিরোধহীন এক কর্তৃত্ব হয়ে উঠুক চীন এমন কর্তৃত্ববাদ বন্ধ করা। চারটি দেশ এরই মধ্যে উচ্চাভিলাষী কৌশলে স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ায় সহযোগিতা, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি করা।
বিষয়বস্তু কি? গত সপ্তাহে কোয়াড নেতারা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তারা আইনের শাসন, নৌ চলাচল ও ফ্লাইটে স্বাধীনতা, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রের অখ-তার ওপর বিশ্বাস জোরালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর প্রতিটি নীতি বেইজিংকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। এ ছাড়া এই গ্রুপটি বিশ্বজুড়ে ১২০ কোটি ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা সরবরাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে আগামী বছরের শেষ নাগাদ কমপক্ষে ১০০ কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করতে চায় তারা। জনসন অ্যান্ড জনসনের কাছ থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান সহ ভারতের প্রতিষ্ঠান বায়োলজিক্যাল ই. এসব টিকা উৎপাদন করবে। এ বছরের শুরুতে ভারতে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। তখন টিকা রপ্তানি স্থগিত করে ভারত। এরপর তারা টিকা রপ্তানি অক্টোবর থেকে শুরু করতে রাজি হয়েছে। এই টিকা উৎপাদনের খরচ দেবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এসব টিকা সরবরাহে লজিস্টিক্যাল বিশেষজ্ঞদের ব্যবহার করবে অস্ট্রেলিয়া।
কোয়াডের অনেক পরিকল্পনা এখনও পরিষ্কার নয়। ‘গ্রিন শিপিং নেওয়ার্ক’ কি সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। এশিয়ায় কতগুলো ‘উচ্চ মানের অবকাঠামো’ তৈরি হবে সে বিষয়েও পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। মিসেস তানভি মাদন বলেন, অপারেশনাল সহযোগিতা কিভাবে এই চারটি দেশ করবে সে বিষয়ে তিনি স্বস্তিদায়কভাবে বিস্মিত। বিশেষ করে অত্যাধুনিক ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তি’র প্রতিশ্রুতির বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত প্রভাব আছে। তবে একটি ভবিষ্যত কল্পনা করা সম্ভব, যেখানে কোয়াডের মধ্যকার সহযোগিতা চীনের টেলিকম প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে এবং জেডটিই’কে বিশ্বের ৫জি নেটওয়ার্কে আধিপত্য বিস্তার থেকে প্রতিরোধ করবে। অপরিবাহী কন্ডাক্টর দিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের স্বার্থ রক্ষা করবে। সিনথেটিক বায়োলজি, জিনোম সিকুয়েন্সিং এবং কৃত্রিম বুুদ্ধিমত্তায় চীনের আধিপত্যকে খর্ব করবে। কোয়াড গ্রুপ একই রকম প্রতিশ্রুতির বন্ধনে আবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গণিত গবেষণায় নতুন ‘কোয়াড ফেলোশিপ’-এ অর্থায়ন করা হবে ১০০ মাস্টার্স ও ডক্টরাল শিক্ষার্থীদের জন্য। এক্ষেত্রে সুযোগ পাবেন প্রতিটি দেশে ২৫ জন করে। সরাসরি আলোচনার প্রস্তাবসহ সংলাপে প্রয়োজন চুক্তি, যা দেখে এখন মনে হয় কোয়াড একটি টকশপ ছাড়া কিছু নয়। এই চারটি দেশের রাজধানীতে জনমত আছে যে, তারা এর মধ্য দিয়ে চীনকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন না।
মিস্টার রিচার্ড ফন্টেইন বলেন, যে ধারণা চীনের মন পরিবর্তনের জন্য নেয়া হচ্ছে, দৃশ্যতা তা জানালা দিয়ে পালিয়েছে। আমার মনে হয় ওয়াশিংটনে এবং বিশ্বজুড়ে রাজধানীগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে দেখে আসছে যে, চীনকে উস্কে দেয়া হবে না, এমন নীতি কাজ করেনি।
কোয়াড নিয়ে এখনও সংশয়ের অনেক কারণ আছে। এই গ্রুপটি হতে পারে অনানুষ্ঠানিক। কাঠামো ব্যতীতই তা কার্যকর হবে। এর গঠনগন্ত্রে এমন সিদ্ধান্তের কথা থাকতে পারে যে, চীনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পছন্দের। আফগানিস্তান থেকে দ্রুততার সঙ্গে সেনা প্রত্যাহার করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সেই আফগানিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বে যে অশান্ত অবস্থা তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। চীনা নেতৃত্বাধীন ব্রিকস এবং সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের মতো গ্রুপগুলোতে আগেই এক পা এগিয়ে দিয়েছে নয়া দিল্লি। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কাময় বাণিজ্যিক বিতর্ক ওয়াশিংটনকে বেইজিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিকল্প প্রতিযোগী অর্থনীতি তৈরিতে সক্ষমতা ব্যাহত করেছে। চীন ঘোষণা করেছে তারা যোগ দিচ্ছে কমপ্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপে। এটি ১১টি সদস্যের একটি গ্রুপ। ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তারপরই এই ১১টি সদস্য একত্রিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি বাইডেনের মধ্যে।
মিস্টার ফন্টেইন বলেন, বিষয়টা যেন আমাদের পিঠের পিছনে নিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা এক হাত দিয়ে যুদ্ধের মতো। এটা হয়তো সত্য হতে পারে। কিন্তু কোয়াড ন্যূনতম এমন লড়াইয়ের জন্য কিছুটা জায়গা দেখাচ্ছে। হাইতির দারিদ্র্য থেকে পলায়নরত শরণার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ চাইতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে। এতে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় শরণার্থীর ঢল নামতে পারে।
(লেখাটি অনলাইন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল থেকে অনুবাদ)