এ বি এন এ : স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা ও এর পরিচর্যার পেছনে বেশ শ্রম দিতে হয়। আসলে মানুষের এত প্রাণশক্তি ও ধৈর্য্য থাকে না। মানুষ সহজাতভাবেই এমন সম্পর্কে জড়াতে চায় যেখানে উভয়ে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারলে সমস্যা সৃষ্টির জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করেন জুটিরা। ক্রমেই তাদের মধ্যে বিষাক্ত পরিবেশ গড়ে ওঠে। এগুলো সম্পর্কের লাল পতাকা। এমন সম্পর্ক যেকোনো মানুষের সঙ্গেই হতে পারে। জেনে নিন, এ ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর ৭ উপায়ের কথা। ১. যৌক্তিক হন, আবেগপ্রবণ নয় : মন ও আবেগের পেছনে শক্তি খরচ না করে যৌক্তিক হওয়ার চেষ্টা করুন। নিজের ভেতরে কি ধরনের আবেগ কাজ করছে তা শান্ত মনে চিন্তা করে দেখুন। আপনার ভেতরে যা ঘটে যাচ্ছে তা রসায়নের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। যাদের সঙ্গে খাপ খায় না, তাদের বুঝতে পারবেন আপনি। আবেগের সূক্ষ্ম জটিলতায় জড়িয়ে গেলেই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠবে। যাকে নিয়ে সমস্যায় আছেন তার সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবুন। যুক্তি দিয়ে ভাবতে থাকুন। ২. ইতিবাচক মানুষদের খুঁজে নিন : অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত। কোনো মানুষের মধ্যে সব বিষয়ে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা লাল পতাকা হয়ে দেখা দেয়। আসলে মানুষ তার চারপাশে এমন কর্মজীবীদের দেখতে চান যারা নিজের জীবনের উন্নতিতে পরিশ্রম করেই চলেছেন। যখন আপনি সফল মানুষদের মাঝে থাকত পারবেন, তখন নিজেও তাদের মাদ্যমে উদ্বুদ্ধ হবেন। তা ছাড়া যারা সফল ও সুখী, তারা এমনিতেই তাদের চারপাশেও সফলদের দেখতে চান। তারা পরামর্শ ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে ধরেন। ৩. একা হতে সমস্যা নেই : একা হওয়ার ভয় ভর করলেই সম্পর্কে এলোমেলো বিষয় চলে আসে। আসলে আমরা অন্যের সঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকতেই জন্মেছি। তাই একাকিত্বের ভয় কাজ করে মনে। আসলে অন্যের সঙ্গে সাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে আগে নিজের সঙ্গে নিরেট সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যদি একা হওয়ার ভয়ে সময় কাটান, এমন কোথাও আসতে হবে যেখানে আপনি আপনার সঙ্গী-সঙ্গিনীকে নিয়েই ভালো থাকেন। একা থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা একটা প্রক্রিয়া। ৪. আগে নিজের মধ্যে আনুন : যে বৈশিষ্ট্য অন্যের মধ্যে দেখতে চান তা আগে নিজের মধ্যে আনুন। আপনাকে এমন একজন মানুষ হতে হবে যার ওপর সবাই ভরসা আনবেন। অর্থাৎ, আগে নিজেকে ঠিক না করলে আপনার উপদেশ অন্যরা শুনবে না। অথবা অন্যের আস্থা অর্জন করতে পারবেন না। নিজের সম্পর্কে অভিযোগ উঠলে তা সামাল দেওয়ার যুক্তি ও উপায় আপনার থাকতে হবে। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস আনুন। যা ভালোবাসেন তা নিজের মধ্যেই রাখুন। নিজেকে কেন্দ্র করে কোনো গসিপ সৃষ্টি হতে দেবেন না। অন্যের মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন না। আবার অন্যকে এমন কিছু হতে বলবেন না যা আপনার মাঝে নেই। ৫. নিজের চাহিদা পূরণ করতে শিখুন : নিজের প্রয়োজনে যেন অন্যকে এগিয়ে আসতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিন। অন্তত যে কাজটি আপনি পারেন তা অন্যকে দিয়ে করাবেন না। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার দিকে দৃষ্টি দিন। একান্তভাবে আপনার নিজের খেয়ার রাখতে অন্য কেউ আসেনি। এটা আপনার নিজের কাজ। যখন নিজের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবন গোছাতে নিজেই ব্যস্ত থাকবেন, তখন অন্যরাও আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে। নিজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আনুন এবং নিজের সামর্থ্য ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকুন। ৬. নিজের মনের ওপর বিশ্বাস রাখুন : অন্য মানুষের শক্তি ও মানসিকতা বুঝতে আপনার মাঝে রয়েছে ষষ্ঠন্দ্রিয়। এর প্রয়োগে কে কেমন তা বেশ সহজে বুঝে নিতে পারবেন। কাছের বা সদ্য পরিচিত কেউ মাদকাসক্ত হলে আপনার মনে বিশেষ সতর্ক সংকেত দেবে ষষ্ঠন্দ্রিয়। আবার আশপামের কেউ যখন আপনার কাছের বন্ধু হয়ে উঠতে পারবে, তখন তাও বুঝতে বেগ পেতে হবে না আপনাকে। এভাবে নিজের ষষ্ঠন্দ্রিয়ের ওপর ভরসা রাখতে হবে। চর্চার মাধ্যমে একে আরো পরিণত করা যায়। সব ধরনের স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের মাঝেও কিছু কিছু ঝামেলা চলে আসে। এটা ঘন ঘন হতে থাকলে বিষাক্ত হতে থাকে সম্পর্ক। নিজেকে সময় দিন। ঘটনার কারণ বের করুন। এ ক্ষেত্রে আপনার ষষ্ঠন্দ্রিয় দারুণ সহায়তা দেবে। ৭. নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানুন : মূলত মানুষ আপনাকে কোন দৃষ্টিতে দেখুক তা আপনিই ঠিক করে দেন। এ কাজে আপনি ক্রমাগত অন্যদের প্রতি সূত্র সরবরাহ করতে থাকেন। এই সূত্রগুলো সীমাবদ্ধতা তৈরি করে দেয়। আপনি কোনো বিষয় সহ্য করবেন কি করবেন না, তার জানান দেয় এসব সূত্র। আপনি যেভাবে তাদের বোঝাচ্ছেন, তার ওপর ভিত্তি করেই আপনার ক্ষেত্রে সততা, শ্রদ্ধা এবং বিশ্বস্ততার মতো বিষয়গুলো অন্যের কাছে স্পষ্ট হতে থাকবে। নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নিতে হবে। যখন নিজের সীমাবদ্ধতাগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, তখন এগুলো নষ্ট করতে পারবে না অন্যরা।