এ বি এন এ : নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়ে ও পারফরমেন্সে উন্নতি হয়। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ত কর্মসূচি আমাদের যৌনজীবনের ওপরও বাজে প্রভাব ফেলে। ফলে আমরা পাগলের মতো লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন এবং গুগলে যৌনজীবন পুনরুজ্জীবিত করে তোলার উপায় ও পদ্ধতি খুঁজতে থাকি। জার্নাল অফ সেক্সুয়াল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফোকাসের অভাবে সহবাসের বিষয়টি নারীদের কাছে একঘেয়ে গৃহস্থালি কর্মের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু যৌনজীবনে অসন্তুষ্ট এই নারীরা যদি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন করেন তাহলে তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতি লাভের হারও বাড়ে। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে দীর্ঘসময় ধরে লিঙ্গোত্থান ধরে রাখার ক্ষমতা এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদনও বাড়ে। যোগব্যায়ামের সঠিক ভঙ্গিগুলো রপ্ত করে আরো পরিপূর্ণ তৃপ্তিকর যৌনজীবন উপভোগ করুন। ভালো খবরটি হলো : যৌনজীবন উন্নত করবে যোগব্যায়ামের এমন ভঙ্গিগুলো অনেক সহজ এবং ঘরে বসেই চর্চা করা যায়। এখানে যোগব্যায়ামের এমন ছয়টি আসনের উল্লেখ করা হলো যেগুলো যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে সহায়ক। এই আসনগুলো চর্চার মাধ্যমে আপনার নমনীয়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং আপনাকে একটি আকর্ষণীয় যোগী দেহ অর্জনে সহায়তা করবে :
১. কোবরা পোজ বা ভুজঙ্গাসন যে দিনগুলোতে আপনি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অনুভব করবেন সে দিনগুলোতে কোবরা পোজ বা ভুজঙ্গাসন চর্চার মাধ্যমে আপনি নিজের যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে পারেন। এই আসনের মাধ্যমে দেহের যৌনশক্তির কেন্দ্রগুলো উদ্দীপ্ত হয় এবং হৃৎপিণ্ড ও শ্রোণীচক্র খুলে যায়। যার ফলে ভালোবাসা ও যৌনসুখের অনুভূতি উন্মোচিত হয়।
ধাপে ধাপে –
মেঝেতে কপাল ঠেকিয়ে এবং পা দুটি সম্প্রসারিত করে পেটের ওপর শুয়ে পড়ুন। – পা দুটি একসঙ্গে করে পায়ের আঙুলগুলো মেঝেতে চেপে ধরুন। এবং হাতের তালুগুলো বুক বরাবর আনুন। – মেঝে থেকে শরীরের ওপরের অংশ ধীরে ধীরে তোলার চেষ্টা করুন। বাহুগুলো ছড়িয়ে দিন এবং ধনুকের মতো বাঁকা হন। এরপর পিঠ না তুলেই ওপরের দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। – ওই অবস্থানে থেকে তিনবার শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। এরপর আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং বারবার শ্বাস নিন। – ধীরে ধীরে আগের পজিশনে ফিরুন। যাতে ধাপে ধাপে মেরুদণ্ডের পুনঃসম্প্রসারণ হয়।
২. ব্রিজ পোজ বা সেতুবন্ধ সর্বাঙ্গাসন আপনি যদি আগের মতো তৃপ্তিদায়ক চুড়ান্ত যৌন সুখানুভূতি লাভে ব্যর্থ হন তাহলে ব্রিজ পোজ বা সেতুবন্ধ সর্বাঙ্গাসন আপনার সহায়ক হবে। শ্রোণীতলের এই সরল উত্তোলন কৌশল পশ্চাদ্দেশকে সুন্দরভাবে নোয়ানোতে সহায়ক হবে। এতে নারীদের জননাঙ্গের মাংসপেশিও শক্তিশালী হয়। চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির উন্নতি হয় এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি ঘটে।
ধাপে ধাপে –
পিঠের ওপর শুয়ে পড়ুন এবং হাঁটুগুলো নোয়ান। রান ও পশ্চাদ্দেশ মোচড়ান। পশ্চাদ্দেশগুলো তুলুন, পশ্চাদ্দেশের নিচে আঙুলগুলো একত্র করে মেশান এবং পায়ের গোড়ালির ওপর চাপ প্রয়োগ করুন। – পশ্চাদ্দেশ যতটা সম্ভব উঁচুতে তুলে ধরুন। – ওই অবস্থানে থেকে তিনবার শ্বাস নিন এবং বারবার এমন করুন। – কেগেল ব্যায়ামের সঙ্গে এর সমন্বয় সাধন করে শ্রোণীর মাংসপেশি শক্তিশালী করুন।
৩. ঈগল পোজ বা গুরুদাসন এই আসনের মাধ্যমে যৌন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্তচাপ ও প্রবাহ বাড়ে। পা দুটি ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনি গ্রীবাসংবন্ধীয় এলাকায় রক্তের ফিনকি অনুভব করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি আনন্দদায়ক সংবেদনা অনুভব করবেন।
ধাপে ধাপে –
দেহের ওজনটুকু ডান পায়ের ওপর স্থানান্তর করুন। এ সময় পাটিকে একটু বাঁকিয়ে নিন। – এরপর বাম পা’টি তুলুন। বাম রানটি ডান হাঁটুর ওপর ক্রস করে রাখুন। ডান পায়ের নিম্নাংশের মাংসপেশিতে পায়ের উচ্চাংশ পেঁচিয়ে ধরুন এবং ডান পায়ে দেহের ভারসাম্য ধরে রাখুন। – বাহুগুলো তুলে ধরুন এবং একটি দিয়ে আরেকটিকে পেঁচিয়ে ধরুন। যাতে হাতের তালুগুলো একটি আরেকটিকে মোচড়ানো নমস্কারের ভঙ্গিতে যুক্ত করে। – এই অবস্থানে থেকে তিনবার শ্বাস নিন। অন্যপাশেও একই আসন পুনরায় চর্চা করুন।
৪. বাটারফ্লাই পোজ বা বদ্ধ কনাসন প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মতো করে এই সরল আসনটি চর্চার মাধ্যমে যাদের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ফলে যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে গেছে তাদের মধ্যে তীব্র যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টি সম্ভব। এই আসনটি চর্চার মধ্য দিয়ে ভেতরকার রানের পেশি সম্প্রসারণের মাধ্যমে শ্রোণী এলাকায় প্রাকৃতিক ইন্দ্রিয় অন্তরঙ্গতার অনুভুতি সৃষ্টি এবং শ্রোণী এলাকায় রক্তপ্রবাহ বাড়ে। পশ্চাদ্দেশগুলো প্রশস্ত বা উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়ে দমিত চাপ বেরিয়ে যায়। আর পরিণতিতে মেজাজ-মর্জির উন্নতি এবং যৌনাকাঙ্ক্ষা বাড়ে।
ধাপে ধাপে –
পাগুলো সামনের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে বসুন। – হাঁটুগুলো বাঁকান। এরপর পায়ের গোড়ালিগুলো শ্রোণীচক্রের দিকে টেনে নিন। যাতে পায়ের পাতাগুলো একসঙ্গে জড়ো করা যায়। – হাঁটুগুলোকে দুই পাশে ড্রপ ওপেনের সুযোগ দিন। এবং পায়ের আঙুলগুলোর সঙ্গে হাতের আঙুলগুলো জড়িয়ে ধরুন। – এরপর পর্যায়ক্রমে হাঁটুগুলো বুকের দিকে তুলে আনুন। এবং মেঝের দিকে চাপ প্রয়োগ করুন। এভাবে পুনরায় করুন। – হাঁটুগুলো পুশ করার সময় ব্যাথা লাগলে নিচে দুটি কুশন রাখুন।
৫. আধোমুখ শবাসন এই আসনটি চর্চার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে দেহকে প্রাণবন্ত করা যায়। এটি নিতম্বগুলোর জন্যও একটি ভালো ব্যায়াম। এই আসনটির মাধ্যমে আপনি উচ্চমাত্রায় নমনীয় এবং শক্তিশালী অনুভব করবেন। এই আসনটি চর্চার মাধ্যমে ঘাড়ের ব্যথাও দূর হয়।
ধাপে ধাপে –
চার হাত পায়ের ওপর ভর দিয়ে নিচু হয়ে বসুন। হাত দুটি কাঁধের সামনে স্থাপন করুন। – আপনার পশ্চাদ্দেশগুলোও প্রশস্তভাবে আলাদা করুন। এরপর হাতের তালুগুলোর ওপর চাপ দিন। হাঁটুগুলো মেঝে থেকে তুলে ধরুন এবং সেগুলোকে প্রসারিত করুন। – দেহটিকে একটি উল্টানো ভি আকৃতির করুন। পশ্চাদ্দেশগুলো ওপরের দিকে তুলে ধরে টেইলবোনটি আকাশের দিতে তাক করুন। – এই অবস্থানে থেকে তিনবার শ্বাস নিন। এরপর আগের অবস্থানে ফিরে আসুন পুরনায় আসনটির চর্চা করুন। – মাথাটা দৃঢ় করে রাখুন, ভেতরের দিকে তাকান এবং হাঁটুগুলো লক না করে বরং সম্প্রসারিত করুন।
৬. মার্জারি আসন এই আসনের মাধ্যমে শঙ্কুর মাংসপেশি শক্তিশালী হয়। এবং আরো উত্তম এবং নিয়ন্ত্রিত অর্গাজম বা চুড়ান্ত যৌন সুখানুভূতি লাভ করা যায়। এর মাধ্যমে শক্ত হয়ে পড়া পিঠের পেশিগুলোও রিল্যাক্স করা যায়।
ধাপে ধাপে –
চার হাত পায়ের ওপর বসে পড়ুন এবং পিঠটিকে ধনুকের মতো বাঁকান। আর বুকটি ওপরের দিকে তুলে ধরুন। পেট বাকিয়ে পশ্চাদ্দেশ আকাশের দিকে তাক করুন। – ওপরের দিকে তাকিয়ে তিনবার শ্বাস গ্রহণ করুন। – নিম্ন পশ্চাদ্দেশ কুঁচকিয়ে মৃদুভাবে পেটটি কুঁচকান। নিচের দিকে তাকান এবং তিনবার শ্বাস নিন। – আগের অবস্থায় ফিরে যান এবং আসনটি পুনরায় চর্চা করুন।