,
প্রচ্ছদ | জাতীয় | আন্তর্জাতিক | অর্থনীতি | আমেরিকা | লাইফ স্টাইল | ভিডিও নিউজ | ফিচার | আমেরিকা | বিনোদন | রাজনীতি | খেলাধুলা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | শিক্ষা

যৌথ পরিবার এবং সন্তানের মানসিক বিকাশ

এক. সন্তান প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বাবা-মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না, বরং শত দুঃখ-কষ্ট পেলেও সন্তানের জন্য শুভকামনা করেন। মহানবী (সা.) সন্তানদের সুশিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের স্নেহ করবে এবং তাদের শিষ্টাচার শিক্ষাদান করবে। সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান-খয়রাতের চেয়েও উত্তম। তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞানদান কর। কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’

যুগের হাওয়ায় বাবা মায়েরা আজ অনেক ব্যস্ত। সন্তানের জন্য তাদের সময় এখন দুষ্প্রাপ্য। যৌথ পরিবার ভেঙে যেতে যেতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন ৩ জন কিংবা ৪ জনে এসে ঠেকেছে। তদুপরি সবাই ব্যস্ত। এখনও যখন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একান্ত আলাপচারিতা দেখি, অধিকাংশ ব্যক্তিই তাদের একান্নবর্তী পরিবারের স্মৃতিচারণ করেন। পরিপূর্ণ আনন্দ যে ঘরভর্তি মানুষের মধ্যে নিহিত, অবলীলায় সবাই স্মরণ এবং স্বীকার করেন।

দুই. আমি আমার ছেলেবেলার কথা মনে করে এখনও শান্তি পাই। মায়ের কাছে ছিলাম সব কাজের কেন্দ্রবিন্দু। দাদা, দাদী, নানা, নানী, চাচা, মামার কোলেই কেটেছে আমার শিশুকাল। বাড়ির কাজের মানুষ আমায় কোলে নিয়েছে এমন মনে পড়ে না। দাদার কোলের মধ্যে থেকে শুনতাম বিভিন্ন রাজা-বাদশাহ, বিখ্যাত মানুষদের গল্প। বাসায় সারাদিন হৈ চৈ লেগেই থাকতো। ক্লাস ওয়ানে যখন ভর্তি হলাম, কাকু স্কুলে নিয়ে যেতো।

চার বছর বয়সে ক্লাস ওয়ান, ভয় পাই কিনা এজন্য কাকু আমার সঙ্গে ক্লাসের মধ্যেই বসে থাকতেন। কোলে করে বাসায় নিয়ে আসতেন। স্কুল থেকে বাসায় এলে দাদীর খাবারের যন্ত্রনা। বেলা অবেলা নেই। আর সময় মত মায়ের আদর, স্নেহ, শাসন সবই ছিল। যখন মাধ্যমিকে উঠলাম, তখন আব্বুর তদারকিটা বেড়ে গেল। যদিও কাজের জন্য আব্বু কিছুটা ব্যস্ত থাকতেন, কিন্তু রাতের খাবারের সময় তার সঙ্গে বসতে হতো।

সারাদিন কতটুকু পড়া করেছি, বিকেলে কাদের সঙ্গে খেলেছি, দুপুরে ঘুমিয়েছিলাম কিনা ইত্যাদি কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছিল আমার প্রতিদিনের কাজের অংশ। যৌথ পরিবারের কারণে আমার সামান্য অন্যায় করার সুযোগ ছিল না। ঘরে আমার অনেক অনেক অভিভাবক। এখনও আব্বু প্রতিরাতে আমাদের নিয়ে খেতে বসেন। পরিবারের সব সমস্যার সমাধান খাবার টেবিলেই হয়ে যায়।

তিন. রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্পের ভাষায়, ‘তেরো-চৌদ্দ বছরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গ সুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধো-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগলভতা।‘

