এবিএনএ : হাইকোর্ট বলেছেন, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নিবন্ধনভূক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে হোমিও-ইউনানী-আয়ুর্বেদিকসহ বিকল্পধারার চিকিৎসা (অল্টারনেটিভ মেডিসিন) পদ্ধতির পেশাধারীরা নামের আগে ভিন্ন পদবী ব্যবহার করতে পারবেন। রায়ে বলা হয়েছে, হোমিও-ইউনানী-আয়ুর্বেদিকসহ বিকল্পধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাধারীরা নামের আগে ইনটিগ্রেটেড ফিজিশিয়ান, কমপ্লিমেন্টারি ফিজিশিয়ান, ইনটিগ্রেটেড মেডিসিন প্রাকটিশনার, এবং কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন প্রাকটিশনার পদবী ব্যবহার করতে পারেন।
বিকল্পধারার চিকিৎসা (অল্টারনেটিভ মেডিসিন) পদ্ধতির পেশাধারীদের নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে করা এক রিট মামলায় এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এক পূর্ণাঙ্গ রায়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আদালত রায়ে রিট মামলা খারিজ করে দিলেও সরকার ও বিকল্পধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাজীবীদের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিকল্পধারার চিকিৎসা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রনের জন্য সরকারকে ভারতীয় মডেলে (মিনিস্ট্রি অব আয়ুশ গভর্ণমেন্ট অব ইন্ডিয়া) একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, বিকল্প ধারার চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেবার মান নির্ধারণ ও উন্নয়ন এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রদত্ত ডিগ্রিসমূহকে স্বীকৃতি প্রদান করার পদ্ধতি নির্ধারণ করার পরামর্শ প্রদান করা হলো।
বিকল্পধারার চিকিৎসা (অল্টারনেটিভ মেডিসিন) পদ্ধতির পেশাধারীদের নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহারের অনুমতি এবং বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য পৃথক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠণের নির্দেশনা চেয়ে ওই চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং সংগঠনের ৯৬ জন সদস্য ২০১৯ সালে এক রিট আবেদন করেন। আদালত প্রথমে রুল জারি করেন। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গতবছর ১৯ নভেম্বর তা খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি এর ৭১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও অ্যাডভোকেট খন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম।
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, রিট আবেদন খারিজ করা হলেও আদালত বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। আশা করবো, সরকার এই রায় বিবেচনা করবেন।
রায়ে বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯ মোতাবেক চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। প্রত্যেক নাগরিক তার বিবেকের মাধ্যমে এবং চিন্তার মাধ্যমে কোন পদ্ধতির চিকিৎসা তথা প্রচলিত বা পশ্চিমা বা এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করবে নাকি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি প্রহণ করবে এটি সম্পূর্ণ তাঁর মৌলিক অধিকার। একইভাবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪০ মোতাবেক আইনের দ্বারা অরোপিত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যেকোন পেশা গ্রহণের অধিকার তার মৌলিক অধিকার। একজন নাগরিক প্রচলিত চিকিৎসক হবেন না বিকল্প ধারার চিকিৎসক হবেন এটি তার মৌলিক অধিকার। সুতরাং বিকল্প ধারার কিংবা প্রচলিত চিকিৎসক হওয়ার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় আইনী কাঠামো প্রস্তুত করে দেওয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসি-এর নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারিখের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে অলটারনেটিভ মেডিসিন কেয়ার শীর্ষক অপারেশনাল প্লানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব নামের আগে ডাক্তার (ডাঃ) পদবী সংযোজনের অনুমতি প্রদান করেছে, যা এক কথায় বেআইনি ও দুখজনক। এ ছাড়াও বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড কর্তৃক ২০২০ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি জারী করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণকে তাদের নামের আগে পদবী হিসেবে ডাক্তার ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করাও বেআইনি। রায়ে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বিকল্প ধারার চিকিৎসকরা পদবী হিসেবে ডা. লিখতে পারে না।
Share this content: