এবিএনএ: রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের চুক্তি মেনে ফিরিয়ে নিতে চায় মিয়ানমার- শনিবার জাতিসংঘের চলতি ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে এমন কথা জানালেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ইউনিয়ন মন্ত্রী চিয়াও তিন্ত সোয়ে। এসময় তিনি বাংলাদেশকে এই চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান। সম্প্রতি জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় কোনো রোহিঙ্গা সেখানে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। তিনি এই সমস্যাকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার সমস্যা হিসেবে বিশ্ববাসীকে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সময় শনিবার এবং বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোরের দিকে এই ভাষণ দেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন রুখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ধ্বংসাত্মক আন্দোলনসহ যেসব বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে সে সম্পর্কে মিয়ানমার অবগত রয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধান করা দরকার।’ জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারের তরফে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, নির্বিঘ্ন এবং সফল প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও উদ্যোগের পাশাপাশি এ বিষয়ে সই করা চুক্তির শর্তও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। সোয়ে বলেন, মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সই করেছে সেই চুক্তি অনুযায়ীই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আগ্রহী দেশটির সরকার। এই চুক্তির যথাযথ প্রয়োগই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের একমাত্র উপায় বলেও চিহ্নিত করেন তিনি। আর তাই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানা মিয়ানমারের এই মন্ত্রী।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় নতুন কোন শর্ত বা উপাদান অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সোয়ে বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার ক্রমাগত আহ্বান রয়েছে। মিয়ানমারের ভেতরে সেফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল তৈরির চাপ রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না এবং এটি বাস্তবসম্মতও নয়।’ ভাষণে তিনি আহ্বান জানান, কক্সবাজারের শিবির থেকে মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী ৪০০ হিন্দু পরিবারসহ অন্যান্যদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে।মিয়ানমারের মন্ত্রীর ভাষণের একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার ও তাদের নাগরিকদের মধ্যকার সমস্যার বোঝা বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি আহ্বান রাখেন যেন তারা এই সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাও ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।’ এছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে চারটি সুপারিশ তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনে যোগ্যদেরকে পরিচয়পত্র বা আইডেন্টিটি কার্ড দেয়া হবে এবং মিয়ানমারের নাগরিকত্বের আইন অনুযায়ী যোগ্যদেরকে নাগরিকত্ব কার্ড দেয়া হবে। বাকিরা ন্যাশনাল ভেরিকেশন কার্ড বা এনবিসির আওতাভুক্ত হবে। সোয়ে বলেন, এই কার্ড জাতিসংঘের অনুমোদিত অভিবাসীদের জন্য দেয়া গ্রিন কার্ডের মতো হবে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি হলেও কার্যত দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। মূলত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ওই দুই দফায় স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চায়নি কোনো রোহিঙ্গা। সেই সঙ্গে নাগরিকত্ব দেয়ার দাবিও ছিল তাদের।