এ বি এন এ : এবারও কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর কাঁচা চামড়ার দাম কমাতে তৎপর ব্যবসায়ীরা। বিশ্ব বাজারে চামড়ার মার্কেট পড়ে যাওয়ায় এবার প্রথমে দাম নির্ধারণই করতে চাননি তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের চাপে দাম নির্ধারণ করার বিষয়ে একমত হলেও পানির দামেই চামড়া কিনতে চাইছেন।
এবারের ঈদে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করতে বুধবার চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বৈঠকে বসছে। ওই বৈঠকেই নির্ধারণ করা হবে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার চামড়া সংগ্রহে নির্ধারিত মূল্য।
এর আগে সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে এবার চামড়ার দাম ১৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়। যদিও এতে মন্ত্রীর সায় নেই। বৈঠকে মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বলেন, এতো কমালে চামড়ার মার্কেটই থাকবে না। আপনারা যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে দাম নির্ধারণ করেন।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের পক্ষে উপস্থিত একজন সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই কাল বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) চামড়া ব্যবসায়ীদের দুটি সংগঠন তাদের নিজ কার্যালয়ে বসে এই ঈদের জন্য কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেবেন।
গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট কোরবানির গরুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে ঈদের সময় গরুর কাঁচা চামড়ার নির্ধারিত মূল্য ছিল প্রতি বর্গফুট ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং খাসি ২০ থেকে ২২ টাকা।
এবার আরও এক দফা কমিয়ে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হবে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দাম কমতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বাইরের মার্কেটে এখন ভাল মানের ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১ ডলার বা তার কিছু বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। নিন্ম মানের চামড়ার দাম একেবারেই কম বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, চামড়ার দাম নির্ধারণে আমরা বুধবার বসব, সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হবে। তবে দাম কমবে এটা নিশ্চিতই বলা যায়।
চামড়া ব্যবসায়ীদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, আমাদের ধানমন্ডির অফিসে বুধবার আমরা বসে সবার মতামত নিয়ে দাম নির্ধারণ করবো। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে মিল রেখে এবার চামড়ার দাম কমছে এটা নিশ্চিত। সেটা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হতে পারে।
বাংলাদেশ ফিনিস লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সাবেক সভাপতি ও রুমা ট্যানারির চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, কাঁচা চামড়ার বিশ্ব বাজারের যে অবস্থা তাতে দাম নির্ধারণ করারই দরকার ছিল না। বাইরের মার্কেটে চামড়া বিক্রিই হচ্ছে না। তাই উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। তারপরে সাভার ট্যানারি স্থানান্তর না হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা চামড়া কিনতে আসছে না। তাই দাম কমা অনিবার্য।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক পণ্যের মধ্যে কাঁচা চামড়াও প্রথম সারির একটি। রাপ্তানি আয়ের দিক দিয়ে কাঁচা চামড়ার স্থান তৃতীয় স্থানে। দেশে প্রস্তুতকৃত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রায় ৯৫ ভাগই বিদেশে রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার হলো জার্মানি, ইতালি, ফ্যান্স, নেদারল্যান্ড, স্পেন, রাশিয়া, ব্রাজিল, জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ঈদুল আজহার সময় কোরবানি চামড়ার সিংহভাগ আসে। কাঁচা চামড়ার মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগলের চামড়াই উল্লেযোগ্য।