দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সারা দেশে একাধিক মুদ্রা ও ডাকটিকিট সংগ্রাহক তৈরি করার জন্য বেশকিছু সংগঠন গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি ফিলাশপও। এই ফিলাশপগুলোতে ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খামসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ডাকবিভাগ থেকে বের হওয়া সব ধরনের ফিলাটেলিক আইটেম এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশের ধাতব মুদ্রা ও ব্যাংক নোট পাওয়া যায়। যারা সংগ্রাহক তারা ফিলাশপগুলোতে ভিড় জমান। কিন্তু সব সময় আপনার পছন্দের মুদ্রা বা ডাকটিকিট পাবেন না, এর জন্য ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে, যা প্রত্যেক সংগ্রাহককে দিতে হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে মো. হোসাইন চৌধুরী প্রথম বাঙালি যিনি মুদ্রা সংগ্রহ শুরু করেন।
এর পর বাংলাদেশে একাধিক মুদ্রা সংগ্রাহক তৈরি হয়েছে যেমনÑ ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম, এম. এ. কাশেম, অমলেন্দ্র সাহা, মো. আকবর হোসাইন, রবিউল ইসলাম, এস. বি. সালাম তুহিন, রায়হান আহমেদ, সৈয়দ রশিদ আলম, মোঃ হারুনউজ্জামান, কামরুজ্জামান কায়সার, জিয়া ইবনে শাহজাহান, কাজী আলী রেজা করিম মার্শাল, শেখ আবু জাফর জুয়েল, শাহাদাত হোসাইন, মাহবুব হাসান, মো. নোমান নাসির, মোফিজুল ইসলাম বাবু, অ্যাডওয়ার্ড তরুণ রায় প্রমুখ । বর্তমানে সারা দেশে প্রায় এক হাজার মুদ্রা সংগ্রাহক রয়েছেন। প্রায় ৬৫ বছর থেকে মো. আবদুস সালাম ডাকটিকিট ও ডাক সংক্রান্ত সব উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি হচ্ছেন প্রথম বাঙালি ডাকটিকিট সংগ্রাহক।
জাতিসংঘের একটি ডাকটিকিটে আবদুস সালামের ছবি মুদ্রিত হয়েছে। এ দেশের যারা ডাকটিকিট সংগ্রাহক তাদের কাছে ও বিশ্বের প্রায় সব ডাকটিকিট সংগ্রাহকের কাছে এই ডাকটিকিটগুলো পরম মমতার সঙ্গে সংরক্ষিত হচ্ছে। তিনি দেশের প্রথম ফিলাশপ সালাম স্ট্যাম্প সেন্টার চালু করেন। যার বয়স বর্তমানে ৫০ বছর। ৫০টি বছর থেকে এই ফিলাশপটি ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে। যারা মনেপ্রাণে ফিলাটেলিস্ট, তাদের গুরু হচ্ছেন মো. আবদুস সালাম।
কিভাবে ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খামসহ ডাকবিভাগ থেকে বের হওয়া সব উপকরণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, উপস্থাপন, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে হয়, এই কাজটি তিনি ডাকটিকিটপ্রেমীদের শিখিয়ে দিয়েছেন। তারপর বাংলাদেশে ডাকটিকিট সংগ্রহের আগ্রহকে তিনি আরও বেশি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হন। দেশ স্বাধীনের পর যেসব ব্যক্তি ডাকটিকিট সংগ্রাহক হিসেবে নিজেদের নামটি লেখাতে সক্ষম হন, তাদের কয়েকজন হলেন আনোয়ারুল কাদির, এস. বি. সালাম তুহিন, পারভেজ আনোয়ার আলী খান, আমিনুল হক মল্লিক, ইকবাল মজিদ, রাশেদ মনির নিপু।
এছাড়াও সারা দেশে একাধিক ডাকটিকিট সংগ্রাহক তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ডাকবিভাগ নতুন নতুন ডাকটিকিট সংগ্রাহক তৈরি করার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। সারা পৃথিবীতে মোবাইলের গুরুত্ব থাকলেও ডাকবিভাগকে একই রকম গুরুত্ব দেওয়া হয়। যার ফলে সেসব দেশে নতুন করে প্রায় প্রতিদিন ডাকটিকিট সংগ্রাহক তৈরি হচ্ছে। হচ্ছে না শুধু বাংলাদেশে। কারণ বাংলাদেশ ডাকবিভাগের এ রকম কোনো পরিকল্পনা কোনোদিনই ছিল না। ডাকটিকিট সংগ্রাহকরা নিজেদের অর্থে মাঝেমধ্যে প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকেন।
এর ফলে সেখানে যে সব ব্যক্তি যান তাদের ভিতর ডাকটিকিট সংগ্রহের আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু এই আগ্রহটা আর বাড়ে না। কারণ ডাকবিভাগ থেকে যদি নতুন করে ডাকটিকিট সংগ্রাহক তৈরি করার চেষ্টা করা না হয়, তাহলে কিভাবেই নতুন করে ডাকটিকিট সংগ্রাহক তৈরি হবে? বাংলাদেশ ডাকবিভাগ ইচ্ছা করলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম তৈরি করতে পারেন, বছরে একবার হলেও ঢাকায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডাকটিকিট প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারেন।
যারা মুদ্রা ও ডাকটিকিট সংগ্রহ করেন, তারা শুধু মুদ্রা বা ডাকটিকিট সংগ্রহ করছেন না, একই সঙ্গে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংগ্রহ করছেন। সারা পৃথিবীতে মুদ্রা সংগ্রাহক ও ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হয়। এই কালচারটা বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি। আশা করি বিষয়টি নিয়ে সবাই ভাববেন। যারা মুদ্রা ও ডাকটিকিট সংগ্রহ করেন দেখা গেছে তারা সব সময় সব রকম খারাপ কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে এবং আলোকিত করতে পারছেন।
সৈয়দ রশিদ আলম : মুদ্রা গবেষক এবং সাধারণ সম্পাদক, টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাব