এবিএনএ: ঘুম মানে কিন্তু অলস সময় পার করা নয়। ঘুম মানে বিশ্রাম। পরবর্তী কাজগুলো স্বাচ্ছন্দে করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা হয় ঘুমের মাধ্যমে। ঘুম পর্যাপ্ত না হলে মেজাজ খিটখিটে, শরীর খারাপ হবে। প্রতিদিন অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুম ভীষণ জরুরি। এর কম সময় ঘুম আপনাকে দ্রুতই অসুস্থ করে তুলবে।
কিন্তু চাইলেও সব সময় নির্বিঘ্নে ঘুমানো সম্ভব হয় না। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে অথচ দু’চোখের পাতা এক হয় না। এর জন্য অনেকটাই দায়ী আপনার প্রতিদিনের খাবার। হয়তো আপনি অজান্তেই এমনসব খাবার খাচ্ছেন যা কিনা দূর থেকেই ঘুমকে বিদায় করে দিচ্ছে, আপনার কাছেও ঘেঁষতে দিচ্ছে না। তাই খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে রাতের খাবারটা যেন ঘুমের সহায়ক হয়, সেদিকে নজর রাখবেন। চলুন জেনে নেয়া যাক কোন খাবারগুলো আপনার ঘুম না আসার জন্য দায়ী-
অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার: বেশি বেশি মশলাদার খাবার খেতে পছন্দ করেন? অথচ এই খাবার দ্রুত হজম হয় না এবং আপনার পেটে গ্যাসের সমস্যা নিয়ে আসে। তাই নির্বিঘ্ন ঘুম চাইলে রাতে অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
গ্রিন টি: গ্রিন টি-এর নানা উপকারের কথা এতদিন শুনেছেন। এবার শুনুন এর একটি অপকারী দিক। ঘুমের আগে যদি আপনি এককাপ গ্রিন টি খান তবে আর দেখতে হবে না। সেই রাতে আপনাকে না ঘুমিয়েই কাটাতে হবে। এর জন্য দায়ী গ্রিন টিতে থাকা রাসায়নিক উপাদান। তাই রাতে গ্রিন টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কফি: কফির রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। এক মগ গরম কফি মুহূর্তেই আপনার মাথাব্যথা দূর করতে পারে। তবে ঘুমে আগে কফি খেলে বা সারাদিনে অতিরিক্ত কফি খেলে তা আপনার ঘুমের বারোটা বাজাবে। কফির অ্যাসিডিক উপাদান আপনার মস্তিষ্ককে সজাগ রেখে ঘুম তাড়িয়ে দিয়ে থাকে।
ফাস্টফুড: ফাস্টফুড দ্রুত ক্ষুধা মেটায় ঠিকই কিন্তু কখনোই এটি আপনার শরীরের জন্য উপকারী নয়। উচ্চ চর্বিযুক্ত এসব খাবার পেটে এসিড তৈরির পাশাপাশি শরীরে জ্বালাপোড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা ঘুম না আসার জন্য দায়ী। তাই ফাস্টফুড এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
কোমল পানীয়: কোমল পানীয় নামে কোমল হলেও এর কাজ কিন্তু অতোটা কোমল নয়। বরং এটি পেটে যাওয়া মানেই তা আমাদের শরীরের কোনো না কোনো ক্ষতি করতে প্রস্তুত। এটি আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত করে। কোমল পানীয়র অতিরিক্ত চিনি এবং গ্যাসীয় কম্পাউন্ড ঘুমের সাইকেল এবং ঘুমের উদ্রেক করা হরমোনের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে থাকে।
আইসক্রিম: আইসক্রিম খেতে কে না ভালোবাসে! কিন্তু এই বস্তুটিও আপনার ঘুম তাড়াতে যথেষ্ট। কারণ আইসক্রিমে হাই ফ্যাট আর প্রচুর চিনি থাকে। সহজে হজম হয় না আইসক্রিম। এটি আপনার ওজন বৃদ্ধিরও কারণ। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে আইসক্রিম বা মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
চকলেট: যত মজার খাবারই হোক, ঘুমের আগে চকলেট একদমই নয়। কারণ আইসক্রিমের মতো চকলেটও ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। ডার্ক চকলেটে ক্যাফেইন থাকে, তাই ঘুমের আগে এটি খেলে ঘুম আসতে দেরি হবেই।
চিনি: বিভিন্ন রকম খাবারে প্রসেস করা যেসব চিনি ব্যবহার করা হয় তা রক্তে মিশে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে ঠিকই কিন্তু এর কার্যকারিতাও খুব দ্রুত শেষ হয়। যে কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
মিষ্টি: খাওয়ার পরে পাতে একটু মিষ্টি না হলে কি চলে! এই অভ্যাস দুপুর পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু আপনার যদি রাতেও এমন অভ্যাস থাকে তবে তা আজই বাদ দিন। কারণ এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে শিথিলতা আসে, ওজনও বাড়ে দ্রুত। আর ঘুম? তাকে তো তাড়িয়েই ছাড়ে!
নিয়মিত সুনিদ্রা চাইলে এই খাবারগুলো অন্তত রাতের খাবারের তালিকা থেকে সরান। পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খান। আর তাতেই আপনার ঘুম ভালো হবে। মেজাজও থাকবে ঝরঝরে। আরেকটি কথা, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা আগেই রাতের খাবারটা সেরে নিন। এটিও আপনার ঘুমকে সুন্দর করবে।