এবিএনএ : সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া কাম্য হলেও তা হচ্ছে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগে তিন লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
আর্থিক লেনদেন হলে ভালো একাডেমিক ফলাফল, রাজনৈতিক মতাদর্শ, আঞ্চলিকতা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পায় না। আবার কোনো কোনো নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের সাথে যখন একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী, আত্মীয় বা একই এলাকার প্রার্থী হয় তখন তার নিয়োগ সহজ হয়ে থাকে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। রবিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগ: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। টিআইবি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভাষক নিয়োগে বিধিবহির্ভূতভাবে আর্থিক লেনদেনের সাথে উপাচার্য, শিক্ষকনেতা, রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশেষজ্ঞ, ছাত্রনেতা, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে।
এসব ব্যক্তি সাধারণত ঘুষের অর্থ সরাসরি গ্রহণ করেন না। রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিয়োগ কমিটির সদস্যদের একাংশের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়, ছাত্রনেতা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ইত্যাদির মাধ্যমে নগদে বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে। এই বিধিবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন মূলত মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হয়। তবে এক্ষেত্রে সাধারণত যার যার সুবিধামতো ব্যক্তি ও পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে।
প্রতিবেদনে প্রভাষক নিয়োগের যে সব ধাপে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে তা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিতে সনদ, নথিপত্র, ব্যাংক ড্রাফট ও প্রকাশনার সরিয়ে প্রার্থীদের অযোগ্যতার করার মতো ঘটনাও ঘটে। অন্যদিকে আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী বা পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।
১৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক নিয়োগ নিয়ে নিয়ে টিআইবি গবেষণা করে। এর মধ্যে ৮ টি সাধারণ, দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ২টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ও ১টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় । তবে সাংবাদিকদের কাছে নির্দিষ্ট কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ করেনি টিআইবি।
টিআইবি জানায়, ১৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়। নোট ও ডিসেন্টকে গুরুত্ব না দিয়েই সিন্ডিকেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।
গবেষণায় বলা হয়, প্রভাষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষমতা সিন্ডিকেটের হাতে। আর সিন্ডিকেটে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সমর্থনকারী সদস্য বা মনোনীত সদস্য সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে সুযোগ দানের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, যোগ্যতা শিথিল করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সিজিপিএ হ্রাস-বৃদ্ধি করা, কোনো কারণ প্রদর্শন ব্যতিরেকে যেকোনো আবেদনপত্র গ্রহণ বা বাতিলের ক্ষমতা সংরক্ষণ, কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রদান করতে কিংবা নিয়োগ পরীক্ষার জন্য কার্ড ইস্যু করতে বাধ্য না থাকা, পদসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষমতা সংরক্ষণ, ইত্যাদি বিষয় কার্যত নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিশেষের পক্ষে প্রভাবিত করে।