এবিএনএ : এখন থেকে বাংলাদেশ অথবা অন্য যে কোন দেশের শেয়ার মার্কেট কিংবা বিভিন্ন ধরণের বন্ড অথবা মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিংবা ফিক্সড ডিপজিটসহ ব্যাংকে রক্ষিত সকল অর্থের তথ্য অবহিত করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের আইআরএস তথা ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকে। গ্রিনকার্ডধারী এবং নাগরিকত্ব গ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে অথবা অন্য যে দেশেই থাকুন না কেন, বার্ষিক ট্যাক্স রিটার্নের সময়ে ৮৯৩৮ নম্বর ফরমে এসব তথ্য পেশ করতে হবে। আইন অমান্য করলে জেল-জরিমানার পর মার্কিন সিটিজেনশিপ কেড়ে নেয়ার হুমকিও রয়েছে।
মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে কত টাকা গচ্ছিত রয়েছে সে তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দেশটির একটি চুক্তি রয়েছে। ফরেন একাউন্ট ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স এ্যাক্ট (ফেটকা) নামে পরিচিত এ চুক্তি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গেই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে সকল ব্যাংককে ফেটকা বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী অথবা সিটিজেনদের কোন একাউন্ট থাকলে সে তথ্য আইআরএসকে অবহিত করার পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ তথা এনবিআরও একই প্রক্রিয়া অবলম্বনের আহবান জানিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি।
প্রসঙ্গত, ২০ হাজারেরও অধিক গ্রিনকার্ডধারী অথবা সিটিজেন গ্রহণকারী দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশে বাস করছেন অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এর সিংহভাগই যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্স রিটার্নের সময় এসব তথ্য উল্লেখ করেননি।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কের খ্যাতনামা এটর্নী অশোক কর্মকার এ সংবাদদাতাকে জানান, ”ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা অন্য কোনভাবে অর্জিত অর্থের ওপর বাংলাদেশেও যদি ট্যাক্স প্রদান করে থাকেন, তাহলে সে ডক্যুমেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্স প্রদানের সময় উল্লেখ করতে হবে। তখন বাংলাদেশে দেওয়া ট্যাক্সের অর্থ বাদ দিয়ে বাকি অংশ পরিশোধ করতে হবে। এ বিধি লঙ্ঘন করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানার প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। এর আগে সংশ্লিষ্ট গ্রিনকার্ডধারী অথবা সিটিজেনের ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করা হবে।
নিউইয়র্কের সার্টিফায়েড পাবলিক একাউন্টেন্ট অর্থাৎ সিপিএ রফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ”১৯ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ট্যাক্স রিটার্নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমার অফিসে যারা আসছেন প্রত্যেককেই আমি অবহিত করছি যে, বাংলাদেশে যদি তাদের কোন ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা ব্যাংকে কোন অর্থ জমা থাকে কিংবা শেয়ার মার্কেটে তহবিল বিনিয়োগ অথবা বন্ড ক্রয় করে থাকেন, তাহলে সে সব তথ্য অবশ্যই নির্ধারিত ফরমে উল্লেখ করতে হবে। সে সব তথ্য গোপন করার ভয়াবহ পরিণতির কথাও জানিয়ে দিচ্ছি। কারণ, আইআরএস থেকে এ নির্দেশ আমরাও পেয়েছি। এটি আমাদের দায়িত্ব।”
এটর্নী অশোক কর্মকার এবং সিপিএ রফিকুল ইসলাম পৃথকভাবে এ সংবাদদাতাকে আরো বলেন, বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন গ্রিনকার্ডধারী এবং সিটিজেনদের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য অবশ্যই জানাতে হবে ট্যাক্স প্রদানের সময়। তবে ব্যাংকে গচ্ছিত (যদি তা ১০ হাজার ডলারের অধিক হয়) অর্থসহ বিভিন্ন বন্ড কিংবা শেয়ার মার্কেটের অর্থের জন্যে কোন ট্যাক্স দিতে হবে না। শুধু সে সব তথ্য আইআরএসকে জানিয়ে রাখতে হবে। বাসা, এপার্টমেন্টের ভাড়া বাবদ কত আয় হচ্ছে সেটিও ট্যাক্সের সময় উল্লেখ করতে হয়। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ বিক্রি না করা পর্যন্ত সে তথ্য প্রদানের প্রয়োজন নেই।
এটর্নী অশোক কর্মকার বলেন, ”বিনিয়োগ ভিসায় অনেকে গ্রিনকার্ড নিয়েছেন। পারিবারিক কোটায়ও অনেকে গ্রিনকার্ড পেয়ে বাংলাদেশে ফিরে গেছেন। বছরে একবার এসে গ্রিনকার্ড চালু রাখছেন। আবার অনেকে দু’বছরের জন্যে অনুমতি নিয়ে যাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশেই সবকিছু করছেন। তারা আইআরএসকে ট্যাক্স দিচ্ছেন না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। অনেকে হয়তো বিষয়টি জানেনও না। কিন্তু তা জানা ভীষণ প্রয়োজন। গ্রিনকার্ড রাখতে হলে অথবা সিটিজেনশিপ ধরে রাখতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মেনে চলতেই হবে। এগুলো ছেড়ে দিলেও যতদিন রেখেছিলেন ততদিনের হিসাব কড়ায় গন্ডায় দিতে হবে আইআরএসকে।”
সিপিএ রফিকুল ইসলাম বলেন, ”বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে যদি ১০ হাজার ডলারের অধিক থাকে তাহলেই তা অবহিত করতে হয়। অন্যথায় প্রয়োজন নেই। আইআরএসকে জানালেন না অথচ তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে যদি সে তথ্য জানে তাহলে যত অর্থ ব্যাংকে থাকবে তার অর্ধেক পর্যন্ত তারা (মার্কিন প্রশাসন) বাজেয়াপ্ত করবে। এটি করা হবে ‘গ্লোবাল ইনকাম রিপোর্ট’র আওতায়।”
সিপিএ রফিক উল্লেখ করেন, ”যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন, অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাচ্ছেন অন্য দেশে বসবাস করে, তাদেরকেও ট্যাক্স দিতে হবে সে আয়ের উৎস থেকে। অর্থাৎ ইমিগ্র্যান্টদের দেশ যুক্তরাষ্ট্র শুধু দিয়েই যাবে, সেটি হবে না। যুক্তরাষ্ট্রকেও রিটার্ন দিতে হবে। স্বেচ্ছায় না দিলে আইনী মারপ্যাচে তা আদায় করা হবে। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ফাঁকির কোন সুযোগ নেই। এক ক্লিকেই সব গোমর ফাঁস হচ্ছে।”
ফেটকা বিধি অনুযায়ী, প্রতি বছরের ১৫ এপ্রিল অথবা সর্বশেষ ৩০ জুনের মধ্যে বিদেশের ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ অথবা নগদ অর্থের মূল্যমানের তহবিল (শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ অথবা বন্ড অথবা সঞ্চয়পত্র অথবা ফিক্সড ডিপজিট) সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ আইআরএসকে দিতে হবে। এ বাবদ কোন ট্যাক্স লাগবে না অর্থাৎ আইআরএসকে কোন অর্থ দিতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তা না করেন তাহলেই সমস্যায় পড়বেন। এ সমস্যার ভাগিদার হবেন সিপিএ অথবা ট্যাক্স প্রস্তুতকারকরাও। তবে সিপিএ অথবা ট্যাক্স প্রস্তুতকারি যদি তার ক্লায়েন্টকে এসব ব্যাপারে সজাগ করে থাকেন বলে প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে তারা দোষী হবেন না। শুধু বিদেশের অর্থ-সম্পদই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে আয়-ব্যয়ের যাবতীয় তথ্যেও যদি গড়মিল ধরা পড়ে সে দায়িত্বও সিপিএ কিংবা ট্যাক্স প্রস্তুতকারিরা এড়াতে পারবেন না। এ ধরনের ভুলের জন্যে মাথাপিছু ৫০০ ডলার করে জরিমানার শিকার হবেন সিপিএ অথবা ট্যাক্স প্রস্তুতকারিরা। এবারের ট্যাক্স রিটার্নের সময়ে স্কুল-কলেজগামী সন্তানদের জন্মের সার্টিফিকেট, পরিচয়পত্র ইত্যাদি আগেই যেন সংগ্রহে রাখা হয় সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এটর্নী কর্মকার উল্লেখ করেন, বিদেশে বসবাসরতরা যদি অজ্ঞতাবশতঃ আগে ট্যাক্স প্রদান করে না থাকেন, তবে তা সংশোধন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে যারা আগে ট্যাক্স প্রদান করেছেন সে ডক্যুমেন্ট লাগবে। সেটির প্রয়োজন হবে আইআরএসের ট্যাক্সের পরিমাণ কমানোর স্বার্থে। অর্থাৎ উপার্জিত আয়ের ওপর যত টাকা বাংলাদেশে ট্যাক্স বাবদ দিয়েছেন সে পরিমাণ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশ নেবে আইআরএস।