এ বি এন এ : সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পাঁচ বছরেও স্থায়ী নিয়োগ পাননি দেশের ১৫ হাজার পুল শিক্ষক। এমনকি নীতিমালা অনুযায়ী তাঁদেরকে কাজও দেওয়া হচ্ছে না। আবার যাঁরা মাঝেমধ্যে কাজ পান তাঁদেরকেও নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। সবমিলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুল শিক্ষকদের। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে এক লিখিত আবেদনে তাঁদের মানবেতর অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে। লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর ২০১১ সালের ৪ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ২৭ হাজার ৭২০ জন উত্তীর্ণ হন। তাঁদের ভেতর থেকে ১২ হাজার ৭০১ জনকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকি ১৫ হাজার ১৯ জনকে রাখা হয় পুলভুক্ত হিসেবে। এরপর শিক্ষক পুল গঠনের জন্য ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে পরিপত্র জারি করে এবং দুই বছর পর ‘শিক্ষক পুল’ নীতিমালা প্রণয়ন করে। ওই নীতিমালায় ছয় মাসের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীদের সইও নেওয়া হয়। কিন্তু উত্তীর্ণ প্রার্থীদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবারো বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ওই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৫২ জন আবেদনকারী ওই বছর রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে পুল শিক্ষককদের স্থায়ী নিয়োগের নির্দেশ দেন। এরপর সরকার পক্ষ আপিল করলেও হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে। একই বিষয়ে আরো একাধিক রিট মামলায়ও একই রায় দেন আদালত। পুল শিক্ষক সেবাজী বিশ্বাস স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে বলা হয়, আদালতের নির্দেশের পর সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে স্থায়ী নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া হয়। গত সংসদ অধিবেশনেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী প্যানেল শিক্ষকদের পাশাপাশি পুল শিক্ষকদের স্থায়ী নিয়োগের কথা জানিয়েছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু স্থায়ী নিয়োগ তো দূরের কথা, তাঁদের পুল নীতিমালা অনুযায়ী কাজও দেওয়া হচ্ছে না। সেবাজী বিশ্বাস জানান, বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক স্বল্পতার জন্য যে সাময়িক শূন্য পদ সৃষ্টি হয় (যেমন- মাতৃত্বকালীন, প্রশিক্ষণজনিত, শিক্ষা লাভজনিত এবং অন্যান্য ছুটি) তার বিপরীতে পুল শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। আর পুল শিক্ষকরা অন্য সহকারী শিক্ষকদের মতো সমান দায়িত্ব পালন করলেও তাঁদেরকে দপ্তরির থেকেও কম বেতন দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া পুল শিক্ষকদের অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাঁরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, পুল শিক্ষকদের মাসিক সম্মানি হবে সর্বসাকুল্যে ছয় হাজার টাকা, সরকারি ছুটি ব্যতিত অন্য কোনো প্রকার ছুটি দাবি করতে পারবেন না পুল শিক্ষকরা, কর্তব্যস্থলে অনুপস্থিত থাকলে প্রতিদিনের জন্য ২০০ টাকা হারে কর্তন হবে, অসুস্থতা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে সর্বোচ্চ সাত দিনের বিনা বেতনে ছুটি নিতে পারবেন এবং প্রতিবার নিয়োগের সময় ১৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রণীত মুচলেকায় স্বাক্ষর দিয়ে যোগদান করতে হবে। এই শর্তে রাজি থাকার পরও তাঁদেরকে কেন বেকার রাখা হচ্ছে- তা নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পুল শিক্ষকরা। এ সমস্যা সমাধানে সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা।