এবিএনএ : ঢাকা ও ওয়াশিংটন পরস্পরকে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মনে করে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন। বিশ্ব অর্থনীতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সাহায্য করে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্যদানকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র গত ৪০ বছর ধরে অভিন্ন মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, দ্বিপাক্ষিক এই সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে থারা সরকারের মাধ্যমে। এ সময় দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বৈঠকে বসছেন এবং বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং সেনা বাহিনী বিষয়ে আলোচনা করছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষিত চারটি বিশেষ ক্ষেত্রে কাজ করছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য।
তিনি বক্তব্যে আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ রাজনৈতিক বা কোন বিশ্বাসের কারণে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ পছন্দ করে না। উভয় রাষ্ট্র বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে সহিংসতার কোন স্থান নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সবচাইতে বৃহৎ রফতানি বাজার এমন মন্তব্য করে জিয়াউদ্দিন বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয় বাংলাদেশ যা দেশের মোট বিদেশি বিনিয়োগে এক-চতুর্থাংশ। তিনি আরো জানেন, আরো কিছু শুল্কমুক্ত পণ্য রফতানির অনুমতি পেতে আমরা চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে শক্তসমর্থ সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবার জন্য বন্ধু। কারো সঙ্গে বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্কে স্থাপন করতে চায় না বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক পর্যায়ে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি পরস্পর সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নয়ন, শান্তি ও সংহতি বজায় রাখলে আঞ্চলিক পর্যায়ে সম্পদের সঠিক ব্যবহার সম্ভব। আর সে কারণেই আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান বিমসটেক, বিসিআইএম-ইসি প্রতি গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআএন) উন্নয়নমূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো স্থাপন, বাণিজ্য ও হাইড্রা পাওয়ার প্রজেক্টে কাজ করছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জিয়াউদ্দিন বলেন, দুটি দেশ সড়ক, রেল, পানি এবং আকাশ পথে সংযুক্ত। জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে দুটি দেশ নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুটি দেশ বর্তমানে তাদের সম্পর্কের সবচাইতে ভাল সময় কাটাচ্ছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, এর প্রমাণ শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা গ্রহণ এবং সীমান্ত বেড়া তৈরি। দুটি দেশ কোন সমস্যা ছাড়াই কাজগুলো করেছে এবং করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের উষ্ণ সম্পর্কের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শি জেনপিং বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। অক্টোবরের ১৪ তারিখে বাংলাদেশ সফরে এসে ২৭টি চুক্তি সাক্ষর করেন তিনি যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৪০০ কোটি ডলার। ২০১৪ সালে এই দেশ দুটির মধ্যে ৯০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী অন্যতম শীর্ষ দেশ চীন।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের এই রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, দারিদ্র দূর কতে এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ অসাধারণ কিছু বন্ধু পেয়েছে। তাদের সহায়তা দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জিডিপি ১৯৭১ সালে ৬০০ কোটি ডলার ছিল যা বর্তমানে ২২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। শিক্ষার হার ২৫ ভাগ থেকে বেড়ে ৭৫ ভাগ হয়েছে। বর্তমানে দেশে গড় আয়ু ৪৭ থেকে বেড়ে ৭২ বছরে পরিণত হয়েছে। দরিদ্রতা হ্রাস পেয়েছে ২৪ ভাগ। বার্ষিক জিডিপি ৭ ভাগ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রয় ক্ষমতা অনুসারে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তেত্রিশতম। পোশাক রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছি আমরা।
সর্বশেষ জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের বক্তব্যকে উদ্বৃত্ত করে তিনি বলেন, উন্নয়ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।