,
প্রচ্ছদ | জাতীয় | আন্তর্জাতিক | অর্থনীতি | আমেরিকা | লাইফ স্টাইল | ভিডিও নিউজ | ফিচার | আমেরিকা | বিনোদন | রাজনীতি | খেলাধুলা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | শিক্ষা

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

এবিএনএ: ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় হতভম্ব ঢাকা। গতকাল সকালে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে রাজধানীতে। অসংখ্য মানুষ ছুটে যান বেইলি রোডের কঙ্কালসার ভবনটি এক নজর দেখতে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। ৪৬ জনের মধ্যে ৪৩ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তকৃত এসব মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, বেইলি রোডের আগুনে নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ শ্বাসরোধে মারা গেছেন।

আগুনের ঘটনায় শনাক্ত ৪৩ জনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে এসব মৃতদেহ হস্তান্তর করেন ঢাকা জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম। নিহতরা হলেন- ঢাকার হাতিরঝিল থানার মধুবাগের বাসিন্দা ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক কাউসার (৪৮), তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৪০), ওই দম্পতির দুই মেয়ে সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা (১৬) ও সৈয়দা আমেনা আক্তার নুর (১৩) এবং ওই দম্পতির ছেলে সৈয়দ আবদুল্লাহ (৮); কুমিল্লার এম এ এইচ গোলাম মহিউদ্দিনের স্ত্রী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার করিম (৫০) এবং ওই দম্পতির মেয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতি তাজরিন নিকিতা (২৩); পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম শামীমের মেয়ে বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী লামিশা ইসলাম (২০); বরিশাল সদর থানার কাউনিয়ার রিয়াজুল আমিনের ছেলে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন (১৯); ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার দয়াগঞ্জ জেলেপাড়ার শিপন পোদ্দারের স্ত্রী পপি রায় (৩৬) এবং ওই দম্পতির মেয়ে সম্পূর্ণা পোদ্দার (১২) ও ছেলে সংকল্প সান (৮); ঢাকার পুরানা পল্টনের সায়েক আহমেদ আশিকের স্ত্রী নাজিয়া আক্তার (৩১) এবং ওই দম্পতির ছেলে আরহান মোস্তাক আহমেদ (৭) ও আবিয়াত আহমেদ (৩); ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনির কবির খানের বড় মেয়ে মেহেরা কবির দোলা (২৯) এবং ছোট মেয়ে মাইশা কবির মাহি (২১); হবিগঞ্জের উত্তম কুমার রায়ের স্ত্রী রুবি রায় (৪৮) এবং ওই দম্পতির মেয়ে প্রিয়াংকা রায় (১৮); পুরান ঢাকার বংশালের মো. মোসলেমের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম (৩২); ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার আশরাফুল ইসলাম আসিফ (২৫); কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবিপুরের জয়ন্ত কুমার পোদ্দারের স্ত্রী সম্পা সাহা (৪৬); মাদারীপুরের কালকিনি থানার পূর্বচর আলিমবাগের জাকির হোসেনের ছেলে মো. জিহাদ হোসেন (২২); যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম (৬৫); যশোর সদর উপজেলার মধ্যপাড়ার মো. কবির হোসেনের ছেলে মো. কামরুল হাসান রকি (২০); টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মোয়াজ্জেম মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান (২৭); কুমিল্লার লালমাইয়ের হাজী কোরবান আলীর মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া (২২) ও সাদিয়া আফরিন আলিশা (১৩) এবং রিয়া ও আলিশার খালাতো বোন কুমিল্লা সদর থানার হাতিগাড়ার আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে নুসরাত জাহান শিমু (১৯); মুন্সীগঞ্জ সদর থানার বিনোদপুরের মো. আওলাদ হোসেনের মেয়ে জারিন তাসনিম প্রিয়তি (২০); নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে শান্ত হোসেন (২৪); ভোলা সদর থানার উত্তরপাড়ার মাইনুল হকের ছেলে দিদারুল হক (২৩); ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়ার দিনেশ চন্দ্র হাওলাদারের ছেলে তুষার হাওলাদার (২৩); ঢাকার গুলশানের ইসমাইল গাজীর ছেলে জুয়েল গাজী (৩০); চাঁদপুর সদর উপজেলার ইসলামপুরের ওয়ালিউল্লাহ খানের ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী কে এম মিনহাজ উদ্দিন (২৫); পাবনার ফরিদপুর থানার ধানুয়াঘাটার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের সিকিউরিটি গার্ড সাগর (২৪); পিরোজপুর সদরে নুরুল আলমের মেয়ে তানজিলা নওরিন (৩৫); শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কালারচরের ফজর আলীর ছেলে শিপন (২১); বরগুনার মো. নান্টুর ছেলে মো. নাঈম (১৮); কুষ্টিয়ার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী (২৫); কক্সবাজার উখিয়া থানার পূর্ব গোয়ালিয়ার শাহজালাল উদ্দিন (৩৪), তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা জাহান হেলালী (২৪) এবং এই দম্পতির মেয়ে ফাইরুজ কাসেম জামিরা (৩)।

শ্বাসরোধে মৃত্যু বেশি : ঘটনাস্থল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় অধিকাংশ মানুষ শ্বাসরোধের কারণে মারা গেছেন। ভবনটিতে একটিমাত্র সিঁড়ি ছিল। দুটি লিফট ছিল। ফলে আগুন লাগার পর কেউ নামতে পারেনি। কেউ বলছিলেন ওপরে আগুন লেগেছে, কেউ বলেছেন নিচে আগুন লেগেছে। ফলে মানুষ কোন দিকে যাবে তা বুঝতে পারেনি। নিচের একটি ছোট্ট দোকানে প্রথমে আগুন লেগেছিল। সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। পরে বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। যে ঘটনা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এখনো কোনো তদন্ত শুরু করিনি। তথ্য সংগ্রহ করছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দেবে। একটি ভবন তৈরির ক্ষেত্রে রাজউকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এর জন্য একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সরকার দায়িত্ব দিলে আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করব। দায়িত্ব না পেলেও প্রকৃত ঘটনার খোঁজ নিয়ে আমরা ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের সহায়তায় একটি রিপোর্ট তৈরি করব।

স্বজনদের আহাজারি : নাজিয়া আক্তার (৩১) তার দুই শিশু ছেলেসহ খাবার খেতে গিয়েছিলেন বেইলি গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে। তাদের সঙ্গে পরিচিত আরও তিনজন ছিলেন। আগুনে দুই ছেলেসহ নাজিয়ার মৃত্যু হয়। দুই শিশু সন্তানের নাম আরহান আহমেদ (৭) ও আবিয়াত আহমেদ (৩)।

গ্রেফতার ৩ : বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে আগুনের ঘটনায় চুমুক নামে একটি খাবার দোকানের দুই মালিকসহ তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারা হলেন- চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন এবং কাচ্চি ভাই নামে আরেকটি খাবারের দোকানের ব্যবস্থাপক মো. জিসান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ভবনের নিচ তলার খাবার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনের ঘটনায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা করতে পারবেন। ভবনের মালিক থেকে শুরু করে এই ঘটনায় যার দায় পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগুনে এখন পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ জন শিশু রয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এদের ৩৮ জনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুজনের লাশ মর্গের ফ্রিজে রাখা হয়েছে। বাকি ছয়জনের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

জেলা প্রশাসকের অনুদান : ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও মাত্র চারজনের পরিবার সেই অর্থ নিয়েছে। দাফন-কাফনসহ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য নিহত অন্যদের স্বজনদের টাকা নিতে বলা হলেও তারা স্বাবলম্বী জানিয়ে সেই অর্থ নেননি। এ ছাড়া আহত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের মধ্যে ১৩ জনের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

তিন লাশের ডিএনএ পরীক্ষা : রাজধানীর বেইলি রোডে সাত তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৬ জন। এদের মধ্যে ৪১ জনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৪০ জনের মৃতদেহ। আর তিনজনকে চেনার উপায় নেই। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের পিআইও আরিফুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ঢামেক মর্গে রয়েছে ছয়জনের লাশ। তাদের মধ্যে তিনজনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করতে দেওয়া হয়েছে ডিএনএ টেস্ট। বাকি তিনজনের লাশ দাবি করা স্বজনরা ঢাকায় আসছেন। তাদের যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজনের স্বজন কুষ্টিয়া থেকে আসছেন এমনটি জানা গেছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামে ভবনটিতে আগুন লাগে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ছিল বিরানির পরিচিত খাবার দোকান ‘কাচ্চি ভাই’ এর শাখা, তৃতীয় তলায় পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েন, নিচের তলায় স্যামসাং-এর শোরুমসহ আরও বেশকিছু দোকান। স্যামসাংয়ের শোরুমের পাশে রয়েছে একটি কফিশপ। এরকম কফির দোকানসহ ফাস্টফুডের অনেক দোকান ও রেস্তোরাঁ ছিল ভবনটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিভিয়ে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপরই আসতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর খবর।

Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali
Managing Director: Akbar Hossain
Executive Editor: Mehedi Hasan
E-mail : abnanewsusa@gmail.com
Usa Office: 289 West Koach Avenue, Egg harbor City, New Jersey-08215, Bangladesh Office : 60/1. Purana Paltan (2nd Floor), Dhaka-1000, Usa. Phone: +16094649559, Cell:+8801711040113, +8801912-621573
Server mannarged BY PopularServer
Design & Developed BY PopularITLimited