এবিএনএ : সুনীল নারিনের দ্রুততম ফিফটির পর ফাফ ডু প্লেসি-মঈন আলীর ব্যাটে চড়ে বিপিএলের ফাইনাল নিশ্চিত করে কুমিল্লা। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় ট্রফির লড়াইয়ে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। চট্টগ্রামের দেওয়া ১৪৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৩ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জিতে কুমিল্লা। ডু প্লেসি ২৩ বলে ৩০ ও মঈন ১৩ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত ছিলেন। সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেছেন নারিন। মাত্র ১৩ বলে বিপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ফিফটি হাঁকান এই ক্যারিবীয়ান। চট্টগ্রামের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও বেনি হাওয়েল।
নারিনের রেকর্ড ফিফটিতে বড় জয়ের পথে কুমিল্লা
সুনীল নারিনের ঝড়ে পাওয়ার প্লে থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ২ উইকেট হারিয়ে তোলে ৮৪ রান। মাত্র ১৩ বলে ফিফটি করে বিপিএলে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন নারিন। আর তাতেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। নবম ওভারের সময় ২২ রানে ইমরুল ফেরার পর কুমিল্লা এখন লড়ছে ডু প্লেসি-মঈন আলীর ব্যাটে। ১০ ওভার শেষে দলটির সংগ্রহ ৩ উইকেট হারিয়ে ১১১। জয় থেকে মাত্র ৩৮ রান দূরে।
লক্ষ্য আহামরি বড় নয়। ফাইনালের টিকিট পেতে কুমিল্লার ১২০ বলে দরকার ১৪৯ রান। চট্টগ্রামের পেসার শরিফুল প্রথম বলে লিটনকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। কিন্তু পরের ১০ বলে যা হলো তাতে ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেল চট্টগ্রাম।
এবারের বিপিএলে প্রথমবার ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে সুনীল নারিন এলোমেলো করে দেন চট্টগ্রামের বোলিং। শরিফুলকে ছক্কায় উড়িয়ে শুরু তার তাণ্ডব। ওই ওভারেই চলে আসে আরো দুই চার।
তার ব্যাটিং তাণ্ডবে পুড়েন আফিফ হোসেনও। পঞ্চম ওভারে এক ছক্কা ও এক চার উড়িয়ে দ্রুত হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে যান। ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। তাকেও ছক্কায় উড়িয়ে স্বাগত জানান নারিন।
আর এই ছক্কায় নারিন তুলে নেন বিপিএলের দ্রুততম ফিফটি। মাত্র ১৩ বলে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান নারিন। ১৬ বলে ২০১৬ বিপিএলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আহমেদ শেহজাদ। একটুর জন্য নারিনের বিশ্ব রেকর্ড হয়নি। যুবরাজ সিং, হজরতউল্লাহ জাঝাই ও ক্রিস গেইলের টি-টোয়েন্টিতে ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরিতে রেকর্ড আছে।
২২ গজে বিধ্বংসী ঝড় তোলা নারিনকে থামান সেই মৃত্যুঞ্জয়। ১৬ বলে ৫৭ রান করে ফিরতি ক্যাচ দেন বাঁহাতি পেসারকে। ৫ চার ও ৬ ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে রাখেন কুমিল্লার ওপেনার। তার পুরো ইনিংসে ছিল মাত্র একটি সিঙ্গেল।
লক্ষ্য তাড়ায় ৬ ওভার শেষে কুমিল্লার রান ২ উইকেটে ৮৪।
মিরাজ-আকবরের ব্যাটে ১৪৯ রানের লক্ষ্য দিলো চট্টগ্রাম
ব্যাটিং ধস সামলে মেহেদি হাসান মিরাজ ও আকবর আলীর ব্যাটে চড়ে কুমিল্লাকে ১৪৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছে চট্টগ্রাম। দলটি ১৯.১ ওভারে ১৪৮ রানে সবকটি উইকেট হারায়।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ক্রিজে এসে ১৯তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে ৩৮ বলে সর্বোচ্চ ৪৪ রানে আসে। ৩ চার ও ২ ছয়ে এই রান করেন তিনি। এ ছাড়া আকবর করেন মাত্র ২০ বলে ৩৩ রান। ৫০ রানের ৫ উইকেট হারানোর পর দুজনের প্রতিরোধে লড়াকু সংগ্রহ পায় চট্টগ্রাম। এ ছাড়া জাকির হাসান ২০, উইল জ্যাকস ১৬ ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী শেষে দিকে ১৫ রান করেন।
কুমিল্লার হয়ে ৩ উইকেট করে নেন শহিদুল ইসলাম ও মঈন আলী।
মিরাজের সঙ্গে দারুণ জুটির পর ফিরলেন আকবর
৫০ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ক্রিজে আসেন আকবর আলী। মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েন দারুণ জুটি। ব্যাটিং ধস সামলে ৪০ বলে ৬১ রান যোগ করেন দুজনে। ২০ বলে ৩৩ রান করে ফেরেন আকর। উড়িয়ে মারতে গিয়ে আবু হায়দার রনির বলে ধরা পড়েন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। আউটের আগের বলেও কাভারে দারুণ চার হাঁকান আকবর। তিনি ফিরলে ক্রিজে আসেন বেনি হাওয়েল। মিরাজ অপরাজিত আছেন ২৮ রানে। ১৫ ওভার শেষে চট্টগ্রামের সংগ্রহ ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান।
মিরাজ-আকবরের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় চট্টগ্রাম
পাওয়ার প্লে-তে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল চট্টগ্রাম। এর মধ্যে সপ্তম ওভারে আফিফ ফিরে গেলে আরও বিপদে পড়ে সাগরিকা পাড়ের দলটি। মঈনের বলে তানভীরের দারুণ ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক। তিনি ২ চারে ১০ বলে ১০ রান করেন। আফিফ ফিরলে খেলার হাল ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও আকবর আলী। দুজনের ব্যাটে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে দলটি। ১০ ওভার শেষে দলটির সংগ্রহ ৫ উইকেট হারিয়ে ৬৬ রান। মিরাজ ১৪ ও আকবর ৩ রানে ক্রিজে আছেন।
পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে চট্টগ্রাম
পাওয়ার প্লেতে দলের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যান উইল জ্যাকস-চ্যাডউইক ওয়ালটনসহ জাকির হাসান ও শামীম হোসেনকে হারিয়ে চাপে আছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ৬ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৩ রান।
ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরু করেছিলেন জ্যাকস। এরপর জাকির হাসানের দুই চারে আবু হায়দার রনির এই ওভার থেকে আসে ১৩ রান। তৃতীয় ওভার পর্যন্ত ম্যাচের নাটাই ছিল চট্টগ্রামের হাতেই। নারিনের করা তৃতীয় ওভার থেকে ১ ছয়, ১ চারে নেন ১২ রান। এরপরেই ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে যায়।
শহীদুলের করা চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জ্যাকস। তার ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১৬ রান। মাঠে এসে পরের ওভারে ফেরেন ওয়ালটন (২)। তানভীর ইসলামের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হন তিনি। এডিআরএস নিলেও এটি তার বিরুদ্ধে যায়। মঈন আলীর করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারটি ছিল চট্টগ্রামের জন্য আরো ভয়ঙ্কর। পরপর দুই বলে ফেরেন ক্রিজে সেট হওয়া জাকির হাসান ও শামীম হোসেন। জাকিরের ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ২০ রান আর শামীম ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই।
জ্যাকসকে নিয়ে ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম, দুটি পরিবর্তন কুমিল্লার
বিপিএলের ফাইনালে ওঠার মহারণে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। বাঁচামরার এই লড়াইয়ে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক আফিফ হোসেন।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলবে দুই দল। বিজয়ী দল আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রফির জন্য ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে।
টস জিতে ব্যাটিং নিতে পেরে সন্তুষ্ট আফিফ। জানিয়েছেন, উইকেট ভালো, তারা আগে ব্যাটিং করে চ্যালেঞ্জিং টার্গেট দিতে চান। অন্যদিকে কুমিল্লার অধিনায়ক হতাশ টস না জেতায়। তিনি জানান, টস জিতলে ব্যাটিংই নিতেন, এখন যেহেতু রান তাড়া করতে হবে তাই সেদিকেই নজর দিতে চান।
চট্টগ্রামের জন্য সুখবর, একাদশে ফিরেছেন আগের ম্যাচে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়া উইল জ্যাকস। বাদ পড়েছেন কেন্নার লুইস।
অন্যদিকে কুমিল্লার একাদশে দুটি পরিবর্তন। একাদশে এসেছেন আরিফুল হক ও আবু হায়দার রনি। বাদ পড়েছেন মাহিদুল অঙ্কন ও নাহিদুল ইসলাম।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স একাদশ: ইমরুল কায়েস (অধিনায়ক), লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), আরিফুল হক, আবু হায়দার রনি, তানভীর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, সুনীল নারিন, মঈন আলী, ফাফ ডু প্লেসি।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স একাদশ: উইল জ্যাকস, জাকির হাসান, আফিফ হোসেন, বেনি হাওয়েল, মেহেদী হাসান মিরাজ, চ্যাডউইক ওয়ালটন, আকবর আলি, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম।