এবিএনএ : গ্রাহকের জন্য সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে হলে বেতার তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষ নীতি নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন মোবাইল ফোন অপারেটর ‘বাংলালিংকের’ মূল প্রতিষ্ঠান ‘ভিম্পেলকম লিমিটেডের’ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জন-ইভস্ সার্লিয়ার।
এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় মোবাইল ফোন অপাটেরদের সুযোগ দেওয়া হলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে নতুন বিপ্লব হবে বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন ‘ভিম্পেলকম’ সিইও। তিনি সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়সহ টেলিযোগাযোগ শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জন-ইভস্ সার্লিয়ার। এ সময় ‘বাংলালিংকের’ সিইও এরিক অস, চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার তৈমুর রহমান এবং পরিচালক ও হেড অব মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস আসিফ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময়কালে জন-ইভস্ সার্লিয়ার বলেন, ‘বাংলালিংক এ পর্যন্ত বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া প্রতি বছর নেটওয়ার্ক উন্নয়নে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে। চলতি বছর এই ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পাশাপাশি বেতার তরঙ্গ নিলাম হলে তার জন্যও আরও বাড়তি বিনিয়োগ করবে।’
তিনি বলেন, “ভিম্পেলকমের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সারাবিশ্বে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন গ্রাহককে উন্নত ও সময়ের সঙ্গে রূপান্তরিত সর্বাধুনিক ডিজিটাল সেবার সঙ্গে যুক্ত রাখছে। ভবিষ্যতে ভয়েস কল থেকে মেসেজিং সার্ভিস ও ওভার দ্য অ্যাপ (ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, স্কাইপির মতো অ্যাপ) ব্যবহারের যে নতুন বিপ্লব আসছে তার জন্য ভিম্পেলকমসহ বাংলাদেশে বাংলালিংক নতুন বিনিয়োগেরও প্রস্তুতি নিয়েছে। এ জন্য ‘ভিয়ন’ নামে নতুন একটি ডিজিটাল প্লাটফরম চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল সেবায় গ্রাহকদের জন্য হবে নতুন মাইলফলক। বাংলাদেশে বাংলালিংক গ্রাহকরা ‘ভিয়ন’ ব্যবহারের সব সুবিধা পাবেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে ভিম্পেলকম সিইও বলেন, ‘বেতার তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষ নীতির বাস্তবায়ন ছাড়া সর্বোত্তম গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একইসঙ্গে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ শিল্পের নীতিমালাও উদারিকরণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীতে ফোরজি সেবা চালু হবে। তার জন্য দরকার অত্যন্ত উন্নত ও দৃঢ় ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক অবকাঠামো। এ অবকাঠামোর ওপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যতের সব ডিজিটাল সেবা। এ কারণে এখনই সরকারকে উন্নত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরির কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জন-ইভস্ সার্লিয়ার বলেন, ‘আগামীতে মোবাইলভিত্তিক বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিসই ভয়েস কলের বিপরীতে মুখ্য হয়ে উঠবে। বিশেষ করে ই-কমার্স ও মোবাইলভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। সরকার মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় টেলিকম অপারেটরদের সুযোগ দিলে ডিজিটাল সেবায় তা বড় বিপ্লব নিয়ে আসবে।’ এ বিষয়টি সরকার ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্রিয় বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।
আর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলালিংক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। এ অবস্থায় এ প্রতিষ্ঠান অবশ্যই লাভজনকভাবে ব্যবসা করতে চায়। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে শেয়ার বাজারে আসারও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সবকিছুই হবে ধাাবাহিকভাবে। বর্তমানে বাংলালিংক চায় গ্রাহকদের সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তির ডিজিটাল সেবা দিতে। এ লক্ষ্য নিয়েই বাংলালিংক এগিয়ে যাচ্ছে।’
ভিম্পেলকম সিইও আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাত ও ডিজিটাল সেবার বাজারের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। সরকারের অনেক পদক্ষেপই এ বাজার বিকাশে খুবই সহায়ক হয়েছে।’ ভবিষ্যতের জন্যও সরকার আরও যুগোপযোগী নীতিমালাসহ বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করেন তিনি।
এ সময় বাংলালিংকের সিইও বলেন, ‘বাংলালিংক চায় আগে নতুন বেতার তরঙ্গ নিলাম হোক এবং তারপর প্রযুক্তি নিরপেক্ষ নীতি চালু করা হোক। তাহলে বাজারে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে বা সব অপারেটররা সেবা প্রদান ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলালিংক গত কয়েক বছরে সবার আগে সবচেয়ে উন্নত ডিজিটাল সেবা গ্রাহকদের কাছে নিয়ে এসেছে। থ্রিজিতে উন্নত ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। চলতি বছরে এসব সেবার মান আরও উন্নত হবে।’
বাংলালিংক সিইও বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের যে লক্ষ্য রয়েছে বাংলালিংক তার সঙ্গে একাত্ম হয়েই উন্নততর ডিজিটাল অপারেটর হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’