এবিএনএ: পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে এবার ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন পুরান ঢাকার পোস্তার কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা। রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় শনিবার (১৭ আগস্ট) সাংবাদিকদের এ কথা জানান কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। এ সময় সংগঠনের সেক্রেটারি হাজী মো. টিপু সুলতানসহ অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় আড়তদারদের সভা হয়। সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনটির সভাপতি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করব না। সভায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ট্যানারি মালিক, আড়তদার ও কাঁচা চামড়া সংশ্লিষ্টদের বৈঠক আছে। সেখানে আলোচনার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আজকে চামড়া বিক্রি করার কথা থাকলেও আমরা এখন থেকে আর বিক্রি করব না।’
ট্যানারি মালিকদের কারণে চামড়ার দাম কমেছে অভিযোগ করে আড়তদারদের এ নেতা বলেন, ‘ট্যানারিগুলো বকেয়া টাকা না দেয়ায় এবার অর্থের অভাবে চামড়া কিনতে পারিনি। অন্যান্য বছর ঈদের আগেরদিন আড়তদারদের সঙ্গে আলোচনা করলেও এবার তারা কোনো কথা বলেনি। তারা যদি আমাদের আশ্বস্ত করত ন্যায্য দামে চামড়া কিনতে তাহলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। কিন্তু এটি না করে উল্টো মিডিয়ার কাছে নানা কথা বলেছেন। এ কারণে আরও দর কমেছে। তাই ট্যানারি মালিকরাই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।’ এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কোরবানির পশুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেন ট্যানারি মালিকরা। শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির মালিক সাখাওয়াত উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া আজ থেকে কেনা শুরু করেছি। আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে আগামী দুই মাস চামড়া সংগ্রহ করব। যেসব চামড়া ভালোভাবে সঠিক সময়ে লবণ দিয়েছে ওইসব চামড়া ভালো দামে কেনা হবে।’ এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ট্যানারি মালিক, আড়তদার ও কাঁচা চামড়া সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে বর্তমান চামড়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর বিস্তারিত জানানো যাবে বলে জানান ট্যানারি মালিকদের এ নেতা। এদিকে এবার কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পানির দামে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক চামড়া বিক্রি না হওয়ায় রাস্তায় পচেছে। এবারের কাঁচা চামড়া বিগত ত্রিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়। কোরবানির পশুর চামড়া রাস্তায় পচে নষ্ট হয়। বিনা মূল্যেও নেয়নি। এ নিয়ে বিপাকে পড়েন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
সিন্ডিকেট করে ফায়দা লুটছে পোস্তার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা। এ নিয়ে দু’পক্ষই পল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে। এ জন্য দু’পক্ষকে নিয়ে রোববার বৈঠকে বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে নড়েচড়ে বসে ট্যানারি মালিকরা। দেশীয় শিল্প রক্ষায় কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। গত বুধবার সকালে ধানমন্ডিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।
কাঁচা চামড়া রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করিনি। তবে আমরা এটাও জানি যে, ঢালাওভাবে কাঁচা চামড়া রফতানি করার অনুমোদন দিলে দেশে চামড়া শিল্প উন্নয়নে কিছু বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা চাই না একটা সম্ভাবনাময় খাত বাধাগ্রস্ত হোক। তাই বলে আমরা এ-ও হতে দিতে পারি না যে, চামড়া বিক্রি হবে না। দাম না পেয়ে মানুষ চামড়া পুঁতে ফেলবে, নদীতে ফেলে দেবে। তাই আমরা ঢালাওভাবে না দিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে কাঁচা চামড়া রফতানিতে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সচিব বলেন, ‘আগামী শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয় শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। এর ফলে যদি চামড়ার বাজারে ন্যায্যমূল্য ফিরে আসে তাহলে হয়তো আমরা কাঁচা চামড়া রফতানি অনুমোদন দেব না। তবে বিক্রেতারা যদি চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পায়, তাহলে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমোদন দেব। কারণ এটা এতিম, গরিব, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হক। এক্ষেত্রে আমরা পানির দরে চামড়া বিক্রি হতে দিতে পারি না।’ এবারও পবিত্র ঈদুল আজহার আগে সরকার ও ব্যবসায়ীরা মিলে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর প্রতি বর্গফুটের দাম একই ছিল।
২০১৭ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ঢাকায় ৪৫-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা। এ ছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় সংগ্রহ করতে বলা হয় ব্যবসায়ীদের। গতবার খাসির চামড়ার দামও ছিল একই। তবে ২০১৭ সালে খাসির চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ২০-২২ এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭। সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর, রফতানি আদেশ কমে যাওয়া ও অর্থ সংকটের কারণে এ বছর চামড়ার দাম কমানোর সুপারিশ করেছিল কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা। এসব বিবেচনায় সরকার দাম না বাড়িয়ে আগের মূল্য নির্ধারণ করে।