আমেরিকা

সম্মেলনের আগে ডেমোক্রেটিক দলে অস্থিরতা

এ বি এন এ : যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের প্রাক্কালে নাটকীয় সব ঘটনা ঘটেছে। দলের মধ্যে বিরাজ করছে অস্থিরতা।

ফিলাডেলফিয়া নগরে আজ সোমবার শুরু হচ্ছে এই সম্মেলন। এ থেকে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা।

সম্মেলনের এক দিন আগে গতকাল রোববার দুপুরে দলের জাতীয় কমিটির প্রধান ডেবি ওয়াজারম্যান স্কালজ পদত্যাগ করেছেন।

হিলারিবিরোধী দলের সমর্থকেরা বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ফিলাডেলফিয়ায়।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তেজনা-উৎকণ্ঠার মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের অনৈক্য আরও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।

রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠেকানোর জন্য ঐক্যের বদলে বিভেদ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের।

বেশ কিছুদিন ধরেই স্কালজের ওপর দলের অভ্যন্তর থেকে রাজনৈতিক চাপ ছিল। এর মধ্যে তাঁর পদত্যাগের কথা সংবাদমাধ্যমে আসে।

দলীয় বাছাইপর্বের সময় ডেমোক্রেটিক পার্টির ই-মেইল ফাঁস হয়ে যায়। ওই ই-মেইলে দলীয় অভ্যন্তরীণ স্পর্শকাতর বিষয় ছিল। এমনকি কোনো এক ই-মেইলে বাছাইপর্বে দলের অন্য প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্সকে রাজনৈতিকভাবে অসুবিধায় ফেলারও বার্তা ছিল।

স্যান্ডার্সের ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে বাছাইপর্বে হিলারিকে সুবিধা দেওয়া এবং দলের তহবিল জোগানদাতাদের সঙ্গে স্পর্শকাতর আলোচনার তথ্য ছিল ওই ই-মেইলে।

দলের জাতীয় কমিটি থেকে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার হ্যাকাররা এসব তথ্য চুরির জন্য দায়ী। নির্বাচনে ট্রাম্পকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য এটি একটি রাশিয়ান ষড়যন্ত্র।

বিষয়টি নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলেও স্কালজের ওপর ভেতরে-ভেতরে ফুঁসে ওঠেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

স্যান্ডার্সের সমর্থকেরা আগে থেকেই দলে চেপে বসা প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্বের সমালোচনা করে আসছিলেন।

পুরো বাছাইপর্বে স্যান্ডার্সের পক্ষে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, তার পেছনের কর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ না করতে পারলে হিলারি জাতীয় নির্বাচনে পার পাবেন বলে দলের সমর্থকরাই মনে করেন না।

স্কালজ এখনই পদত্যাগ করতে রাজি হননি। গত সপ্তাহজুড়ে নানা নাটকীয়তা এবং রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে কথা বলতে হয়েছে। প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে হিলারির নাম ঘোষণার ঐতিহাসিক সম্মেলনের আগেই স্কালজকে সরে যেতে হলো।

সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে স্কালজ বলেন, পদত্যাগ করলেও ট্রাম্পকে পরাজিত করা এবং দলের প্রার্থী হিলারিকে নির্বাচিত করার জন্য প্রচার-প্রচারণায় নিয়োজিত থাকবেন তিনি।

হিলারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্কালজ শুধু ফ্লোরিডায় নয়, ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন।

ওবামা এক বিবৃতিতে স্কালজের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেছেন, দলের তহবিল সংগ্রহ থেকে শুরু করে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, ভবিষ্যতেও রাখবেন।

স্কালজের পদত্যাগের পরও থেমে নেই ডেমোক্রেটিক পার্টির দ্রোহী ও ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা। তাঁরা গতকাল ফিলাডেলফিয়া নগরীতে বিশাল মহড়া দিয়েছেন। এসব প্রতিবাদকারী স্যান্ডার্সের সমর্থক।

স্যান্ডার্স তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে স্কালজের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমেরিকার ইতিহাসে জঘন্যতম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য তিনি হিলারির পক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকবেন।

সম্মেলনের প্রথম দিন স্যান্ডার্সের বক্তব্য দেওয়ার কথা। তবে তাঁর ঐক্যের আহ্বান নিজের সমর্থকদের কাছে তেমন সাড়া পাচ্ছে বলে মনে হয় না।

ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের আগের দিনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে প্রতিবাদকারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নয়, বরং স্লোগান দিচ্ছিলেন হিলারির বিপক্ষে।

গত সপ্তাহে ক্লিভল্যান্ডে রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে ট্রাম্পবিরোধী যে বিক্ষোভ হয়, তার চেয়ে ফিলাডেলফিয়ার বিক্ষোভ ছিল বড়।

বিক্ষোভকারীরা হিলারিকে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির প্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে সংযোগহীন প্রার্থী বলে স্লোগান দেন।

অনেকেই বলেন, হিলারির বিরোধিতা করতে গিয়ে ট্রাম্প নির্বাচিত হচ্ছেন কি না, তা নিয়ে তাঁদের মাথা ব্যথা নেই।

কেউ কেউ বলেছেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনে তাঁরা প্রতিবাদ হিসেবে গ্রিন পার্টির প্রার্থীকে ভোট দেবেন।

পাসু টিভোরেট নামের একজন প্রতিবাদকারী বলেন, হিলারি ও ট্রাম্প দুজনই সমান অপছন্দের। হিলারিকে নির্বাচিত করলে সব প্রগতিশীল ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি নিজের কর্মসূচিই বাস্তবায়ন করবেন বলে মনে করেন এই প্রতিবাদকারী।

সম্মেলনে স্যার্ন্ডার্স কী বক্তব্য দেন, এদিকে চেয়ে আছেন বহু ক্ষুব্ধ সমর্থক।

স্কালজের পদত্যাগ, হিলারিবিরোধী বিক্ষোভ—সব মিলিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

এসব সামাল দিয়ে হিলারি দলকে কতটা ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন এবং ট্রাম্পকে কতটা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন, এ নিয়ে চলছে নানা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ।

Share this content:

Back to top button