এ বি এন এ : দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার শুরু হলো শারদীয় দুর্গোত্সব। আগামীকাল থেকে সাড়ম্বরের মাত্রাটা বাড়বে। বছরান্তে আশ্বিন-কার্তিকের পঞ্চমী থেকে দশমী তিথির পাঁচটি দিবস ‘জগজ্জননী’ উমা দেবীর পিতৃগৃহ ঘুরে যাওয়া। মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বোলে যেন ধ্বনিত হচ্ছে বাঙালি হিন্দুর হূদয়তন্ত্রীতে বাঁধভাঙ্গা আনন্দের জোয়ার। দেশের হাজারো পূজামণ্ডপ এখন উত্সব মাতোয়ারা।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দল বেঁধে পূজা দেখতে আসছে। উত্সবপ্রিয় বাঙালি মেতে ওঠে পূজার আনন্দে। বিকাল থেকেই পূজামণ্ডপগুলোয় দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বাহারী পোশাকে আর অঙ্গসজ্জায় নিজেদের সাজিয়ে রাঙ্গিয়ে উত্সব-আনন্দে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী। সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঝলমলে আলোকসজ্জায় রঙিন হয়ে ওঠে। আলোকসজ্জায় এবার আনা হয়েছে ভিন্নতা। এ ছাড়া মন্দিরে মন্দিরে শোনা যাচ্ছে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসা ও ঢাকের বাদ্য। গতকাল ছিল মহাষষ্ঠী।
শারদীয় দুর্গোত্সবের আগামীকাল মহাসপ্তমী। এদিন শুরু হচ্ছে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ। মূলত:দুর্গোত্সবের মূল পর্বও শুরু হচ্ছে কাল। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাত্ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠান হবে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে সপ্তমীতে পূর্বাহ ৯-৫৭ মধ্যে নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তাদি কল্পারম্ভ এবং সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্ত। আগামীকাল মহাষ্টমী। পূর্বাহ ৯-৫৮ মধ্যে মহাষ্টমীর কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমী বিহিত পূজা প্রশস্ত। রাত্র ১২-৩৫ গতে সন্ধিপূজা আরম্ভ, ১২-২৪ সন্ধিপূজা সমাপন। প্রতিবছরের মত এবারও ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ মিশনে মহাস্টমিতে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী কুমারী পূজা। পাঁচ দিনের শারদ উত্সব শেষ হবে ১১ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে।
এক সময় ঢাকার দুর্গাপূজা সীমাবদ্ধ ছিল পুরান ঢাকার কোতোয়ালি এলাকায়। বিগত কয়েক বছর ধরে পুরো ঢাকায় পূজা আয়োজন হচ্ছে মহাসমারোহে। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ আশ্রম, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, ধানমন্ডি সর্বজনীন পূজা কমিটি, গুলশান বনানী সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, কলাবাগান সর্বজনীন পূজা উত্সব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ও ব্যক্তিগতভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে উত্সবমুখর পরিবেশে। আলোকসজ্জা আর নানা কারুকার্যে সজ্জিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি মণ্ডপ।