বাংলাদেশরাজনীতিলিড নিউজ

ঐক্য ফ্রন্টের অনেক ‘খেলা’ বাকি: কাদের

এবিএনএ: ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনেক ‘খেলা’ বাকি আছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনেক ষড়যন্ত্র, নাশকতার আশঙ্কাও করছেন তিনি। শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। গত ১৩ অক্টোবর গঠন করা ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যের কথা জানায়। দাবির মধ্যে আছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইত্যাদি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে কথা শোনা যাচ্ছে তা যদি সঠিক হয়, তাহলে এখানে নাশকতা ও সহিংসতার কথাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।’‘যদি এটাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তাদের অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক খেলা, অনেক নাশকতা, সহিংসতার পরিকল্পনা আছে, এটা নিয়ে যে কথা আছে সেটাকে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ রাখে না।’ ‘আমরা বুঝি এটা সাম্প্রদায়িক একটা জোট। একটা অশুভ শক্তি এখানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এদের উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে ঠেকানো, শেখ হাসিনাকে ঠেকানো। এরা ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে শেখ হাসিনাকে হটাতে চায়। এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।’

আগামী ২৩ অক্টোবর সিলেটে জনসভা করার অনুমতি না পেয়ে পরদিন সেখানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। যদিও এখনও অনুমতি তারা পায়নি। এ বিষয়ে কাদের বলেন, ‘সিলেটে মাজার জিয়ারত করতে তারা যেতে পারে। নির্বাচনের আগে সিলেটের মাজার জিয়ারত করার একটা ট্র্যাডিশন রয়েছে। মাজার জিয়ারতের নামে সেখানে যদি কোনো প্রকার নাশকতা, কোনো প্রকার সহিংসতার পরিকল্পনা নিয়ে তারা সেখানে যায়, তাহলে উদ্ভুত পরিস্থিতি বলে দেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঐ রকম পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করবে।’ ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলেও মনে করেন কাদের। এই জোট গঠনের পর দুই শরিকের বিএনপি ছাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা গত দশ বছরে আন্দোলন করতে পারে নাই, তারা শুরুর আগেই দুই উইকেট পড়ে গেছে। আরও কত উইকেট পড়বে তা সময় বলে দেবে।’

সংলাপের প্রয়োজন নেই

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে ভোটে আসবে কি না, এই প্রশ্নের সুরাহা হয়নি এখনও। দলটি বারবার সরকারকে নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে ওবায়দুল কাদের মনে করেন, নির্বাচনের তফসিলের আর দুই সপ্তাহ বাকি থাকা অবস্থায় সংলাপে বসার কোনো প্রয়োজন নেই। ‘নির্বাচন কমিশন সচিব বলেছেন, নভেম্বরের ফার্স্ট উইকে (প্রথম সপ্তাহে) তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তাহলে এখন আর ১০/১২ দিনের মধ্যে কে কার সঙ্গে সংলাপ করবে? দেশে সংলাপ করার মতো এমন কতনো পরিবেশ নেই, প্রয়োজনীয়তা নেই।’

অপরাধ করেছেন মইনুল

টেলিভিশন টক শোতে নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন শুনে তাকে ‘চরিত্রহীন’ বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতা মইনুল হোসেন অপরাধ করেছেন বলেও মনে করেন কাদের। বলেন, ‘নজিরবিহীন এবং শিষ্টাচার বিরোধী মইনুল হোসেনের আচরণ আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধ। আমরা নারী সাংবাদিকদের দাবির সাথে একাগ্রতা প্রকাশ করছি।’

‘এরশাদ তো তার দল আমাদের দিয়ে দেননি’

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শঙ্কা ও সম্মিলিত জোট থেকে তিনশ আসনে প্রার্থী দেয়ার বিষয়েও কথা বলেন কাদের। আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এরশাদ সাহেব তো পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য রাখতে পারেন। ওনি তো সংসদে বিরোধী দলের আসনে আছেন, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে যে কোনো বক্তব্য উনি দিতেই পারেন। ওনি তো আর ওনার পার্টিকে আওয়ামী লীগে দিয়ে দেননি।’ ‘এরশাদ সাহেব আমাদের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করতে পারে আবার নাও করতে পারেন। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’ বিএনপি ভাঙতে পারে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘ভাঙনের প্রক্রিয়ায় আমাদের অংশ নেওয়ার কিছু নেই। অন্য দল যদি ভাঙে তাহলে তারা নিজেরাই নিজেদের দল ভাঙবে। সেখানে আমাদের তো কোনো হাত নেই।’

গণসংযোগ আবার শুরু করছে আ.লীগ

ওবায়দুল কাদের জানান, চলতি মাসের শুরুর দিকে শুরু করা গণসংযোগ কর্মসূচি আবার শুরু করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কাদের বলেন, ‘ঢাকাসহ সারা দেশের সকল মহানগর, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড পর্যায়ে যে গণসংযোগ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল তা সফল হয়েছে। গণসংযোগকালে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। যা আওয়ামী লীগকে আরও উদ্বুদ্ধ করেছে।’ ‘দূর্গা পূজার আগে গণসংযোগ কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে। সম্পাদক মণ্ডলীর বৈধকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশে এই কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে। যা আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের সকল ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে অব্যাহত থাকবে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুনন্নাহায লাইলী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুনন্নাহার চাপা, তথ্য ও গবেষণ বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ডঃ শাম্মী আহমেদ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Share this content:

Related Articles

Back to top button