জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

রিজেন্সিতে চোরাচালানের ক্ষতিকর সিসা, অবৈধ মদের আসর

এ বি এন এ :  ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ প্রবাদটি বহুল প্রচলিত বাংলায়। এই কেঁচো খোঁড়ার মতোই একটি গাড়ির সন্ধানে গিয়ে ক্ষতিকর সীমা আর অবৈধ মদের মতো ‘সাপ’ এর সন্ধান পেয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। আর ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীতে ব্যবসা জাঁকিয়ে বসা হেটেল ঢাকা রিজেন্সিতে।

শুল্কমুক্ত (কার্নেট) সুবিধায় আমদানি করা সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি খুঁজতে সম্প্রতি হোটেল রিজেন্সিতে যান শুল্ক গোয়েন্দারা। কিন্তু হোটেলটির পরিচালক আরিফ মোতাহারের ব্যবহার করা ওই গাড়ি উদ্ধারের আগেই উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ। পাওয়া যায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সিসা। তাও আবার এক দু’কেজি নয়, ২২ কেজি!

অনুসন্ধানে জানা যায়, হোটেল ঢাকা রিজেন্সিতে প্রতিমাসেই কোটি কোটি টাকার মদ-সিসা আসে শুল্ক ছাড়া অবৈধ পথে। বছরের পর বছর ধরে শত শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিসা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মধ্যপাচ্যের দেশগুলোতে শেখ’রা সিসা ব্যবহার করে। হোটেল ঢাকা রিজেন্সিতেও এই সিসা বার রয়েছে।

গোয়েন্দা অভিযানে প্রায় ২২ কেজি সিসা পাওয়া গেলেও তার কোন আমদানি দলিল দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাগেজ’র মাধ্যমে অবৈধভাবে এসব সিসা এসেছে।

সূত্র আরো জানায়, সিসা টোব্যাকো পণ্য। এতে শুল্ক প্রায় ৫শ’ শতাংশ। এর পুরোটাই ফাঁকি দেয় হোটেল রিজেন্সি।

দুই দফা অভিযানে সিসা ছাড়াও ৩১৫ বোতল (৩০৪ লিটার) বিদেশি মদ ও ১ হাজার ১২ ক্যান (৩৩৮ লিটার) বিয়ারসহ মোট ৬৪২ লিটার মদ জব্দ করা হয় হোটেল রিজেন্সি থেকে।

শুল্কসহ কোটি টাকা মূল্যমানে এসব মদেরও কোন আমদানি দলিল দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কার্যত, এই মদ এ হোটেলে আসছে চোরাচালানের মাধ্যমে।

রিজেন্সির রেজিস্ট্রার অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ২৭ টন মদ বিক্রি করেছে হোটেল ঢাকা রিজেন্সি। প্রতিমাসে গড়ে আধা টনেরও বেশি মদ বিক্রি হয়।

এছাড়া ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত হ্যানিকিন বিয়ার ৭ হাজার ২১৮ লিটার বিক্রি হলেও বৈধ পথে কোন বিয়ার আমদানির তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মদ আমদানিতে ৬০১.৯৯ শতাংশ, বিয়ার আমদানিতে ৪৪৭.১০ শতাংশ ও টোব্যাকো পণ্য আমদানিতে ৫শ’ শতাংশের বেশি শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।

সূত্র জানায়, রিজেন্সিতে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ২০১২ সালে কার্নেট সুবিধায় আনা একটি বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়ির সন্ধান পায় শুল্ক গোয়েন্দারা।

সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগিয়ে গাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন রিজেন্সির পরিচালক আরিফ মোতাহার।

গত ৩০ এপ্রিল রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালের পার্কিং এলাকা থেকে গাড়িটি আটক করা হয়। আটকের সময় রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাল্টে স্টিকার সরিয়ে ফেলা হয়।

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ মদ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সিসা বার রাখা, আমদানি এবং কার্নেট সুবিধার গাড়ি ব্যবহারের অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হচ্ছে।

কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জব্দকৃত পণ্য দি কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর সেকশন ২(এস) অনুযায়ী ‘চোরাচালান’ হিসেবে দেখিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, সিসা তামাক হলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিষিদ্ধ নয়।

সিসা শুল্ক দিয়ে আমদানি করা হয়নি বলে জব্দ করা হয়েছে। শুধু রিজেন্সি নয়, ঢাকা শহরে বহু হোটেলে এ সিসা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, যেহেতু মদ আমদানি না করে চোরাচালানে এসেছে, তাই আমরা তা খতিয়ে দেখছি।

Share this content:

Related Articles

Back to top button