এ বি এন এ : শীতকালে গোড়ালি ফাটার সমস্যা বেশি দেখা গেলেও অনেকের ক্ষেত্রে সারা বছরই এই সমস্যা থাকে। এজন্য সারা বছরই তাদের গোড়ালির যত্নের প্রয়োজন পড়ে। অামরা হাত কিংবা মুখের যত্নে দিকে যতটা খেয়াল করি পা কিংবা গোড়ালির ততটাই উপক্ষিত থাকে। কিন্তু গোড়ালি ফাটার সমস্যা দেখা দিলে সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হয় তেমনি কিছু শারীরিক সমস্যাও দেখা দেয়। চলুন জেনে নেই গোড়ালি ফাটার কারণ, সমস্যা ও এর প্রতিকার।
গোড়ালি ফাটার কারণঃ
গোড়ালির চারপাশের ত্বক শুষ্ক ও মোটা হলে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে, শরীরের ওজন বেশি হলে, বয়স বাড়ার কারণে ত্বকের পরিবর্তনে। দীর্ঘক্ষণ ভেজা পরিবেশে থাকলে বা স্যাঁতস্যাঁতে বাথরুমেথা থাকলে, জুতোর সাইজ ঠিক না হলে, কিছু রোগের কারণে (সোরিয়াসিস, অ্যাথলেট’স ফুট, একজিমা, থাইরয়েড ডিজিজ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি), ভিটামিন, মিনারেলস এবং জিঙ্কয়ের অভাব হলে ও শুষ্ক জলবায়ুর কারণে গোড়ালি ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে: পায়ের গোড়ালি লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, ফাটা দাগ পড়ে যাওয়া, চামড়া উঠে আসা ও রক্ত বা অন্য কোনও ডিসচার্জ হওয়া।
চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ
একবার যদি গোড়ালি ফেটে যায়, তার নিয়মিত চিকিৎসা করতে হবে। প্রথমেই পা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, নতুবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হবে। পা ফেটে গেলে বেশি ঘষা যাবে না, এতে রক্তপাত হতে পারে। উষ্ণ গরম পানিতে লেবু এবং শ্যাম্পু দিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন ২০ মিনিট, তারপর আলতো করে নরম কোন ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অয়েন্টমেন্ট বা ক্রিম ব্যবহার করুন। ঘরোয়াভাবে ভ্যাসলিন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন একটু পরপরই। আর পা ফাটা কমে এলে নিয়মিত যত্ন নিন যাতে ভবিষ্যতে আর না ফাটে।
ঘরোয়া পরিচর্যাঃ
গোড়ালি ফাটা প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো উপায় প্রতিকারের চেয়ে। সমস্যা হওয়ার পর সচেতন হওয়ার চেয়ে আগে সচেতন হওয়াই ভালো। এজন্য এক চামচ ভ্যাসলিন এর সাথে কয়েক ফোটা লেবু মিশিয়ে ফাটা অংশে লাগিয়ে রাতভর মোজা পরে থাকলে, কয়েকদিনেই আকর্ষণীয় ফল পাওয়া যায়।
বাজারে একটু খোঁজ নিলেই এভোক্যাডো পাবেন, এর সাথে নারিকেল এবং কলা মিক্স করে ঘন পেস্ট তৈরি করে পায়ে লাগান। এই মিশ্রণ অনেক তেলসমৃদ্ধ। পা ফাটা ঠেকাতে এর কোন জুড়ি নেই।
লেবুর রস পায়ে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। লেবু আপনার গোড়ালির মৃত কোষগুলো তুলে ফেলে এবং পা ফাটা প্রতিরোধ করে। এরপর ব্রাশ দিয়ে হালকা করে ঘষে মৃত কোষগুলো তুলে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য নিয়মিত ১ সপ্তাহ ব্যবহার করতে হবে।
পরিষ্কার এবং ময়েশ্চারাইজ করা পা, ফাটার বিরুদ্ধে হাতিয়ার। পরিষ্কার করার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল একটি পরিষ্কার বালতিতে সহনীয় মাত্রার গরম পানি নিয়ে তাতে বেবি সাবান অথবা শ্যাম্পু মিশিয়ে নিন। এতে একটু লেবুর রস এবং লবণ মিক্স করে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পর গোড়ালির মৃত কোষগুলো নরম হয়ে এলে ব্রাশ অথবা পিউমিস স্টোন দিয়ে ঘষে তুলতে হবে। এরপর শুকনো কাপড় দিয়ে পানি মুছে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
নিয়মিত পায়ে গোলাপজল এবং গ্লিসারিন এর মিশ্রণ লাগালে এর হিলিং ইফেক্ট পাওয়া যায়।
কিছু টিপস:
* আপনার পা সবসময় ধুলোবালিমুক্ত এবং পরিষ্কার রাখুন।
* নিয়মিত হাঁটাচলা করে পায়ের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখুন।
* পরপর গরম এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পা ওয়াশ করুন।
* নিয়মিত পায়ের গোড়ালির মৃত কোষগুলো তুলে ফেলুন আর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
* খালি পায়ে হাঁটবেন না।
* ভেজা, পানিযুক্ত জায়গায় বেশিক্ষণ থাকবেন না। থাকতে হলে পায়ের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে থাকতে হবেভ
* প্রতিদিন গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
* সপ্তাহে একদিন গরম পানি দিয়ে পেডিকিউর করুন।