এ বি এন এ : ঘূণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে লণ্ডভন্ড দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। এর মধ্যেই শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মারা গেছেন ২৬ জন মানুষ। হাজার হাজার ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে বসতভিটা ছাড়া হয়েছে অনেক লোক। এই ঘায়ের আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে ছাড়ও মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, এখন মায়ানমার হয়ে ভূটানে আঘাত হানছে।
এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘রোয়ানু’ দেওয়াছিল মালদ্বীপের। এরপর যে ঘূর্ণিঝড় হবে তার নাম ‘কাইয়ান্ট’। এটি দেওয়া হয়েছে মায়ানমারের দেওয়া নাম অনুসারে।
৬৪টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছে- সে হিসেবে পরবর্তী ঝড়ের নাম কাইয়ান্ট। বিশ্ব আবহাওয়া বিজ্ঞান সংগঠন (ডাব্লিউএমও) এবং ইউএন ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কমিউনিকেশন এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (ইএসসিএপি) প্যানেল নামগুলো ঠিক করে।
এই প্যানেলের মোট সদস্য ৮টি দেশ। বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। নতুন করে ইয়েমেন যুক্ত হচ্ছে প্যানেলে। প্রতিটি দেশ ৮টি করে নাম প্রস্তাব করে। ক্রম অনুসারে নামগুলো ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ৮টি নাম হলো, অনিল, অগ্নি, নিশি, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি ও ফণি। ঠিক দুই বছর আগে ‘চপলা’ নামটি ব্যবহার করা হয়।
ভারত, আরব ও বঙ্গোপসাগরের যে কোনোস্থানে ঘূর্ণিঝড় হলেই নামগুলো পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করা হবে।
নামগুলো ডাব্লিউএমও ও ইএসসিএপি-এর সদর দফতর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে নির্ধারণ করা হয়। ‘রোয়ানু’ নামটি ছিল দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের দেওয়া। ইংরেজিতে এ শব্দটির অর্থ ‘কয়ার রোপ’। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘নারকেলের ছোবড়ার আঁশের দড়ি’। ‘রোয়ানু’র পরে আসবে মায়ানমারের দেওয়া নাম ‘কাইয়ান্ট’।
এর পরের ক্রমগুলো হলো- নাদা (ওমান), ভারদাহ (পাকিস্তান), মারুথা (শ্রীলঙ্কা), মোরা (থাইল্যান্ড), অক্ষি (বাংলাদেশ), সাগার (ইন্ডিয়া), মেকুনু (মালদ্বীপ), দেইয়া (মায়ানমার), লুবান (ওমান), টিটলি (পাকিস্তান), গাজা (শ্রীলঙ্কা), পিহেটাই (থাইল্যান্ড), ফণি (বাংলাদেশ), ভাইয়ু (ভারত), হিক্কা (মালদ্বীপ), কাইয়ার (মালদ্বীপ), মাহা (ওমান), বুলবুল (পাকিস্তান), পাওয়ান (শ্রীলঙ্কা) ও আমপান (থাইল্যান্ড)।
এই নামগুলো ব্যবহারের পর নতুন করে ৭২টি নাম প্যানেল সদস্য দেশগুলো অনুমোদন দেবে। ৯টি দেশ প্যানেল সদস্য হওয়ার কারণে ৬৪টি ঘূর্ণিঝড়ের পরিবর্তে ৭২টি নাম অনুমোদন দেওয়া হবে।
শ্রীলঙ্কান শব্দ ‘সিডর’ বা ‘চোখ’ এভাবেই নামকরণ করা হয়েছে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে ভয়াবহভাবে আঘাত হানে ‘সিডর’। কোন এক মেয়ের নামে ‘নার্গিস’ নামটি প্রস্তাব করে পাকিস্তান। তৃতীয় শতকের একজন রাজার নামে মহাসেন নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা। নামগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক পরিচিতি। কারণ উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণহানির সংখ্যাও ঘটিয়েছিল এই ঝড়গুলো।
এরপরে বাংলাদেশের অক্ষি নামটি ব্যবহার করা হবে। অক্ষি’র অর্থটি চোখ। ভারত, আরব ও বঙ্গোপসাগরের যেখানেই ঘূর্ণিঝড় হোক না কেন নামগুলো ব্যবহার করা হয়। যেমন চপলা নামটি বাংলাদেশের দেওয়া। অথচ ঘূর্ণিঝড়টির উৎপত্তিস্থল আরব সাগরে।
নামকরণ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক আয়েশা খাতুন জানান, আবহাওয়া অধিদফর থেকে ৮টি নাম ঠিক করা হয়েছে। যেমন ‘চপলা’ আমাদের দেওয়া নাম। এর অর্থ- চঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় একস্থানে স্থির থাকে না সেই অর্থে চপলা দেওয়া হয়েছে। অক্ষি অর্থ- চোখ। সাগরে যখন দ্রুত গতিতে ঘূর্ণিঝড় হতে থাকে তখন চোখের মতো দেখা যায়। তাই এই নাম।
আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানা যায়, নামগুলো বড় বিষয় না। এর প্রধান বিষয় নামের কারণে যাতে করে পূর্বাভাসের মান উন্নয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করা যায়। ফলে প্রতি বছর প্যানেলের দেশগুলো নিয়ে এস্কেপের সদর দফর ইসলামাবাদে সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি দেশের আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে একজন করে অংশ নেন।