এ বি এন এ : জঙ্গি তৎপরতা মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে জন কেরি গণমাধ্যম কর্মীদেরকে কিছু বলেননি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানতে পেরেছে সরকার। তাকে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানায় সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জবাবে জন কেরি বলেছেন, তিনি দেশে ফিরে গিয়ে এ নিয়ে আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দুই পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রশংসা করেছেন তিনি। পাশাপাশি এ বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতা কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সে নিয়ে কথা হয়েছে দুই পক্ষে।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দিয়েছ কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো সব কিছু প্রকাশ্যে বলা যায় নাকি? আলোচনা চলছে, আরও চলবে, ধন্যবাদ।’
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন জন কেরি। তার সফরে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে এটা আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি এ বিষয়ে কেরি নতুন প্রস্তাব দেবেন বলেও জানান বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট।
আর্টিজান হামলায় জড়িত সবাইকে পরদিনই হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এই হামলায় মূল হোতা হিসেবে শনাক্ত তামিম চৌধুরী ও তার দুই অনুচর নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছেন। এর আগে কল্যাণপুর অভিযানে নিহত হয়েছে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি। এ ছাড়াও গত এক মাসে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে বহু জঙ্গির প্রাণহানি ঘটেছে।
জন কেরির সঙ্গে জঙ্গি ইস্যুতে বৈঠক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান গণমাধ্যমকর্মীরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলেছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বৈঠকে জন কেরিকে বাংলাদেশে আবার আসার কথা বলেছেন তারা। জনাবে কেরিও বলেছেন তিনি আবার আসবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও ১৯৭১ সালে তাদের দেশে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বাংলাদেশের পক্ষেই ছিলেন। অনেক রাজনীতিবিদ ও সিনেটরও বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন। জন কেরি তখন সিনেটর ছিলেন না, কিন্তু তিনি সে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাবশিষ্য ছিলেন। কেনেডি ছিলেন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তিনি সে কথা বলেছেন।
৯ ঘণ্টার সফরে সকাল সোয়া দশটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন জন কেরি। সেখান থেকে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর তিনি আসেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে।
সফরে মিরপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করার কথা আছে জন কেরির। এ ছাড়া বাংলাদেশের তরুণদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন তিনি। বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকেরও গুঞ্জন আছে জন কেরির। সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী দিল্লির উদ্দেশে রওয়ানা হবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।