এবিএনএ : রমজান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে বান্দার জন্য একটি বিশেষ উপহার। যেমনি ব্যবসায়ীদের বিশেষ সময়ে বিশেষ দ্রব্যের ব্যবসা লাভজনক হয়, তেমনি রমজানে ইবাদতে মুমিন বান্দার জন্য লাভজনক। মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজে আইন। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ। (বুখারি : ১৯০৪)। ঢাল যেমন একজন যোদ্ধাকে তীর, গুলি বা যে কোনো রকম অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করে, তেমনি রোজাও একজন মুমিন ব্যক্তিকে সব ধরনের গুনাহ থেকে হেফাজত করে।
রাব্বুল আলামিনের কাছে রোজাদারের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য রাইয়ান নামক দরজা থাকবে, যার ভেতর দিয়ে কেবল রোজাদাররা বেহেশতে প্রবেশ করবে। এ ছাড়া অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। (বুখারি : ৩৪০৪)। রমজান মাসে সারা দিন রোজা রেখে যখন বান্দা ইফতার সামনে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করে, সেই দৃশ্য দেখে আল্লাহ পরম আনন্দ লাভ করেন। আর ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করতে থাকেন। সংযম এবং আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ হিসেবে রোজার গুরুত্ব অনেক। যাদের ওপর রোজা ফরজ : রোজাদারের মুসলমান হওয়া জরুরি। কোনো কাফেরের ওপর রোজা ফরজ নয়। বালেগ হওয়া। নাবালেগের ওপর রমজানের রোজা ফরজ নয়। তবে অভ্যস্ত করার জন্য তাদের উৎসাহিত করা উচিত। তারা নামাজ-রোজা পালন করলে তাদের মা-বাবা এর সওয়াব লাভ করবে। রমজানের রোজা প্রত্যেক বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির ওপর ফরজ হওয়ার কথা জ্ঞাত থাকা। রোজা রাখতে অক্ষম না হওয়া। সজ্ঞান হওয়া। পাগল বা উন্মাদের ওপর রোজা ফরজ নয়। যে কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং তা কাজা করতে হয় : কানে অথবা নাকে তেল বা ওষুধ প্রয়োগ করলে। নস্যি গ্রহণ করলে। স্বেচ্ছায় মুখভরে বমি করলে। অনিচ্ছাকৃত বমি গিলে ফেললে। কুলি করার সময় বা অন্য কোনো কারণে পেটের মধ্যে পানি বা অন্যকিছু প্রবেশ করালে। ধূমপান করলে। লোবান, আগরবাতি ইত্যাদির ধোঁয়া স্বেচ্ছায় গ্রহণ করলে। পাথরের টুকরা, লোহা, তামা ইত্যাদি অখাদ্য বস্তু গিলে ফেললে।
রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার বা যৌনাচার করলে। সূর্য অস্ত গিয়েছে মনে করে দিন থাকতেই ইফতার করলে। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা ছোলার সমান বা ছোলার চেয়ে বড় কোনো খাদ্যকণা গিলে ফেললে। পান মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আর এ অবস্থায় ভোর হয়ে গেলে। অজু অথবা গোসলের সময় পানি গলার ভেতর চলে গেলে। মস্তিষ্ক বা পেটের জখমে ওষুধ পৌঁছালে। স্পর্শ বা চুম্বন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত ঘটলে। অজানা অবস্থায় ঘুমের ভেতর কিংবা সচেতন অবস্থায় কেউ জোরপূর্বক কোনোকিছু পানাহার করালে। ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে আবার পানাহার করলে। কোনো নফল রোজা স্বেচ্ছায় ভেঙে ফেললে। দুপুরের পর রোজার নিয়ত করলে। দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত থুথুর চেয়ে বেশি হলে এবং তা কণ্ঠনালিতে চলে গেলে। কোনো স্ত্রীলোক রোজা অবস্থায় গুপ্তাঙ্গের ভেতরে কোনো প্রকার ওষুধ বা তেল প্রয়োগ করলে। সহবাস বা সঙ্গম ছাড়া কামচরিতার্থের জন্য বিকল্প পন্থা অবলম্বন করলে। যেমন : হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত ঘটালে। রোজাদারের মুখে ঘাম বা চোখের পানি প্রবেশ করালে, আর তা যদি কণ্ঠনালি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বৃষ্টি বা বরফের পানি কণ্ঠনালিতে পৌঁছে গেলে।