
এবিএনএ : আমার জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছি। হয়ত এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আমি বেঁচে থাকতে চাই তোমাদের মাঝে, আমি বেচে থাকতে চাই জাতীয় পার্টির মধ্যে। জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হলে আমি বেঁচে থাকবো। আমি বেঁচে থাকতে পারবো জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হলে। আমাদের ক্ষমতায় যেতে হলে দলের শক্তির প্রয়োজন। দলকে সর্বত্র শক্তিশালী করতে হবে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। কতদিন আর বাঁচবো…? আমাকে বাঁচাতে হলে জাতীয় পার্টিকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। আমাকে নতুন জীবন দাও। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঠিক এভাবেই নিজের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মহাসমাবেশে নেতা-কর্মীদের ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করতে দলের নেতা-কর্মীদেরকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, জীবন শেষভাগে এসে তিনি দলকে আরেকবার ক্ষমতায় দেখতে চান। সমাবেশে বিপুল জনসমাগম দেখে উচ্ছ্বসিত এরশাদ বলেন, জীবনে বহু সমাবেশ দেখেছি কিন্তু আজকের মতে এতো বড় সমাবেশ কখেনো দেখি নাই ।
জাতীয় পার্টি জেগে ওঠেছে, দেশের জনগণ জেগে ওঠেছে, তারা পরিবর্তন চায় জানিয়ে নেতা-কর্মীদেরকে দলের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, দেশের ৭০ ভাগ তরুণ সম্প্রদায়, জাতীয় পার্টি সম্পর্কে তার অগত নয়। তাদের মিথ্যা কথা বলে তাদের মন ভুলানো হয়েছে। একটি কথা বলতে চাই ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ আমার হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমি জোর করে ক্ষমতা গ্রহণ করি নাই।
নিজের ক্ষমতা দখলের কাহিনি বর্ণনা করে এরশাদ বলেন, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার রেডিওতে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আমারা দেশ পরিচালনায় অক্ষম, তাই আমরা সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলাম। সামরিক আইন জারি করে আমি সেনাবাহিনীর প্রধান থাকায় আমার হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়। আমি সেনা প্রধান না থাকলেও অন্য কাউকে এই ক্ষমতা গ্রহণ করতে হত। অর্থাৎ আমরা জোর করে ক্ষমতা গ্রহণ করি নাই, ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
নেতা-কর্মীদেরকে বলেন, তোমাদের মনে সন্দেহ রয়েছে আগামী নির্বাচন আমরা কেমনে করব! আমি সন্দেহ দূর করছি। জাতীয় পার্টির যে শক্তি দেখছি আজ আমি, নির্বাচন একলাই করব। একক ভাবে নির্বাচনে আমরা লাভবান হয়েছি। আমি অষ্টম নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন জোটগত ভাবে করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না। আমরা একক ভাবে নির্বাচন করব, দেশবাসী দেখুক আমরা প্রস্তুত আছি।
ক্ষমতায় আসলে কী কী করবেন সেই প্রতিশ্রুতিও দেন এরশাদ। তিনি বলেন, আমরা কী দেব ক্ষমতায় গেলে। এই সরকার ব্যবস্থা দিয়ে সরকার চলতে পারে না। এই সরকার দিয়ে আমরা উপকৃত হই নাই। জনগণ উপকৃত হয় নাই বরং নিস্পেষিত হয়েছে। তাই জনগণ মুক্তি চায়, আমরা সেই প্রাদেশিক সরকার দিতে চাই।
এরশাদ বলেন, জনগণ নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চায় না, পরিবর্তন চায়। যেভাবেই নির্বাচন করুন, কোনো নির্বাচন প্রশ্নাতীত হয়নাই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করব ইনশাল্লাহ। এখন উপজেলা চেয়ারম্যানের কোন ক্ষমতা নাই। ক্ষমতায় গেলে তিনি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করবেন। বিচার ব্যবস্থাকে জনগনের কাছে নিয়ে যাব। প্রতিটি বিভাগে হাইকোর্ট বেঞ্চ হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেবো, শিল্প কারখানা করব। দেশে হাজারো বেকার যুবক ঘুরে বেড়াচ্ছে সংসারের বোঝা হয়ে, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করব। আমি বলতে পারি, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসলে পৃথিবীর দরজা খুলে যাবে। হাজার লক্ষ লক্ষ শুমিক যাবে, আমাদের সমস্যা দূরীভূত হবে। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। আজ কেন এই হিন্দুরা নিগৃহীত? কেন মন্দির পোড়ানো হচ্ছে, হিন্দুদের জমি কেন দখল করা হচ্ছে? খ্রিষ্টানদের মেরে ফেলা হচ্ছে। আমরা তা হতে দেবো না। তারা সবাই নাগরিক। সবাই একসাথে বাস করব।
Share this content: