এবিএনএ : ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষে আগামী ১ মার্চ থেকে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি থেকে সরে এসে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র জুনায়েদ হুসেইন খানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। তবে আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এক তরফাভাবে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারী আরেক অংশের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্দোলন শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রণে এটি এখন জাতীয় সিদ্ধান্তে পরিবর্তিত হয়েছে এবং আমাদের উপাচার্য স্যার জাতীয় সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তে ১৭ মে পর্যন্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ মার্চ সব বর্ষের জন্য হল খোলে দেওয়া এবং ১ মার্চ থেকে হল ওঠার দাবির আর কোনো যৌক্তিকতা থাকে না।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উন্নত বিশ্বে অক্সফোর্ড এমআইটিসহ বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবারো বন্ধ ঘোষণা করে অনলাইন কার্যক্রমে স্প্রিং সিজন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের যেহেতু পূর্বেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করা যায়নি সেহেতু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড প্রদর্শনপূর্বক করোনা টিকা গ্রহণে অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে দ্রুত ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা যেন ১৭ মের আগেই অফলাইন শিক্ষা-কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা চারটি দাবির কথা জানান। দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের দ্রুত ভ্যাক্সিনেশন আওতায় আনা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা অ্যাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ‘ক্রাইটেরিয়া’ যোগ করা, শিক্ষার্থী হয়রানির দূরীকরণে হল খোলার আগ পর্যন্ত অফলাইন কার্যক্রম, এসাইনমেন্ট, পরিক্ষা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা, হল খোলার পর শিক্ষার্থীদের চাহিদার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ক্লাস নেওয়াসহ পূর্ণ প্রস্তুতির সুযোগ দিয়ে পরিক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করা এবং সেশনজট নিরসনকল্পে কার্যকরী পদক্ষেপ ছাত্রনেতা ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে পরিকল্পনা করে হল খোলার পূর্বেই লিখিত জানিয়ে দেওয়া।
তবে আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এক তরফাভাবে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারী আরেক অংশের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলা হয়নি। সে (জুনাইদ) ছাত্রলীগ করে। ছাত্রলীগরে বড় ভাইদের চাপে সে কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মো. জুনাইদ হুসেইন খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়েই আন্দোলন করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রেস রিলিজে আমাদের চারটি প্রস্তাব রয়েছে। এই প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন করা হলে ১৭ মে হল খোলার বিষয়ে সরকার যে চিন্তা-ভাবনা করছে, তার আগেই হল খোলা সম্ভব হবে।’
অন্যান্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি ফেসুবক গ্রুপের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়েছেন। তাদের সাড়া পেয়েই আমরা কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। তাদের “রেসপন্সের” আলোকেই আমাদের সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের গ্রুপে ১০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে আন্দোলনের দিন আমরা মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে পেয়েছি। যারা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো, তাদের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ এর আগে গত মঙ্গলবার হল খোলার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আগামী ১ মার্চের মধ্যে হল খুলে দেওয়ার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা।