এবিএনএ: তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশে বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অসৎ উদ্দেশ্যেই বিএনপির নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঁকি দিয়ে গুহার অন্তরালে থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। মানুষ, এম্বুলেন্সের ওপর হামলা করা, গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানো, ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা করাই তাদের কর্মসূচি। আমি জনগণ, গাড়িচালক ভাই এবং আমাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানাই হরতাল-অবরোধের নামে কেউ যদি আক্রমণ করতে আসে আক্রমণকারীদের প্রতিহত করবেন, শায়েস্তা করবেন, ধরতে পারলে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।’
সোমবার দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘বিএনপির অবরোধ-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশে’ তিনি এ আহবান জানান। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘গাড়িচালক ভাইদের অনুরোধ জানাবো, যারা আপনাদের গাড়িতে হামলা চালাচ্ছে তারা দুস্কৃতিকারী। পত্রপত্রিকা লেখে তারা দুস্কৃতিকারী, টেলিভিশনেও বলে দুস্কৃতিকারী। সুতরাং এই দুস্কৃতিকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনে গাড়িতে লাঠি এবং রড রাখবেন। যদি কাউকে ধরতে পারেন শায়েস্তা করে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।’
হাছান বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের বলবো, এই আগুনসন্ত্রাসীদের পেলে, হাতেনাতে ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাই না। কিন্তু আইনে বলা আছে, কেউ আক্রান্ত হলে ঐ তিনি আক্রমণকারীকে প্রতিরোধ করতে পারেন। এটা আইনেই বলা আছে, ধর্মেও আছে। সুতরাং কেউ যদি আক্রমণ করতে আসে আক্রমণকারীকে শায়েস্তা করবেন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘অবরোধের নামে যারা এইভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে এবং গুহার মধ্যে ঢুকছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের নেতাকর্মীদের বলবো পাড়ায়-মহল্লায় বিএনপি-জামাতের যে আগুনসন্ত্রাসীরা গর্তের মধ্যে ঢুকেছে তাদের গর্ত থেকে খুঁজে বের করুন, পুলিশে দেন, এদেরকে নির্মূল করতে হবে।’
‘অনেকেই দাবি করছে বিএনপি যেভাবে মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করছে, যেভাবে প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিদের বাসভবনে, হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে, অনেক মহল থেকে তাদেরকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে চাই না, আমরা চাই, তারা এই পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি চর্চা করুক। আন্দোলনও করুক আমাদের কোনো আপত্তি নাই। তাদের আন্দোলন করার জন্যই সমস্ত সহযোগিতা করা হয়েছিলো কিন্তু তারা সেটি না করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। পুলিশের ওপর, বিচারপতির বাসভবনে, হাসপাতালে হামলা করেছে সেই কারণে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।’
‘নির্বাচন যথাসময়েই হবে এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির অনেক নেতা এখন তারেক রহমানের দোষ দেয়, বলে তারেক রহমানের আমাদের দলটা ধ্বংস করে দিলো এবং তারা বসে আছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। ফখরুল সাহেব, রিজভী সাহেব যাই বলুন না কেন, নির্বাচনে আপনাদের দল অংশগ্রহণ না করলেও, আপনাদের নেতারা ইনশাআল্লাহ অংশগ্রহণ করবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অনেকেই লাইন ধরে আছে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য। আর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজের নেতৃত্বে আর একটি দল হতে যাচ্ছে। তারা শীঘ্রই ঢাকায় কনভেনশন করবে। সুতরাং বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও নেতাদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে পারবে না। তাই অনুরোধ জানাবো দল যদি টেকাতে চান তাহলে নৈরাজ্যের পথ পরিহার করুন, নির্বাচনে আসুন, আপনাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।’
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত মুজিব ক্লাইমেট প্লান অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের ৪০ শতাংশ শক্তি সবুজ উৎস থেকে আসবে। সবুজ উৎসের অন্যতম প্রধান দুটি হচ্ছে সৌর ও পারমাণবিক শক্তি। দেশে সোলার বা সৌরশক্তি প্রসার লাভ করছে এবং আমরা নিউক্লিয়ার বা পারমাণবিক ক্লাবে যোগ দিয়েছি।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরামের (বিসিজেএফ) সঙ্গে আরব আমিরাতের দুবাইয়ের অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ এ দেশের অবস্থান প্রসঙ্গে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পশ্চাৎপদতার কথা উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির বৈশ্বিক ঐক্যমত মোতাবেক আমরা বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারছি না। একই সাথে প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা গড়ে ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার সমুদ্র বৃদ্ধি পায়, আমাদের এই অংশসহ কোনো কোনো অংশে অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। গত ৩০ বছরের এই প্রেক্ষাপটে আমরা দেখছি যে, যেখানে বন্যা হতো না সেখানে বন্যা হচ্ছে। পাকিস্তানে বন্যার ভয়াবহতা কখনো ছিলো না সেখানেও হচ্ছে। বরফ অঞ্চল সাইবেরিয়ায় বুশ-ফায়ার হচ্ছে। এই পরিবর্তন প্রশমিত করতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মযজ্ঞের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এটি প্রশমনের জন্য প্রথমত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এবং জনগণের সচেতনতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ব্যাপক ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। পৃথিবীর জন্য দুঃখজনক হচ্ছে বিভিন্ন দেশের রাজনীতি অস্ত্রবাজদের খপ্পরে পড়েছে। ফলে বৈশ্বিক ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ডে কোনো অর্থ জমা পড়ছে না। কিন্তু যুদ্ধ করার জন্য দেখা যাচ্ছে অর্থের কোনো অভাব হচ্ছে না। পৃথিবীকে বাঁচাতে এ অবস্থার পরিবর্তন একান্ত প্রয়োজন।
এ সময় ক্লাইমেট জার্নালিস্টস ফোরামকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরিবেশবিদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, এই ফোরাম পরিবেশ বিষয়ে মানুষকে এবং বিদেশিদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা কি পরিমাণ ঝুঁকিতে আছি সেটি অবহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
বিসিজেএফ সভাপতি কাওসার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক, সদস্যদের মধ্যে রিমন মাহফুজ, উম্মুল ওয়ারা সুইটি, আলমগীর স্বপন প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। বিসিজেএফ সদস্য রফিকুল ইসলাম রতন সভায় কপ-২৮ উপলক্ষে পরিবেশবিদ মির্জা শওকত আলীর প্রবন্ধ সভায় উপস্থাপন করেন।