জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসায় ইন্টারপোল কর্মকর্তা

এবিএনএ : জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা উঠে এসেছে ১৪ দেশের পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্মেলনে। আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ যেভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে, তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে অন্যরাও।

রবিবার রাজধানীর হোটেলে সোনারগাঁয়ওয়ে তিন দিনের এই সম্মেলন শুরু হয়। এর নাম রাখা হয়েছে চিফস অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া অ্যান্ডে নেইবারিং কান্ট্রিস। সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভূটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভিয়েতনামের পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য-রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন কার্বিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (উগ্র চরমপন্থা ও বহুজাতিক অপরাধ দমনে আঞ্চলিক সহযোগিতা।)

সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতেই রয়েছে ধর্মভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা। এ থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। বাংলাদেশে ৯০ দশকের শুরু থেকেই নানা নামে সক্রিয় জঙ্গিরা। তবে গত বছর রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে যে ধরনের হামলা হয়েছে, এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।

২০১৫ সাল থেকেই দেশের বেশ কিছু এলাকায় বিদেশিদের ওপর বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটে। তবে আর্টিজান হামলায় এক দিনে হত্যা করা হয় ১৭ বিদেশিকে। সেখানে খুন হন দুই পুলিশসদস্যসহ পাঁচ বাংলাদেশিও। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় হামলাকারীরাও।

এই ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাতে জঙ্গি হামলার চেষ্টা হয়। ময়দানে ঢুকতে না পেরে জঙ্গিরা হামলা করে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে। খুন হন দুই পুলিশ সদস্য। আর পুলিশের গুলিতে মারা যান এক হামলাকারী, ধরা পড়েন আরও একজন।

এরপর পুলিশের পাল্টা অভিযানে ঢাকার মিরপুরের কল্যাণপুর, একই থানার রূপনগর, আজিমপুর, উত্তরা থানার আশকোনা, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া, গাজীপুরের পাতারটেক ও হারিনাল, আশুলিয়ার বসুন্ধরাটেক এবং টাঙ্গাইলের কাগমারীতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায় পুলিশ ও র‌্যাবের বিভিন্ন বাহিনী। এসব অভিযানে নিহত হয় ৩০ জনেরও বেশি। যাদের মধ্যে রয়েছেন সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় নেতৃত্ব দেয়া একাধিক ব্যক্তি। এসব অভিযানের পর জঙ্গিরা আর তেমন কোনো নাশকতা ঘটাতে পারেনি।

এসব অভিযানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের সিকিউরিটি জেনারেল জর্জ স্টক বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ভালো অসস্থানে রয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে তারা সফল। গত বছর জঙ্গি হামলা হয়েছে সেটা তারা ভালো মোকাবেলা করেছে।’

জঙ্গিবাদ কোনো একক দেশের সমস্যা নয়, উল্লেখ করে এ নিয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বানও জানানো হয় সম্মেলনে। জর্জ স্টক বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো- সাইবার ক্রাইম ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সন্ত্রাস। এটা আমরা সবাই মিলে এর মোকাবেলা করব।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ জিরো টলারেন্স দেখিয়েছে।’

এই সম্মেলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্তাস ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মত এমন সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। এতে করে যেসব অপরাধী বিদেশে পালিয়ে রয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আজকের সম্মেলন সহায়ক হবে।’ বর্তমানে ইন্টারপোলের ১৯০টি দেশ জঙ্গি মোকাবিলায় একে অন্যকে সহযোগিতা করছে বলে জানান তিনি।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘জঙ্গি নামে স্যোসাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আসলে বাংলাদেশে জঙ্গিদের কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছে।’

Share this content:

Related Articles

Back to top button