এবিএনএ : প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের ভ্যানে বহনকারী সেই চালক ইমাম শেখের ভাগ্য খুলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ভ্যানচালক ইমাম শেখের বিমান বাহিনীতে চাকরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ইমাম শেখের ভ্যানটি জাতীয় জাদুঘরে স্থান পাচ্ছে।
জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যানে করে ঘোরার আগ্রহ প্রকাশ করেন। নিয়ে আসা হয় ইমাম শেখের ভ্যানটি। ওই ভ্যানে করেই টুঙ্গিপাড়ায় বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান প্রধানমন্ত্রী। এরপরই আলোচিত হয়ে ওঠে ভ্যান চালক ইমাম।
কিন্তু নিজের ইচ্ছার কথা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারেনি ইমাম শেখ। তার ইচ্ছার কথা নিয়ে ‘যে কথা মনের কথা’ শিরোনামে গণমাধ্যমে বিভিন্ন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ইমাম শেখকে যোগ্যতা অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে চাকরি দেওয়া হচ্ছে- এমন কথা জানানো হয় ইমামকে।
রোববার সকালে বিমান বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল তার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার সরদার পাড়ায় পৌঁছে। সেখান থেকে তাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমান বাহিনীর প্রতিনিধি দলটি ইমামকে যশোর নিয়ে যায়।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ রুহুল আমিন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ দাউদ, বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার মো. হারুন-অর-রশিদ, দেলোয়ার হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের বহনকারী ভ্যানচালক কিশোর ইমাম শেখকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে বিমান বাহিনীতে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বিমান বাহিনীর প্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ইমাম শেখ
স্থানীয় ইব্রাহিম শেখ, শেখ মোহাম্মদ কেরামত আলী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের এলাকার একটি ছেলের ভ্যানে করে ঘুরেছেন এতে আমরা আনন্দিত। সেই সঙ্গে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ইমামকে একটি চাকরি দেয়া হচ্ছে এতে আমরা খুশি। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
ইমামের মা শাহানুর বেগম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলের রিকশা ভ্যানে উঠবেন এটা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। প্রধানমন্ত্রীকে আমার ছেলে ঘুরিয়েছে এতে আমি অনেক আনন্দিত। আমাদের মত সহায় সম্বলহীন পরিবারের পাশে প্রধানমন্ত্রী ও বিমান বাহিনী দাঁড়িয়েছে। আমরা সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।’
ভ্যানচালক ইমাম শেখ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে অনেক কথাই বলেছেন। বাড়ি কোথায়, কেমন আয় রোজগার হয়। প্রধানমন্ত্রী আমার ভ্যানে ঘুরেছেন এটাই আমার জীবনের পরম পাওয়া।’ চাকরি দিয়ে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোয় সকালের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ভ্যানচালক ইমাম শেখ। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী টাকা দিলেও ইমাম নিতে চায়নি। এতে আমরা গর্ববোধ করি যে, অর্থের প্রতি ইমামের মোহ নেই। প্রধানমন্ত্রী ও বিমানবাহিনী ছেলেটির দায়িত্ব নেওয়ায় আমারা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী ইমামকে বিমান বাহিনীতে চাকরি দেওয়া হবে। তাকে যশোরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভ্যানটিও নিয়ে যাচ্ছে। উপযুক্ত অর্থ পরিশোধ করে ভ্যানটি জাদুঘরে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সমাধি এলাকার ১ নম্বর গেট থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিজের ভ্যানে তুলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নিয়ে যায় ইমাম শেখ। ভ্যান থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ৫০০ টাকা বের করে দেন। ইমাম টাকা নিতে রাজি না হলেও এক কর্মকর্তা তার পকেটে টাকা গুজে দেন।