আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

ইলেক্ট্রনিক নয়, ব্যালট পেপারে ভোটের সুপারিশ যুক্তরাষ্ট্রে

এবিএনএ: ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রযুক্তি নিরাপদ, সুরক্ষিত ও নির্ভরশীল নয়। এর পরিবর্তে কাগজের ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ অধিকমাত্রায় নিরাপদ। তাই সব রকমের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমিস অব সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিনস। এ প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ প্যানেল যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থায় সততা নিশ্চিত করতে মৌলিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। বলা হয়েছে, এ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রয়েছে মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তির ব্যবহার। তা ছাড়া বিদেশীরা নির্বাচনী যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। ওই সংস্থাটি এ রিপোর্ট প্রকাশ করে ৬ই সেপ্টেম্বর। এতে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব কেন্দ্রীয়, রাজ্যের ও স্থানীয় নির্বাচন ব্যালট পেপারে করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে তাতে কি পরিমাণ খরচ হবে তা ওই প্যানেল উল্লেখ করে নি। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ব্রেনান সেন্টারের হিসাব মতে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পুরনো ভোটিং মেশিন পরিবর্তন করতে গেলে তাতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ হতে পারে। প্যানেলের কো-চেয়ার ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট লি বোলিঙ্গার বৃহস্পতিবার রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছেন, বিদেশীরা ভবিষ্যত নির্বাচনগুলোতে ব্যতিক্রমী হুমকি হতে পারে। এ বিষয়টি আমাদেরকে পরে যাচাই করে দেখতেই হবে। আবার তা গুরুতরভাবে যাচাই করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোকে নিরাপদ রাখতে ভূমিকা রাখতে হবে। ‘সিকিউরিং দ্য ভোট: প্রোটেকটিং আমেরিকান ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক ১৫৬ পৃষ্ঠার রিপোর্টে ভোট গ্রহণে অনিরাপদ যন্ত্রপাতি ও সফটওয়ার ব্যবহার নিয়ে আক্ষেপ করা হয়। বলা হয়, এসব যন্ত্রপাতি ও সফটওয়ার এক দশকেরও আগে ভলনারেবল বা কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী বলে প্রকাশ পেয়েছে।
তারপরও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণ আছে এমন কর্মকর্তারা তা ব্যবহার করেন। নির্বাচনী নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যেসব মত প্রকাশ করেছেন তার প্রতিফলন ঘটেছে এই রিপোর্টের মূল সুপারিশগুলোতে। এসব বিষয়ে অনেক রাজ্য ও কংগ্রেসে রিপাবলিকান নেতারা আপত্তি জানিয়েছে। এ বিষয়ে জুনে প্রস্তাব তুলেছিলেন অরিগন রাজ্যের রন ওয়েডেন এবং ডেমোক্রেট দলের অন্য চারজন সিনেটর।
ওই রিপোর্টের প্যানেল বলেছে, তারা একবারের জন্য ব্যালটে ভোট নেয়ার কথা বলছেন না। তারা বছরে পর বছর ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি জানান। এক্ষেত্রে কংগ্রেস থেকে নিয়মিত অর্থায়ণ করতে হবে। রিপোর্টে যেসব মূল সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ২০২০ সাল নাগাদ সব নির্বাচনে মানুষ পড়তে পারে এমন কাগজের ব্যালটে ভোট গ্রহণ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ভোটার নিশ্চিত হতে পারবেন যে তার ভোটটি যথাযথভাবে রেকর্ড করা হয়েছে।
২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাঁচজন ভোটারের মধ্যে একজন ইলেক্ট্রনিক মেশিনে ভোট দেন। তবে নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কোনো কোনো রাজ্যে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি যারা তৈরি করেছেন তাদের একজন হচ্ছেন ক¤িপউটার বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু অ্যাপেল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এখন দেশের বেশিরভাগ নাগরিক ব্যালটের মাধ্যমেই ভোট দিচ্ছে। তাই যদি কম্পিউটার প্রতারণা করেও থাকে তাহলে আমরা সেটা বুঝতে পারব। তবে আমাদের করার মত আরো অনেক কিছু রয়েছে।
এ বছর নির্বাচনে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের অনুমতি দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু সেখানে উল্লেখ করা হয়নি, ঠিক কিভাবে এ অর্থ ব্যয় করতে হবে কিংবা নির্দিষ্ট কোন খাতে উন্নয়ন করতে হবে। মূলত বহিঃশত্র“ কর্তৃক নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে রাজ্যগুলোকে বলা হয়েছে, ভোটারদের তথ্য হালনাগাদের যে পদ্ধতি তাতে কোনো অনিয়ম চোখে পরলে তা দ্রুততার সঙ্গে ফেডারেল সরকারকে অবহিত করতে হবে। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ৫ লাখ ভোটারের তথ্য রাশিয়ার গোয়েন্দারা হস্তগত করেছিল বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল কাউন্সিল।

Share this content:

Related Articles

Back to top button