এবিএনএ : ষোল বছর আগে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টস করতে নেমেছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও সৌরভ গাঙ্গুলি। সেটা ছিলো বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট।
তখন বলা হয়েছিল, দ্রুতই ভারতের কোনো ভেন্যুতে ভারত-বাংলাদেশের দুই অধিনায়ক টেস্টের টস করতে নামবেন। তারপর থেকে দুনিয়ার বুকে অনেক বসন্ত এসে চলে গেছে, সৌরভ-দুর্জয়রা খেলা ছেড়ে কর্মকর্তা হয়ে গেছেন, সেদিনের হাঁটতে শেখা শিশু আজ যার যার জাতীয় দলে খেলছে। কিন্তু ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলা হয়নি বাংলাদেশের। অবশেষে দীর্ঘ সেই প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আজ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার দেড় দশকেরও অনেক বেশি সময় পার করে এসে ভারতের মাটিতে আজ প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। হায়দারাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ সকালেই শুরু হতে যাওয়া এই টেস্ট তাই কেবলই একটা ম্যাচ নয়; এ এক ইতিহাস। এই টেস্ট এক নতুন যুগের শুরু। অবশ্য বাংলাদেশ এই টেস্টে বেশ পিছিয়ে থাকা এক দলও। টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি; সব ফরম্যাটেই ভারত এখন এক সোনালী সময় অতিক্রম করছে। আবার খেলাটা ভারতেরই মাটিতে। যেখানে ভারতীয় দল দুর্বল থাকলেও হয়ে ওঠে বাঘের মতো শক্তিশালী। এই দুইয়ের মিলনে ভারতের মাটিতে এই টেস্টটাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আগেই বলে রেখেছেন, কঠিনতম পরীক্ষা।
সেই পরীক্ষায় বাংলাদেশ দলকে আজ নামতে হবে আবার কিছু দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই। গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের প্রধান দুশ্চিন্তা ব্যাটিং। কিন্তু সেই ব্যাটিং গভীরতা বাড়ানোর মতো বাড়তি ব্যাটসম্যান নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই দল। ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে গেলে বোলার সংকট হবে। ভারতের প্রতাপশালী ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে কমপক্ষে চার জন বিশেষজ্ঞ বোলার চাই। সে ক্ষেত্রে একাদশ গঠনটা একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে। তবে খেলার এই সমীকরণ খেলার মাঠের বাইরে ততো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না; যতোটা পাচ্ছে উত্সব। বাংলাদেশের ভারতে টেস্ট খেলার উপলক্ষটাকে হায়দারাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড একটা উত্সবের উপলক্ষই বানিয়ে রাখতে চায়। তারা এই উপলক্ষে বিশেষ স্যুভেনির প্রকাশ থেকে শুরু করে স্মারক বক্তৃতা, অনেক আয়োজন করছে। আয়োজন করার মতোই ঘটনা। বাংলাদেশ তার প্রথম টেস্ট খেলেছিলো ভারতের বিপক্ষে। এরপর থেকে ভারতে বাংলাদেশের সফরের প্রশ্ন যতোবারই এসেছে, তা চাপা পড়ে গেছে। বদলে ভারতীয় দল এসে এখানে সফর করে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে দুই বোর্ডের জন্যই সেটা লাভজনক হওয়ায় এ নিয়ে বোর্ডগুলোও আর মাথা ঘামায়নি। কিন্তু গত দু বছর ধরে দুই বোর্ডই বারবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলো।
এই টেস্টের আগে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি তার কথায় পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, এমন সফর বাংলাদেশের অনেক আগেই প্রাপ্য ছিলো। বিশেষ করে বাংলাদেশ দল এখন যে ধরণের পারফরম করছে, তাতে তাদের বিপক্ষে ভারতের খেলাটা একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার বলেই মনে করছেন তিনি। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান মনে করেন, টেস্টেও বাংলাদেশ ওয়ানডের মতো শক্তিশালী একটি দল হয়ে ওঠার কথা। সেটা হতে পারছে না কেবল খেলার সুযোগ কম পাওয়ায়। এর আগেই ভারতীয় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা এই টেস্ট সামনে রেখে নানারকম প্রশংসায় ভাসাতে শুরু করেছেন বাংলাদেশকে। এখন বাংলাদেশ দলের কাজ মাঠে এইসব প্রশংসা ও স্তুতিকে সত্যি বলে প্রমাণ করে আসা।