এবিএনএ: একটি দেশ যখন গড়ে ওঠে, তখন সেই দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁদের প্রধান কর্তব্য হলো, সংশ্লিষ্ট দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আর সেই জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য পুলিশ বা নিরাপত্তা কর্মী দরকার পড়ে। আর দেশের বাইরের শত্রু যারা, তাদের থেকে মাতৃভূমি এবং সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডের জনগণকে রক্ষা করার জন্য দরকার হয় সামরিক বাহিনীর। স্থল, জল ও বায়ু – এই তিনটি ভাগে বিভক্ত থাকে সামরিক বাহিনী। কখনও কখনও যখন শক্তিধর দেশের সঙ্গে সামরিক লড়াইয়ে পেরে ওঠে না তুলনায় কম শক্তিধর দেশ, সেইসব দেশের সার্বোভৌমত্ব রক্ষার জন্য ন্যাটো বাহিনী রয়েছে। তবে, তারা ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিকেই সামরিক সাহায্য দেয়। তবে, সারা বিশ্বে শান্তিরক্ষার বন্দোবস্ত করার দায়িত্ব যাদের হাতে রয়েছে, সেই সংস্থা হলো রাষ্ট্রসঙ্ঘ। তাদেরও নিজস্ব সামরিক বাহিনী রয়েছে। তবে, এর জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘ তার সব সদস্য দেশের থেকে সাহায্য নেয়। তাদের বলা হয় শান্তিরক্ষী বাহিনী।
যাইহোক, একটা সার্বোভৌম দেশের ভূখণ্ডকে বিরোধী এবং বিদেশি শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সামরিক বাহিনীর যে কতোটা প্রয়োজন সেটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তবে, এবার যদি বলি, পৃথিবীতে এমনও অনেক দেশ আছে, যাদের কোনও সামরিক বাহিনী নেই। বিশ্বাস করবেন? অবাক করে দেওয়ার মতো হলে, তথ্যটা কিন্তু একেবারে নির্ভুল। এই আধুনিক বিশ্বে দাঁড়িয়ে ছ’টা এমন দেশ আছে, যাদের কোনও সামরিক শক্তি নেই। অথচ তারা দিব্যি সার্বোভৌম দেশ হিসেবে টিকে আছে। বলা ভালো, তাদের সামরিক শক্তির দরকারই পড়ে না।
সামরিক সেনাবিহিনী বিশ্বের ছ’টি দেশ –
৬. গ্রেনাডা
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত একটি ছোটো দ্বীপরাষ্ট্র। ১৯৭৪ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর ১৯৮৩ সালে মার্কিন বাহিনীর হামলার শিকার হয় গ্রেনাডা। তারপর থেকে এদেশে কোনও সামরিক শক্তি নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ব্যাপারটা আধাসামরিক বাহিনী রয়্যাল গ্রেনাডা পোলিসের হাতে রয়েছে।
৫. আইসল্যান্ড
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোটো দেশ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকলেও মানুষ থাকেন অবশ্যই এখানে। তবে, তুলনায় কম। নর্ডিক আইল্যান্ডের অন্তর্গত এই দেশে ১৮৬৯ সাল থেকে কোনও সামরিক বাহিনী নেই। আধুনিক বিশ্বে দাঁড়িয়ে যদিও তারা নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারটা সুনিশ্চিত করেছে ১৯৫১ সালেই। ২০০৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এদেশে তাদের সেনাও রাখত চুক্তি অনুযায়ী। গত বারো বছর সেদেশে আর কোনও মার্কিন সেনা নেই। তবে, কোনও সময় বিপদের সম্মুখীন হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক সাহায্য দেবে বিদেশি শত্রুর হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে।
৪. কোস্টারিকা
মধ্য আমেরিকার এই দেশে ১৯৪৮ সালে গৃহযুদ্ধ হয়। তারপর থেকে কোস্টারিকা কোনও সামরিকবাহিনী গঠন করেনি আর। দরকারও পড়েনি। বরং প্রত্যেক বছরের পয়লা ডিসেম্বর কোস্টারিকা সামরিক বাহিনী বিলোপের আনন্দ উদযাপন করে। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পুলিশ বাহিনী অবশ্যই রয়েছে।
৩. আন্দোরা
ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝে অবস্থিত একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র দেশ। ইউরোপের ছটি ক্ষুদ্রতম দেশের মধ্যে একটি এই আন্দোরা। দেশে কোনও সামরিক বাহিনী নেই। তবে, সামরিক সাহায্যের চুক্তি অবশ্যই রয়েছে। ফ্রান্স ও স্পেন সবসময় সাহায্য করে আন্দোরাকে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব ন্যাশনাল পোলিস কর্পসের হাতে। তবে, বিশেষ উপলক্ষে ছোটো নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করা হয়।
২. কিরিবাটি
প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ওশেনিয়ার অন্তর্গত দ্বীপরাষ্ট্র কিরিবাটি তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দেশে কোনও স্থায়ী সামরিক বাহিনী নেই। নিরাপত্তা ক্ষেত্রে তাদের সব সাহায্য নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া করে। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের হাতে।
১. ভ্যাটিকান সিটি
তালিকার সবচেয়ে পবিত্র এবং জনপ্রিয় রাষ্ট্র। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটিতে একসময় পোপ আর দেশকে রক্ষা করার জন্য সর্বদা অস্ত্রহাতে তৈরি থাকত সামরিক বাহিনী। কিন্তু, পোপ ষষ্ঠ পল সামরিক বাহিনী বাতিল করে দেন ১৯৭০ সালে। তারপর থেকে রোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটি’কে ইতালি পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে আসছে।