এবিএনএ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।
একইসঙ্গে দলটি নাসিরনগরের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। শনিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এসব দাবি তুলে ধরেন ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবীক্রম।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের নামে প্রহসনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের কাছে দেশের হিন্দু-মুসলমান কেউই নিরাপদ নয়। কারও জীবনের মূল্য তাদের কাছে নেই। তাই বিভিন্ন সময় জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।’ মেজর হাফিজ বলেন, ‘নাসিরনগরের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল তাদের দলীয় কর্মীদের বহিষ্কারের মাধ্যমে এ ঘটনায় কারা জড়িত তার স্বরূপ উন্মোচিত করেছে। তারপরেও বিষয়টি আরও পরিষ্কার করার জন্য আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দিরে হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত বলেও অভিযোগ করেন। মেজর হাফিজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। আমরা চাই, যে সব লোকেরা হিন্দুদের সম্পতি দখল করেছে একটি তালিকা করে তাদের বিচার করা হোক।’ এরআগে শুক্রবার মেজর হাফিজের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল নাসিরনগরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন, বিএনপির সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী, রুমি ফারহানা, বিএনপি নেতা একরামুজ্জামান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন মেজর হাফিজ তারই বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহমর্মিতা জানাতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে ধ্বংসলীলা দেখে মর্মাহত। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’ এ সময় নাসিরনগরে হামলায় বিএনপি জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের এমন বক্তব্যর জবাবে তিনি বলেন, ‘আজ দেশের আবহাওয়া খারাপ। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। হয়তো আওয়ামী লীগ নেতারা বলবেন এটার জন্য বিএনপি দায়ী। আরও বলতে পারেন, এজন্য জিয়াউর রহমান দায়ী। তিনি বলে গেছেন ২০১৬ সালে আবহাওয়া খারাপ করতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের এ রকম হাস্যকর কথা কেউ বিশ্বাস করে না।’
প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন বিএনপির সাবেক এই মন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি হিন্দু-মুসলমানরা যাতে একত্রে বসবাস করতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। মেজর হাফিজ বলেন, ‘প্রথম হামলার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত বলা যেতে পারে। কিন্তু আবার ৬টি বাড়িতে নতুন করে আগুন দেয়া হয়েছে। এতেই প্রমানিত হয় এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে।’ তিনি বলেন,ঘটনাস্থলে গেলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন, হামলা হয়েছে ১টার দিকে আর পুলিশ এসেছে বিকাল ৫টার দিকে। বিএনপির এই নেতার দাবি, আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর হলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেতো।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ছবির মাধ্যমে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। এরপর গতকাল শুক্রবার ভোরে আরেক দফা হামলা হয় হিন্দুপল্লীতে। পুড়িয়ে দেয়া হয় ৫টি বসতবাড়ি। বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান, সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।