এবিএনএ : মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারী বাসভবন হোয়াইট হাউজে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন মিডিয়ার সাংবাদিকদের ঢুকতে না দেয়ার নিন্দা এবং প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমেছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। গত শনিবার ম্যানহাটানে নিউইয়র্ক টাইমস অফিসের সামনে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে কংগ্রেসওম্যান ক্যারলিন ম্যালনী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক অধিকার আইনজীবী নরম্যান সাইগেলও বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, সিএনএন, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, হাফিংটন পোস্ট, লসএঞ্জেলেস টাইমস, পলিটিকো, নিউইয়র্কের ডেইলি নিউজ মতো জনপ্রিয় মিডিয়ার প্রতিনিধিদের হোয়াইট হাউজের প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি গত শুক্রবার। বেছে বেছে কয়েকজন সাংবাদিককে ঢুকানো হয়, তবে ক্যামেরাম্যান ছাড়া। ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের শক্রু হচ্ছে মিডিয়া’, ‘মিডিয়া ভুয়া সংবাদে জনমনে অসন্তোষ তৈরির চেষ্টা করছে’ ইত্যাদি অপবাদের পর হোয়াইট হাউজে ঢুকতে বাধা দেয়া হলো তার প্রশাসনের অথবা প্রেসিডেন্টের কোন কোন ক্রুটিপূর্ণ পদক্ষেপের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের জন্য। এর আগেও কোন কোন প্রেসিডেন্টের রোষানলে পড়েছে মার্কিন মিডিয়াগুলো। তবে এতটা নগ্ন ও বেপরোয়া হবার ঘটনা ঘটেনি।
টাইমস ভবনের সামনের বিক্ষোভে কংগ্রেসওম্যান ম্যালনী বলেন, ‘আজ আমরা এখানে এসেছি সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের এমন গণ-বিরোধী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থি আচরণের বিরুদ্ধে সকল কংগ্রেসম্যানের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। সর্বসাধারণকেও এরকম আচরণের নিন্দা জানাতে সোচ্চার হতে হবে। ’ ম্যালনী বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি এভাবে অপদস্থ করার’ এবং এর ফলে আমাদের প্রথম সংশোধনী লংঘনের মত গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি করছে। ’
এ বিক্ষোভে অংশ নেয়াদের হাতে প্লেকার্ড ছিল, ‘ভয় পাবেন না-বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখুন’।
ইতিপূর্বে ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে মিডিয়ার অনেক বিরোধ দেখেছি, মামলাও হয়েছে, কিন্তু বর্তমানের মত পরিস্থিতির উদ্ভব কখনোই হয়নি বলে মন্তব্য করেন সিভিল রাইটস এটর্নী নরম্যান সাইগেল। তিনি বলেন, ‘আমার সারাজীবনে এমন অদ্ভুত আচরণ দেখিনি বলেই এ বিক্ষোভে সামিল হয়েছি। ’ যুক্তরাষ্ট্র সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে অনেকের পক্ষে আদালতে সোচ্চার থাকা এটর্নী সাইগেল উল্লেখ করেন, ‘আমি দেশবাসীর প্রতি আকুল আবেদন রাখছি যে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মর্যাদা ও নীতিমালা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। নিরবতা পালন করাও উচিত নয়। ’
ট্রাম্প প্রশাসনের খবরাখবর প্রকাশ ও প্রচার অব্যাহত রাখতে মিডিয়াগুলোর স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে প্রয়োজনে মিডিয়াগুলো আদালতের শরনাপন্ন হতে পারে বলেও পরামর্শ দেন এই এটর্নী। কারণ, ট্রাম্প নিজে বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তিনি তার সমালোচনাকারি মিডিয়ার সাথে কখনোই আপস করবেন না। গত বৃহস্পতিবার কঞ্জারভেটিভ পলিটিক্যাল এ্যাকশন কনফারেন্সে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি সকলকে জানাতে চাই যে, আমি ভুয়া নিউজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছি। কয়েকদিন আগে বলেছি যে, ভুয়া সংবাদ পরিবেশন ও উপস্থাপনকারিরা হচ্ছে জনগণের শক্রু এবং তারা সত্যিকার অর্থেই জনগণের শক্রু। কারণ, তাদের ঐসব সংবাদের কোন সোর্স নেই, তারা প্রকাশ/প্রচার করেই ক্ষান্ত। ’
এদিকে, শনিবার এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন যে, এপ্রিলে হোয়াইট হাউজে সংবাদদাতাদের যে ডিনার হবে, সেখানে তিনি থাকবেন না। অথচ গত ৩০ বছরের প্রথা অনুযায়ী প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই সস্ত্রীক অংশগ্রহণ করেছেন এই ডিনারে।