এবিএনএ: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে, কিন্তু শিক্ষায় কোনো কমিশন করেনি। এটা আগে প্রয়োজন ছিল।” মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মদিন ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত গ্রন্থ আড্ডায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা পড়ালেখা, উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “একদম শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষাব্যবস্থা একদম শেষ। সেটার মধ্যে কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত—সব জায়গায় দেখবেন যে, এত নিচে চলে গেছে তার মান, এটা বলে বোঝানো যাবে না। কুড়িগ্রামের চরের মধ্যে যে প্রাইমারি স্কুলটা বা হাই স্কুলে কী শিক্ষা পাচ্ছে, সেটার খবর আমরা অনেকেই রাখি না। শিক্ষক নেই, সেখানেও অনার্স খুলে বসে আছে। দিনাজপুর গভর্নমেন্ট কলেজে কিছুদিন আগে আমার যাবার সুযোগ হয়েছিল, সেখানে অ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট মাত্র এক জন শিক্ষক দিয়ে চলছে। অথচ সেখানে অনার্স আছে, মাস্টার্স আছে। এখন আপনারা বলেন, সে কলেজগুলো কী দরকার আছে? সেখানে এই যে শুধু আর্টস আর কমার্স আছে, সায়েন্স তো নেই। এই যে শুধু বিএ পড়াচ্ছেন, তাদের দিয়ে করবেন কী? তাদের সমাজে দরকার কী? কোনো প্রয়োজন নেই।”
তিনি বলেন, “একটা কথা মনে রাখতে হবে সব সময়— হঠকারিতা করা যাবে না। অতিবিপ্লবী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সমাজে আরো অস্থিরতা, চরম অবস্থা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য হবে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করাটা ঠিক হবে না, এ কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মধ্যে ধৈর্য ব্যাপারটা ছিল। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তা-ভাবনাগুলোকে তিনি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন, প্রথমেই তিনি যুদ্ধ শুরু করে দেননি। প্রথমে শুনেছেন, সমস্ত বিজ্ঞ বিজ্ঞ মানুষদের নিয়ে বসেছেন।”
প্রবীণ এ রাজনীতিক বলেন, “কখনো ধৈর্য হারাবেন না, আশা হারাবেন না। কেন জানি না, আমাদের প্রত্যাশা অনেক, কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম। এই তো মাত্র কয়েকটা মাস হয়েছে। এর মধ্যেই আমরা পাগল হয়ে গেছি সব। আমাদের সরকার অনেক ভুল-ত্রুটি করছে। ভুল তো করবেই, তারা তো আর সরকারে ছিল না, রাজনীতি করেনি। রাজনীতি বিষয়টা তারা জানে না, করেনি, ঠিক না? তাদেরকে তো সে সময়টা দিতে হবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেউ কথা বলার সুযোগ পায়নি, সাহস পায়নি, উল্লেখ করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।”
সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “এটাতে লাভটা কার? এটাতে এই দেশের, এই সমাজের, এই মানুষের কোনো লাভ হবে না। ধৈর্য ধরে সামনের দিকে যাই। অনেক ত্রুটি আছে। ত্রুটি তো তারা নিয়ে এসেছে, একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত জঞ্জাল। আমার চিন্তায়ও ছিল না, এটা এত খারাপ হয়ে যাবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই পরিবর্তনের পরে যখন আমরা দুই-একটা জায়গায় খোঁজ-খবর নিই, অফিস-আদালতে খোঁজ নিই— ভয়াবহ কাণ্ড, ভয়াবহ দুর্নীতি, চুরি, ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই সরকারি আমলাদের মধ্যে। আমি বলতে বাধ্য হলাম।”
তিনি বলেন, “এটার পরিবর্তন তো এক দিনে হবে না, এত দ্রুত হবে না। ধৈর্য ধরেন, স্ট্রাকচার আমরা খাড়া করি। একটা গণতান্ত্রিক স্ট্রাকচার খাড়া হোক। সেই স্ট্রাকচার খাড়া হলে নিশ্চয় আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “একটা কথা আমি আবারো বলি, আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না। আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন? বিশেষ করে ছাত্ররা তো বলেনই। নির্বাচন বলার কারণ হচ্ছে একটাই—আমি বিশ্বাস করি, আমি জানি না, আমার বিশ্বাসটা ভুল কি না; যেকোনো নির্বাচিত সরকার কিন্তু একটা অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো। আমার এক্সেস থাকে, আমি যেতে পারি, কথা বলতে পারি।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “জিয়াউর রহমানের কৃতিত্বটা ছিল কোন জায়গায়? তার কৃতিত্বটা ছিল ওই জায়গায় যে, তিনি একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, একেবারে বধ্য একটা শাসন ব্যবস্থা, একটা বধ্য অর্থনীতি থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলেন। ওই জায়গাটা ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সংস্কার। একদলীয় রাজনীতি থেকে বহুদলীয় রাজনীতি, একটা ভ্রান্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে মিক্সড, মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে নিয়ে এসেছিলেন।”
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে আড্ডা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. জহির দিপ্তী। গ্রন্থ আড্ডায় আরও যোগ দেন অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুরে এলাহী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ।