অর্থ বাণিজ্যবাংলাদেশলিড নিউজ

চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৮.২৫ শতাংশ

এবিএনএ: চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের  (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এ তথ্য জানান। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ক্রয়ক্ষমতা সমতার (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি- পিপিপি) দিক থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, ইরাক, কলম্বিয়ার মতো দেশকে পিছনে ফেলে অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশের পথে হাঁটতে হলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন অপরিহার্য। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থসামাজিক দলিল এই পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ, ইচ্ছা ও নির্দেশে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার এই পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং পানি, জলবায়ু, পরিবেশ ও ভূমির টেকসই ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলাসহ ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাংলাদেশের স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে।
সম্প্রতি ভিয়েতনামে হওয়া ভারতীয় মহাসগার সম্মেলনের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এই সফরটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী ২০৩০ সালের পূর্বেই ভারত হবে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি। এই সম্মেলনে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে একটি অর্থনৈতিক জোটের কথা বলা হয়েছে এবং সবগুলো দেশ এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। পাশাপাশি এই সফরে বিশ্বব্যাপী তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধ করতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে একতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ প্রতিহত করতে হবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের সব দেশকে বাণিজ্যযুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে।
ভারতীয় মহাসাগর সম্মেলনের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের বিষয়েও আলোকপাত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরো বেশি ফলপ্রসূ করতে সব প্রকার বাণিজ্যিক বাধা দূর করাসহ বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে আরো বেগবান করতে ভারত-বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা, চার দেশীয় পরিবহন নেটওয়ার্ক, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ, নতুন বিদুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। এছাড়া, রোহিঙ্গ ও আসাম ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার এ বিষয়েগুলো নিয়ে ভারত সরকার আন্তরিক বলে সুষমা স্বরাজ আশ্বস্ত করেছেন।
মুস্তফা কামাল বলেন, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার একটি বড় জনগোষ্ঠী উৎপাদন ও সেবা খাতকে সহায়তা করতে প্রযুক্তি ও পরিচালনা পদে অত্যন্ত বন্ধুসুলভ পরিবেশে কাজ করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগিতামুলক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বাস্তবায়নের দ্রুতগতি আনয়নসহ গত তিন বছর ধরে ঝুলে থাকা উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্রব্য ও সেবা বাণিজ্য আরো বৃদ্ধির জন্য এফটিএ এবং সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগতিা চুক্তি সহজতর করতে শ্রীলঙ্কার সরকার অত্যন্ত যত্মবান হবে বলে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম প্রমুখ।

Share this content:

Related Articles

Back to top button