এবিএনএ : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়ে শ্রীলঙ্কার যে প্রতিষ্ঠানের হিসাবে গিয়েছিল, সেটির প্রধান হাগোদা গমেজ শালিকা পেরেরা দাবি করেছেন, তিনি তাঁর বন্ধুর মাধ্যমে ওই অর্থ পেয়েছিলেন। বার্তা সংস্থা এবিএনএ র খবরে গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে মোট ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয় গত ফেব্রুয়ারির ৪ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় শালিকা ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা হয়েছিল। ওই অর্থ শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায় ডয়চে ব্যাংকের হাত ঘুরে। তাদের সন্দেহের কারণেই শেষ পর্যন্ত শালিকার হিসাবের ওই অর্থ আটকে যায়। অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধে প্রাপকের জায়গায় ‘ফাউন্ডেশন’ বানান ভুল থাকায় ডয়চে ব্যাংক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। এর মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে, অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধটি ছিল ভুয়া। পরে এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেওয়া হয়।
শালিকা দাবি করেছেন, শ্রীলঙ্কায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে ওই অর্থ তাঁকে এনে দেওয়ার কথা বলেছিলেন এক বন্ধু। কিন্তু সেটি যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ, সে বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না।
চুরি যাওয়া বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের চারটি হিসাবে জমা হয়ে যায়। সেখান থেকে এই অর্থের একটি বড় অংশ পাচার হয়। এই পাচারের বিষয়ে দেশটির সিনেটের একটি দল তদন্ত করছে। সিনেটের ওই শুনানিতে অংশ নিয়ে অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যবসায়ী ও ক্যাসিনোর পরিচালক কিম ওয়ং পাচারের কিছু অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। গতকাল তিনি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দেশটির মুদ্রা পাচারবিরোধী কাউন্সিলের (এএমসিএল) কাছে ফেরত দিয়েছেন।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার আদালত শালিকা ফাউন্ডেশনের ছয় পরিচালকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এ ঘটনায় দেশটিতে মামলাও হয়েছে।
অর্থ চুরির ঘটনার পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বললেন শালিকা পেরেরা। তিনি রয়টার্সকে বলেন, বন্ধুর কথামতো জাইকা থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ২ কোটি ডলার আসবে, এটা তাঁর কাছে প্রত্যাশিত ছিল। তবে তিনি বলেন, জাইকার সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। পুরো বিষয়টি করে দিয়েছেন তাঁর এক ব্যবসায়ী বন্ধু, যাঁর সঙ্গে জাপানের ‘ভালো যোগাযোগ’ আছে।
তবে রয়টার্স জানিয়েছে, শালিকা পেরেরা তাঁর বন্ধুর যে ফোন নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে তাঁর ওই বন্ধুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আর জাইকার মুখপাত্র নাওয়োকি নেমোতো বলেছেন, শালিকা ফাউন্ডেশন নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।