এবিএনএ : দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনা।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে একটানা বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের ৫৯ জেলায় এ ভোট হয়। তবে এই নির্বাচনে ভোটাররা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ায় উপিস্থিতির ক্ষেত্রে তেমন সাড়া মেলেনি। কোথাও কোথাও তিন-চার ঘণ্টাতেও একটি ভোট পড়েনি। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলেছে আচরণবিধি লংঘনের চিত্র। কেন্দ্রে মোবাইল নিতে ইসির নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভোটাররা সেটি অবাধে নিয়ে ঘুরেছেন, কথাও বলেছেন। এসব দেখেও ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিরা থেকেছেন নীরব।
এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের একটি কেন্দ্র থেকে নগদ এক লাখ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ এক ইউপি সদস্য ভোটারকে আটক করেছে পুলিশ। আর ভোট শুরুর আগেই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিরাগতদের প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব মিয়াসহ ৪/৫ জন হোসেনপুর ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করলে এ সংঘর্ষ হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। নির্বাচন কমিশন ৬১ জেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা করলেও ভোলা ও ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ওই দুই জেলায় ভোট গ্রহণ হয়নি।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় আরও ১৯ জন চেয়ারম্যান, ১৬৬ জন সাধারণ সদস্য ও ৬৯ জন সংরক্ষিত সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে আজ ৩৯ জেলার চেয়ারম্যান এবং ৫৯ জেলায় সদস্য পদে ভোট হয়। ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৪৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৬১ জেলায় মোট ভোটার ৬৩ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন এবং নারী ভোটার ১৪ হাজার ৮০০ জন।
নির্বাচনে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে ভোট কেন্দ্রে মোবাইলসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারভুক্ত প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এ নির্বাচনের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ফলে প্রার্থীরাও এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এ নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত অংশ নেয়নি। তবে এ তিন দলের ভোটাররাই জয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদে অনির্বাচিত প্রশাসকদের শাসন ক্ষমতার অবসান হতে যাচ্ছে। জেলা পরিষদের নেতৃত্ব যাচ্ছে নির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে।
২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এবার প্রতিটি জেলা পরিষদ পরিচালনায় একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য জনপ্রতিনিধি হতে যাচ্ছেন।