এ বি এন এ : কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শিশিরপাড়া মাঠের কাছে আজ শুক্রবার সকালে মীর সানাউর রহমান নামের এক হোমিও চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তরা ওই চিকিৎসকের সঙ্গে থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামানকেও কোপায়। এতে তিনি আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এই শিক্ষককে প্রথমে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ও পরে দুপুরে হেলিকপ্টারে করে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়।
নিহত সানাউরের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুরে। শিশিরপাড়া মাঠের কাছে তাঁর একটি বাংলো বাড়ি আছে। সেখানে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তিনি প্রতি শুক্রবার বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন। শিক্ষক সাইফুজ্জামান তাঁর বন্ধু। বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি সানাউরকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছিলেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরতলির বলদহ গ্রামে। তিনি শহরের কালিশংকরপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন।
সানাউর ও সাইফুজ্জামান বাউল তত্ত্বের অনুসারী বলে তাঁদের পরিচিত ব্যক্তিরা দাবি করেছেন।
হতাহত ব্যক্তিদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে করে সানাউর ও সাইফুজ্জামান শিশিরপাড়া মাঠের কাছে সানাউরের বাংলো বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তাঁরা ওই বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে সকাল নয়টার দিকে মোটরসাইকেল আরোহী তিন ব্যক্তি তাঁদের পেছন থেকে কুপিয়ে জখম করে। সানাউর ঘটনাস্থলে মারা যান। সাইফুজ্জামানকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বিকেল চারটার দিকে সানাউরের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করেন অরবিন্দ পাল ও আশরাফুল হাসান। তাঁরা বলেন, সানাউরের ঘাড়ের ওপরে ও মাথার পেছনে চার থেকে পাঁচটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
আহত শিক্ষক সাইফুজ্জামানকে বেলা একটার দিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সোনিয়া সুলতানা।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম ঘটনার পরপর বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে পূর্ব শত্রুতার জেরে সানাউরকে হত্যা করা হতে পারে। তাঁর মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্রের তিনটি কোপের চিহ্ন রয়েছে। শিক্ষকের মাথার পেছনেও কোপ দেওয়া হয়েছে।
বিকেল চারটার দিকে পুলিশ সুপার বলেন, সানাউরের বাংলো বাড়ির জমি নিয়ে কোনো বিরোধ থাকতে পারে, রোগী দেখা বিষয়ে নারীঘটিত কিছু থাকতে পারে, পূর্ব শত্রুতা থাকতে পারে—প্রাথমিকভাবে এগুলোকে হত্যার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা এটা ভাবছি না। তবে সব বিষয় নিয়েই পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্বৃত্তের অস্ত্রের কোপে ছিন্ন হয়ে যাওয়া শিক্ষকের হাতের দুটি আঙুলও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।