এবিএনএ : আপনার কাছে হয়তো বিষয়টি বিস্ময়কর ঠেকতে পারে। কিন্তু আমাদের অনেকেই লোকের নাম, ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার টেলিফোন বইয়ে তালিকাভুক্ত করার সময় মনে রাখেন। আর আমরা যেসব নিয়ে উদ্বিগ্ন হই সেসব হলো, জাঙ্ক মেইল, টেলিমার্কেটিয়ার এবং ভুয়া কল।
সময় বদলে গেছে। ফোনবুক এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। আর আপনার ফোন নাম্বার আপনার প্রাথমিক যোগাযোগ, বিনোদন এবং নিরাপত্তার উপায়ের গেটওয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবার আপনার নাম্বার নিয়ে কোনো সমঝোতা করলে তা আগের চেয়ে অনেক বেশি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠবে।
দূষিত টেক্সট এবং রোবট কল
ইনবক্সে বা সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রায়ই ভুয়া সতর্ক বার্তা আসে, আপনার ফোন নাম্বারটি গণসম্মুখে উম্মুক্ত হয়ে পড়বে। আপনার সেলফোন নাম্বারটি নিবন্ধন করুন। আর একবার নিবন্ধন করলে পাঁচ বছরের জন্য আপনার নাম্বারটি নিরাপদ থাকবে। তবে একটি ভুয়া বার্তায় সঠিক যে জিনিসটি থাকে তা হলো, কল করার নাম্বারটি।
কিন্তু মোবাইল ফোন নাম্বার কখনো গণসম্মুখে উম্মুক্ত হয়ে পড়া বা টেলিমার্কেটিয়ারদের হাতে চলে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আর আপনার ফোন সেলফোনটি নিবন্ধনেরও কোনো ডেডলাইন বা শেষ সীমা নাই। আর আপনাকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর আপনার সেলফোন নাম্বার পুণনবায়ন করারও দরকার নেই।
আপনি যদি আপনার সেলফোনে অযাচিতভাবে কোনো মার্কেটিং কল পান তাহলে কলকারীকে জিজ্ঞেস করুন তারা কীভাবে আপনার ফোন নাম্বার পেল। আর তাকে দৃঢ়ভাবে বলে দিন যেন আপনার সঙ্গে পুনরায় আর যোগাযোগ না করা হয়।
তবে আজকাল অনেক কম্পানি মোবাইলে খুদে বার্তার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন পাঠানোকে বেশি সস্তা, সহজতর এবং বেশি লাভজনক মনে করে।
এছাড়া আপনি প্রচুর সংখ্যক রেকর্ড করা রোবট কলও পেতে পারেন। এই কলগুলো পিক করলেই সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকবে। ডাটাবেজে বিশাল সংখ্যক সেলফোন নাম্বার সংগৃহীত হওয়ার ফলে কম্পানিগুলোর কাছেও সম্ভাব্য খদ্দেরদের একটি বড় তালিকা থাকে।
আর মনে রাখবেন, টেক্সট, রোবোট কল এবং টেলিমার্কেটিয়াররাও ছদ্মবেশধারী জালিয়াত হতে পারেন। সুতরাং এই ধরনের ম্যাসেজের উত্তর দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। আর কখনোই ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত দেবেন না।
আর এর চেয়ে ভালো উপায় হলো, আপনি আপনার ফোনে এমন অ্যাপস ইনস্টল করতে পারেন যা বিরক্তিকর টেলিমার্কেটিয়ারদেরকে আপনার ফোনের সংযোগ লাইন থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।
অ্যাপস চেক করুন
আপনি যখন আপনার ফোনে কোনো অযাচিত সলিসিটেশন পাবেন আপনি হয়তো ভাবতে পারেন: তারা কীকরে আমার নাম্বার পেল? আমিতো শুধু বন্ধুদেরকেই আমার নাম্বার দিয়েছি। আমি সামাজিক গণমাধ্যমেও তা পোস্ট করিনি। আর কল করার জন্যও আমি এখন আর এটা ব্যবহার করি না। কে দিল?