গল্পটির আরেক জায়গায় বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর সম্বন্ধে বলা হয়েছে, ‘তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়। ‘বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা নিয়ে লেখা এই গল্পটি শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপযোগী ছিল।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ‘ছুটি’ গল্পটি বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি এখনও মনে করতে পারি, আমাদের স্কুলের বাংলা ক্লাসের দিনগুলো। বাংলা স্যার যখন প্রথম ‘ছুটি’ গল্পটি পড়ে শুনিয়েছিলেন, আমাদের ক্লাসের অনেক ছেলে ফটিকের কষ্টের জন্য কেঁদে ফেলেছিল। সেদিন অনেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিল আর কখনো স্কুল পালাবে না। মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। অনেকের মনে একটা ভয়ও তৈরি হয়েছিল।

কারণ মন দিয়ে লেখাপড়া না করলে যদি দূরের কোনো আবাসিক স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়? এজন্যই আত্মোপলব্ধি সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ। অথচ আমরা বুঝে কিংবা না বুঝে আত্মোপলব্ধির সেই সুযোগও বন্ধ করে দিচ্ছি। যৌথ পরিবারের ইতিবাচক দিক এখন সন্তানরা বোঝে না। আত্মীয় স্বজন দেখলে বিরক্ত হয়। ফলে মনের প্রসারতা ও উদারতা তৈরি হয় না। অথচ যৌথ পরিবারে সন্তানরা খুব খারাপ সময়গুলোও সম্মিলিতভাবে আনন্দের সঙ্গে পার করতে পারে। বাবা-মা’র আত্মোপলব্ধি নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই, এখন সন্তানের পালা।

চার. আজকের বাবা-মায়েরা চাকরি, ব্যবসা, পার্টি নিয়ে অনেক অনেক ব্যস্ত। অর্থ বিত্ত আর ক্যারিয়ার নামক আজব নেশায় তাদের পেয়ে বসেছে। সন্তান সঠিকভাবে মানুষ করাও যে ক্যারিয়ারের অংশ সেটা তাদের বুঝাবে কে? শুধু দামি দামি জামা কাপড়, গাড়ি করে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে সন্তানের সব প্রাপ্তি নিশ্চিত হয় না। প্রয়োজন স্নেহ, ভালোবাসা, শাসন।

ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আব্দুল কালামের মতে,’যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন- বাবা, মা এবং শিক্ষক।’ বর্তমানে অনেক বাবা মা আত্মীয়-স্বজন থেকে আলাদা থাকার মাধ্যমে নিজেদের গুরুত্ব বাড়িয়ে চলেছেন। কতটা বোকা চিন্তা ভাবনা! আধুনিকতা মানেই নিসঙ্গতা নয়। একা একা যদি বসবাস করতে চান, তবে রবিনসনের মতো নির্জন দ্বীপে বসবাস করেন।

সন্তান বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত। সেই নিয়ামত সঠিকভাবে পরিচর্চা করুন। আজ আপনি অবচেতনভাবে যেভাবে সন্তানদের অবহেলা করছেন, সন্তানও ভবিষ্যতে তাই করবে। অনেকেই সন্তান মানুষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঠিক মতো সময় দিতে পারেন না। তাদের জন্য বলছি, যৌথ পরিবার বজায় রাখেন। আপনার সন্তান কখনও নিজেকে একা মনে করবে না। সন্তানের অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা, মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার, সঙ্গদোষ এড়ানো, অপরিকল্পিত মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ করতে চাইলে, সব চিকিৎসা বাদ দিয়ে যৌথ পরিবার প্রথায় ফিরে আসুন। সন্তানের মানসিক বিকাশে সহায়তা করুন।

লেখক: উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali
Managing Director: Akbar Hossain
Executive Editor: Mehedi Hasan
E-mail : abnanewsusa@gmail.com
Usa Office: 289 West Koach Avenue, Egg harbor City, New Jersey-08215, Bangladesh Office : 60/1. Purana Paltan (2nd Floor), Dhaka-1000, Usa. Phone: +16094649559, Cell:+8801711040113, +8801912-621573
Server mannarged BY PopularServer
Design & Developed BY PopularITLimited