
এবিএনএ : এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নেওয়া শিক্ষক নিবন্ধনের মোট ১২টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় এক লাখ সনদধারী শিক্ষক এখনও নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন। এরই মধ্যে আবার ১৩ তম নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু ও ১৪ তম পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। শূন্য পদের সংকট থাকায় অপেক্ষমাণদের নিয়োগ দিতে বিলম্ব হচ্ছে। কি হবে এসব নিবন্ধধারীদের? তা নিয়ে উৎকন্ঠাও তৈরী হয়েছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, এরইমধ্যে জাল সনদে নিয়োগ নিয়েছেন ৬০ হাজার ভুয়া শিক্ষক। এছাড়া এক থেকে ১২তম ব্যাচের সনদধারীদের করা রিটের বোঝাও চেপে আছে নন গভর্নমেন্ট টিচার্স রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড সার্টিফিকেশন অথরিটি (এনটিআরসি) এর ঘাড়ে। সব মিলিয়ে শিক্ষক নিয়োগে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এক থেকে ১২তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের অনেকের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া নিবন্ধন পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের সবাইকে একে একে নিয়োগ দেওয়ার কথা। সনদধারীর সংখ্যা দেড় লাখ। ইতোমধ্যে নিয়োগ পেয়েছে মাত্র ৬০ হাজার। কিন্তু শূন্য পদের সংকট দেখিয়ে নিয়োগ আটকে রেখেছে এনটিআরসিএ। অন্যদিকে, ৬০ হাজার লোক জাল সনদে চাকরি করছে বলেও তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে জাল সনদধারীদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হলে তাদের জায়গায় প্রকৃত সনদধারীরা চাকরির সুযোগ পেতো বলেও যুক্তি তুলে ধরেন তারা। জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) একটি টিম ২০১৪ সালে সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে সারাদেশের বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষক জাল সনদে শিক্ষকতা করছে বলে তথ্য প্রমাণ পায়। এসব শিক্ষক এমপিওভুক্তও হয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলেও এখনও কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন জাল সনদধারী এসব শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, ১ থেকে ১২ তম নিবন্ধনে যারা পাস করতে পারেনি এমন লোকই টাকার বিনিময়ে জাল সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। আর এই সরবরাহের পেছনে এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধিত নিয়োগবঞ্চিত জাতীয় ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি ওবায়দুল ইসলাম বলেন, যে ৬০ হাজার শিক্ষক ভুয়া সনদে চাকরি করছেন তাদেরকে এখনও চাকরি থেকে বের করা হয়নি। অথচ এই ৬০ হাজার পদ শূন্য হলে আমরা আসল সনদধারীরা সেখানে চাকরির সুযোগ পাবো। তিনি অভিযোগ করেন, যত অনিয়ম-দুর্নীতি সবই এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা করেন। তারা চাইলেই এর সুন্দর সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু তারা এর সমাধান করতে চান না। এর পেছনে বড় ধরনের স্বার্থ রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ নিবন্ধিতদের মেধা তালিকা প্রকাশ ও নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করে দিলেও নিয়োগের বিষয়টি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির হাতে থাকায়, তারা ঘুষসহ নানারকম অনিয়ম করতেন বলে অভিযোগ ছিল। পরে ম্যানেজিং কমিটির হাত থেকে এই ক্ষমতা খর্ব করা হয় ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর। এর পরে নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ, মেধা তালিকা প্রণয়নসহ নিয়োগের সব ধরনের কার্যক্রমের দায়িত্বভার নেয় এনটিআরসিএ। জানা যায়, নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে এনটিআরসিএ’র সনদ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ওই সনদের মেয়াদ মাত্র ৩ বছর। এর সমালোচনা করে নিবন্ধিতরা। এদিকে ১৩ তম পরীক্ষা থেকে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার দায়িত্ব পায় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয় পরিবর্তন। ইতোমধ্যে ১৩ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার লিখিত ও মৌখিক ফল প্রকাশ এবং মেধা তালিকাও প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এখন এসব নিয়োগ সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছে। জানা গেছে, আগামী মাসের মধ্যেই মেধাতালিকা অনুযায়ী নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১৩ তম নিবন্ধন পরীক্ষায় সনদধারীদেরকে এনটিআরসিএ নিজে সরাসরি নির্ধারিত স্কুলে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবেন। বন্ধিত প্রার্থী জুলিয়া বেগম বলেন, টাকা খরচ করে পরীক্ষা দিয়েছি। সনদ পেয়েছি। এখন মেধা তালিকা প্রকাশ করে নিয়োগ দেবে। কিন্তু নিয়োগের জন্য আবার আদেরকে ১৮০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়েছে। প্রতিজনের কাছ থেকে বাড়তি এই ১৮০ টাকা কেন নিচ্ছে এনটিআরসিএ। নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করতে তো আর কোনও খরচ নেই। এদিকে গত ১৪ মে ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৮০ জন পরীক্ষার্থীর মেধাক্রমের ভিত্তিতে কেন নিয়োগ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। অন্যদিকে, গত ২৮ মে উত্তীর্ণদের মেধাতালিকা তৈরি করে প্রকাশের নির্দেশও দেয় হাইকোর্ট। ওই আদেশে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে মেধা তালিকা প্রকাশ করতে বলা হয়। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকাও চায় আদালত। ১ থেকে ১২ তম নিবন্ধিত প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এ এম এম আজহার বলেন, ১ থেকে ১২ তম নিবন্ধিতদের নিয়োগের বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা রয়েছে। আমাদেরকে কোর্টেও নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে। আর এইসব কারণে এই মুহূর্তেই তো নিয়োগ দিতে পারছি না। এছাড়া নিয়োগে তেমন কোনও জটিলতা নেই।
Share this content: