জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজশিক্ষা

শিক্ষার্থীতে সরব সারা দেশের স্কুলগুলো

এবিএনএ : দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। আজ সকালে রাজধানীর মতো বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল-কলেজগুলো খুলেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হ্যান্ড থার্মাল দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশ করিয়েছেন শিক্ষকরা। শ্রেণীকক্ষে ছাত্র-শিক্ষক সবার মুখেই ছিল মাস্ক। এদিকে বন্যা কবলিত হওয়ায় বেশ কিছু জেলার স্কুলের তালা খুলেনি। আশ্রয়শিবির খোলা হয়েছে বেশ কিছু স্কুলে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ দেড় বছর পর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাঁদপুরের সকল বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু হয়েছে। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে তাদেরকে মাস্ক প্রদান ও বিদ্যালয়ের প্রবেশের পূর্বেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি বেঞ্চে দুইজন ২ জন শিক্ষার্থী বসার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চাঁদপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।

মহম্মদপুর প্রতিনিধি জানান, মাগুরার মহম্মদপুরে দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় চালু হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে আনন্দঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী পাঠদান কার্যক্রম। ধোয়াইল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বিদ্যালয়ে প্রাণ প্রিয় ছাত্র/ছাত্রীদেরকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। ছাত্র/ছাত্রীদের শরীরের তাপ মাত্রা নির্ণয় করে মাস্ক পরিধান করে শ্রেণী পাঠদান শুরু হয়।

চান্দিনা প্রতিনিধি জানান, রাবেয়া আক্তার ও তার বোন কুলসুম আক্তার পড়ে একই স্কুলে। একজন পঞ্চম শ্রেণিতে, আরেকজন প্রথম শ্রেণিতে। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস মেখে সকাল ৯টায় তারা হাজির স্কুলের ফটকে। তারা পড়ে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই দক্ষিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সারা দেশের সঙ্গে সেখানেও রোববার প্রায় দেড় বছর পর খুলেছে স্কুলের ফটক। স্কুলে গিয়েই অন্যদের মতো রাবেয়া ও কুলসুম প্রথমে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিয়েছে। এরপর শিক্ষকরা তাদের মাস্ক ও চকলেট উপহার দিয়ে বরণ করে নেন।

উচ্ছ্বাসে শিক্ষকদের দেয়া মাস্ক পরতে গিয়ে ছিড়ে ফেলে স্কুলটির প্রথম শ্রেণির ছাত্র সাফায়েত হোসেন। পরে আরেকটি মাস্ক এনে তাকে পরিয়ে দেন এক শিক্ষক। সাফায়েত বেশ সচেতন এবার, একটু পর পর হাত দিয়ে দেখে নিচ্ছে মাস্ক ঠিক আছে কি না।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন জানান, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলেছে। আমাদের স্কুলে ২৯৪ জন শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেছে। তাদের আগমন যেন আনন্দময় হয়, সেজন্য স্কুল রঙিন বেলুন দিয়ে সাজিয়েছি। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে চকলেট ও মাস্ক বিতরণ করেছি। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছি।

ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর সচল হয়েছে উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৬৪টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৮টি, মাদরাসা ৩৮টি এবং কলেজ রয়েছে ৮টি। ইউনিফর্ম পরে, কাঁধে বই-খাতার ব্যাগ ঝুলিয়ে দলে দলে শিক্ষার্থীরা ফিরেছে তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছে ভয়, আশঙ্কা। এর মধ্যেও রোববার সকালে শিক্ষার্থীদের উৎসব মুখর পরিবেশে স্ব-স্ব বিদ্যালয় চলছে কুশল বিনিময়। প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষক-প্রিয় বন্ধু-সহপাঠীদের পেয়ে কিছুতেই থামছে না আনন্দের উচ্ছ্বাস।
গত দেড় বছরে প্রাথমিকের অনেক হতদরিদ্র শিক্ষার্থী পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে। তাদের আনেকর আর ফেরা হবেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মাধ্যমিক স্থরের অনেক শিক্ষার্থীর এরই মধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারের পাশাপাশি তারা আবারও শ্রেণিকক্ষে বসবে এমন ভাবনা নেই অধিকাংশের মধ্যে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও হয়তো অনেক শিক্ষার্থীর দেখা মিলবে না শ্রেণিকক্ষে।
উপজেলার পৌরশহরের ভান্ডারিয়া বিহারী লাল মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি বন্দর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে স্কুলে আসতে দেখা যায়। প্রথম দিন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উৎসব-আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে বরণ করে শিক্ষার্থীদের। এসময় স্কুলগুলোর ফটকে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তাদেরকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ফটকে স্কুলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও অবস্থান করতে দেখা গেছে।

ভান্ডারিয়া বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মুনতাসির বীন মামুন জানান, দীর্ঘ সময়ে পর বিদ্যালয়ে এসে ভালো লাগছে। অনেকদিন পর সহপাঠীদের এবং শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বাসায় এতদিন আলশ ও এ্যাসাইন্টমেন্ট লিখে জমাদিয়ে পার করতে হয়েছে সময়টা। ঠিকমতো পড়াশোনা হয়নি। এখন পড়াশোনায় ফিরতে পারবো।

ভান্ডারিয়া বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আজ আমরা উচ্ছ্বসিত, শিক্ষার্থী ছাড়া আমাদের আমাদের জীবন অর্থহীন। শিক্ষার্থীদের আসায় বিদ্যালয়টি প্রাণচঞ্চল ফিরে পেয়েছে। সরকারে ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমার বিদ্যালয় পরিচালনা করব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, আমি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। সবখানেই দেখেছি সরকারি বিধি নিষেধ মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। সকল শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামজিক দুরত্ব বজায় রেখে মুখে মাস্ক পরে শ্রেণিকক্ষে ক্লাশ করছে।
এদিকে ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংগঠন মিরাজুল ইসলাম ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্দ্যোগে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফ্রি মাস্ক বিতরণ করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ই মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে সে বছরের ১৭ই মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে তা দফায় দফায় সময় বেড়ে এ পর্যন্ত এসেছে। এ সময় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস চালু করা হয়েছিল।

Share this content:

Back to top button