এ বি এন এ : ‘তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী সেনাদের হাতে বলেই প্রথমে মনে হচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানেরও খোঁজ মিলছিল না। ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধানে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যেতে থাকে। অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
অভ্যুত্থানের এই পর্যায়ে অভ্যুত্থানকারীদের দরকার ছিল জনসমর্থন। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন ও সহযোগিতা। কিন্তু তারা তা পায়নি।
শুরুতে অভ্যুত্থান প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম। কিন্তু তুরস্কের অধিকাংশ মানুষ জানে, দেশটির আসল ক্ষমতা এরদোয়ানের হাতে। তাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করতে তাঁকেই সামনে আসতে হবে।
শেষ পর্যন্ত নাটকীয়ভাবে দৃশ্যপটে হাজির হন এরদোয়ান। এতে অচল হয়ে যায় অভ্যুত্থানকারীদের ট্যাংকের চাকা।
অভ্যুত্থানকারীরা টেলিভিশনকেন্দ্র ও ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করছিল। এরই মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে সিএনএন টুর্কের মাধ্যমে অভ্যুত্থান প্রতিরোধের আহ্বান জানান এরদোয়ান। সবাইকে রাস্তায় নেমে আসতে বলেন তিনি। তাঁর এই আহ্বানে দারুণ সাড়া পড়ে।
একপর্যায়ে এরদোয়ান ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে হাজির হন। সেখানে সংবাদ সম্মেলন করেন। দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা দেন, তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই। এই অভ্যুত্থান জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। অভ্যুত্থানকারীদের চড়া মূল্য দিতে হবে।
এরদোয়ান ইস্তাম্বুলে আসার পর অভ্যুত্থানের মোড় দ্রুত ঘুরে যেতে থাকে। অভ্যুত্থানকারীদের মনোবলে চিড় ধরে। তারা মার খেতে থাকে।
প্রেসিডেন্টের এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার ভাষ্য, তুরস্কের জনগণই এই অভ্যুত্থান ঠেকিয়ে দিয়েছে। তারা এরদোয়ানের ডাকে সাড়া দিয়েছে। তাতেই অভ্যুত্থান ভেসে গেছে।
অভ্যুত্থানকারীরা জনসমর্থন পায়নি। সমর্থন পায়নি সেনাবাহিনীর বড় অংশের।
দেশটির বেশির ভাগ জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা সরকারের পক্ষে ছিলেন। সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারও অভ্যুত্থানের অংশ ছিলেন না। সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুলের সেনা কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যরা এই অভ্যুত্থান সমর্থন করেননি।
নৌবাহিনীর প্রধান এবং বিশেষ বাহিনীর প্রধানও অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছেন। যুদ্ধবিমান থেকে অভ্যুত্থানকারীদের ওপর বিমান হামলা পর্যন্ত চালানো হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজের ফাদি হাকুরার ভাষ্য, অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার আগেই তা ভেঙে পড়েছে। এই অভ্যুত্থান ছিল আনাড়ি। অভ্যুত্থানকারীরা বৃহৎ সামরিক সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। তা ছাড়া তারা সেনাবাহিনীর বড় অংশেরও প্রতিনিধিত্ব করে না।
ফাদি হাকুরা বলেন, এই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক সমর্থন ছিল না। ছিল না জনগণেরও সমর্থন।