এবিএনএ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন তলব করে ব্যাখা চেয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন বর্তমানে ব্যাপক আলোচিত একটি বিষয়। অনেক প্রার্থীকেই এ নিয়ে কমিশনে জবাবদিহি করতে হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হয় নির্বাচনি প্রচারণা। এ সময়েও প্রার্থী বা নেতাকর্মীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি থাকে সর্বাগ্রে। তাই, সবাইকেই আচরণবিধির প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হয়- কোন কোন কাজে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আচরণবিধি লঙ্ঘন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া নিয়ম –
১. নির্বাচনের কোনো প্রার্থী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে নির্বাচনের পূর্ব সময় ও নির্বাচন চলমান সময়ে নির্বাচনী এলাকায় বসবাসকারীদের কাছ থেকে অথবা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্য বা গোপনে কোনো প্রকার চাঁদা বা অনুদান প্রদান করতে বা প্রদানের অঙ্গিকার ওয়াদা করতে পারবে না।
২. নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো সরকারি বা আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলযুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন বা ভিওিপ্রস্তর স্থাপন কিংবা ফলক উন্মোচন করা যাবে না।
৩. সরকারি ডাকবাংলো, রেস্ট হাউজ, গেস্ট হাউজ ও সরকারি কার্যালয়কে কোনো দল বা পার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে প্রচারের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
৪. নির্বাচনি প্রচারণার ক্ষেত্রে ভোটে অংশগ্রহণকারী যেকোনো দল বা প্রার্থী তাদের পক্ষে অন্যকোনো ব্যক্তিকে বিধি ৬ হইতে বিধি ১৪ এর বিধানাবলী অনুসরণ বাধ্যতামূলকভাবে মানতে হবে।
৫. সরকারি দালান ও দেয়াল, টেলিফোনের খুঁটি, বেড়া বিদ্যুৎ খুঁটি, সরকারি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্থাপনা। মেট্রোরেল, বাস, ট্রাক, গণপরিবহন, পোস্টার টাঙানো ও ঝুলানো যাবে না।
৬. কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার লিফলেট নষ্ট করা যাবে না।
৭. প্রার্থী প্রচারণার জন্য রঙিন পোস্টার ব্যবহার করতে পারবে না।
৮. পোস্টারের আয়তন ৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটারের বেশি হতে পারবে না। ব্যানার ৩ মিটারের বেশি বড় করা যাবে না।
৯. পোস্টার বা ব্যানারে প্রার্থী তার নিজ ছবি ও বরাদ্দকৃত প্রতীক ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার করতে পারবে না। তবে, দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ছাপাতে পারবে।
১০. অতীতের কোনো মিছিলের ছবি, কোনো অনুষ্ঠানের ছবি, প্রার্থনারত অবস্থা বা ভঙ্গিমায় ছবি কোনো অবস্থাতেই প্রচারণায় ব্যবহার করা যাবে না।
১১. প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মুদ্রণের তারিখবিহীন কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না।
১২. কোনো যান্ত্রিক যানবাহনে করে মশাল মিছিল ও শোডাউন করা যাবে না।
১৩. নির্বাচনী কাজে হেলিকপ্টার বা আকাশযান ব্যবহার করা যাবে না। তবে, দলীয় প্রধানের যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা গেলেও আকাশযান থেকে প্রচারণা সামগ্রী বা লিফলেট বিতরণ করা যাবে না।
১৪. ভোটকেন্দ্রের সীমানা প্রাচিরে কোনো প্রকার যান বা মোটরসাইকেল চালানো যাবে না।
১৫. দেয়ালে লিখে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। এছাড়া দালান, ছাদ, সেতু, রোড ডিভাইডার এবং সড়কে কোনো লিখন অংকন করা যাবে না।
১৬. প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- ঘোড়া, হাতি, কুকুর এরকম জীবন্ত প্রাণী নিয়ে মিছিল বা শোডাউন করা যাবে না।
১৭. নির্বাচনী প্রচারণায় গেট বা তোড়ন করা যাবে না। সর্বোচ্চ ৪০০ বর্গফুট জায়গায় প্যান্ডেল করা যাবে, এর অধিক নয়।
১৮. নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সাহায্যে আলোকসজ্জা করা যাবে না।
১৯. কোনো সড়ক বা জনগণের চলাচলের রাস্তায় বিঘ্ন ঘটে এমন নির্বাচনী ক্যাম্প করা যাবে না।
২০. একজন দলীয় প্রার্থী বা স্বতন্ত্র বা সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি ক্যাম্প বা অফিস বানাতে পারবে। আর পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে প্রতি ওয়ার্ডে একটি ক্যাম্প বসাতে পারবে।
২১. প্রচারণার জন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক বক্তব্য লেখা প্রিন্ট কোনো পরিধেয় কাপড় ব্যবহার ও বিতরণ করতে পারবে না। শার্ট জ্যাকেট এ ধরণের কাপড়।
২২. নির্বাচনে ভোটারের জন্য কোমল পানীয়, খাদ্য, উপঢৌকন প্রদান করা যাবে না।
২৩. প্রতিপক্ষকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
২৪. প্রচারণার বক্তব্যে প্রতিপক্ষের চরিত্র হনন করে কথা বলা যাবে না। লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িক, ধর্মানূভূতি বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
২৫. মসজিদ, গির্জা, মন্দির, ধর্মীয় উপসানালয় ব্যবহার করা যাবে না।
২৬. প্রচারণার জন্য কারও জমি, ভবন, স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিতে ক্ষতি সাধন করা যাবে না।
২৭. নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড় কেউ অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন করতে ও ভোটের দিন কেন্দ্র চৌহদ্দির মধ্যে আনতে পারবে না।
২৮. এক প্রার্থীর বিপক্ষে কোনো ভোটারকে বল প্রয়োগ বা অর্থ ব্যয়ে করে নিজের দলীয় করতে পারবে না।
২৯. তফসিল ঘোষণার পর ও ভোট গ্রহণের তিন সপ্তাহের আগে কোনো নির্বাচনি প্রচারণা করা যাবে না।
৩০. প্রচারণার মাইক ও শব্দের মাত্রা বহনকারী যেকোনো যন্ত্রের ব্যবহার সময়সীমা দুপুর ২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। এর আগে বা পরে করা যাবে না।
৩১. সরকারি সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি তার সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণার কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবে না।
৩২. সরকারি সুবিধাভোগী সরকারি প্রচারযন্ত্র মাইক, সাউন্ড বা গাড়ি ব্যবহার করতে পারবে না।
৩৩. নির্বাচনি কোনো প্রার্থী সরকারি কোনো উন্নয়ন কর্তৃত্ব করতে পারবে না। এরকম কোনো উদ্বোধন অনুষ্ঠান বা সভায় যোগ দিতে পারবে না।
৩৪. কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি বা সদস্য থাকলে মনোনিত হওয়ার পর সকল পদ প্রত্যাহার করতে হবে। এমনকি সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো সভা ও কাজে যোগদান করতে পারবে না।
৩৫. ভোটদান কেন্দ্র বা ভোট গণনার সময় এজেন্ট কমিশন অনুমতি ব্যতিত কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না।
৩৬.সরকারি সুবিধাভোগী শুধু নিজ এলাকার ভোটার হলে ভোট দিতে যেতে পারবে, তবে নির্বাচনী প্রচারণার কোনো কাজে যেতে পারবে না।