লোকে অনেক সময় না বুঝেই তাদের নাম্বার অন্যকে দেন। আপনি যখন একটি অ্যাপ ইনস্টল করেন, আপনি একটি দীর্ঘমেয়াদি “সেবার শর্ত” ডকুমেন্ট পান। যাতে প্রায়ই একটি প্যারা থাকে আপনার নাম্বারটি তৃতীয় কোনো পক্ষকে দেওয়ার ব্যাপারে, যা সুক্ষ্ম কালিতে ঢাকা থাকে। এই শর্ত মেনে নেওয়ার মাধ্যমে আপনি কম্পানিটিকে আপনার সেলফোন নাম্বার ব্যবহার বা বিক্রির অনুমতি দিয়ে দেন।
উদাহরণত, প্রাইভেসিগ্রেড সবচেয়ে উজ্জ্বল এলইডি ফ্ল্যাশলাইট অ্যাপের প্রতি তাকিয়ে ফোনটির বর্তমান অবস্থার তথ্য, ফোন সিগনাল, ক্যারিয়ার, ডিভাইস আইডি এবং ফোন নাম্বার পেতে পারে। আপনি একটি অ্যাপ ইনস্টল করার আগে এক মুহূর্ত সময় নিয়ে জানুন ঠিক কী তথ্য এটি সংগ্রহ করছে। এবং ডেভেলপাররা কীভাবে এই তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের অভিপ্রায় করে।
সামাজিক গণমাধ্যম এবং ফোন নাম্বার
অনেক লোকেই ফেসবুকে কোনো সতর্কতা ছাড়াই দ্বিতীয়বার না ভেবে অপরাধীদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য সহজলভ্য করেন। ফেসবুকে নিজেদের জন্মদিন এবং বাড়ির ঠিকানা পোস্ট করেন। এবং এমনিক কখন বাড়িতে বা কখন বাইরে থাকেন তাও শেয়ার করেন ফেসবুকে।
সামজিক গণমাধ্যমে ফোন নাম্বার দিলে তা আপনার জন্য বিশৃঙ্খলাজনক হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনার এমন প্রচুর সংখ্যক “বন্ধু” থাকে যাদের আপনি বাস্তব জীবনে চেনেন না। আপনি হয়তো কঠোর প্রাইভেসি সেটিংস স্থাপন করতে পারেন কিন্তু আপনি যদি অপরিচিতদের সাথে বন্ধুত্ব করেন তাহলে আপনার তথ্য-উপাত্ত সহজেই চুরি হয়ে বাজে লোকের হাতে চলে যেতে পারে।
ফোন নাম্বারসমূহ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন
পাসওয়ার্ড? চেক করুন। গোপন নিরাপত্তা প্রশ্ন? চেক করুন। ফোন নাম্বার?
বেশি বেশি নিরাপদ ওয়েবসাইটসমূহ আপনার ফোন নাম্বার ব্যবহার করে আপনার পরিচিতি যাচাই করে। আপনার যদি একটি অ্যামাজন, ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট বা অ্যাপল অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে সেসবের সিকিউরিটি সেটিংসে আপনার সেলফোন নাম্বারটি দিন। তাহলে কেউ অনুমতি ছাড়া আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করলে আপনি আপনার সেলফোনে তাৎক্ষণিকভাবে সতর্কতা বার্তা পাবেন।
এছাড়া কেউ আপনার পাসওয়ার্ড বদলাতে চাইলেও আপনি একটি সতর্কতা বার্তা পাবেন। আর হ্যাকাররা যদি আপনার পাসওয়ার্ড চুরি করে এবং আপনার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে চেষ্টা করে তাহলে দ্বিতীয় আরেকটি কোড চাওয়া হবে। ফলে তারা যদি আপনার ফোন নাম্বারটি চুরি করতে না পারে তাহলে তারা আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না।
একে বলা হয় দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর এটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আপনি যদি এখনো এটি সেট না করে থাকেন তাহলে খারাপ কিছু ঘটার জন্য অপেক্ষা করবেন না।
সূত্র: ফক্স নিউজ