,
প্রচ্ছদ | জাতীয় | আন্তর্জাতিক | অর্থনীতি | আমেরিকা | লাইফ স্টাইল | ভিডিও নিউজ | ফিচার | আমেরিকা | বিনোদন | রাজনীতি | খেলাধুলা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | শিক্ষা

আরবের নবী থেকে বিশ্বের নবী

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমেই এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহর তাআলার শাশ্বত দ্বীন পৃথিবীতে পরিপূর্ণতা লাভ করে। হজরত আদম (আ.) থেকে নিয়ে লক্ষাধিক নবী-রাসুল প্রেরণ ছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রেরণের ভূমিকাস্বরূপ, যাঁর প্রেরণের মাধ্যমে মানবজগতে মহান আল্লাহ তাআলার দ্বীন পরিপূর্ণতায় পৌঁছে।

এই শাশ্বত দ্বীনের প্রথম রশ্মি উদ্ভাসিত হয় সমগ্র পৃথিবীর মধ্যমণি ও কেন্দ্রস্থল মক্কাতুল মোকাররমা থেকে। সেখানেই প্রেরিত হন মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সেখান থেকেই এ আলো ছড়িয়ে দেন বিশ্বময়।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে মক্কাকেই কেন এ আলোর কেন্দ্রবিন্দু বানানো হলো? আসলে এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর হলো, মহান আল্লাহ সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা, তিনিই তাঁর সৃষ্টির সর্বাধিক কল্যাণ কিসে তা সবচেয়ে বেশি ও ভালো জানেন। তাঁর কাজের ওপর প্রশ্ন করার অধিকার কারো নেই। এ জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ভালো জানেন, তিনি কোথায় তাঁর রিসালাত অর্পণ করবেন। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৪)

হ্যাঁ, তবে আল্লাহর কোনো কাজই হেকমতবহির্ভূত নয়, সে হিসেবে চিন্তা করলে আল্লাহর অনেক কাজের কিছু হেকমত ও রহস্য আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা বুঝতে পারি। যদিও সব রহস্য বুঝি না। তাই আমরা যদি এ বিষয় নিয়েও চিন্তা করি, তাহলে এতে অনেক রহস্য খুঁজে পাই।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম সৃষ্ট জায়গা

বর্ণিত হয়েছে, কাবা শরিফের স্থানটুকু সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়। কাবার নিচের অংশটুকু ছিল পৃথিবীর প্রথম জমিন। পরবর্তী সময় চতুষ্পার্শ্বে তা বিস্তার লাভ করতে থাকে। প্রথমে একটি বিশাল মহাদেশের সৃষ্টি হয়। এ কারণে মক্কা শরিফকে উম্মুল কুরা বা নগরীগুলোর মূল বলে অভিহিত করা হয়। (দেখুন : তারিখে তাবারি : ১/৪৯; আলবাদউ ওয়াত্তারিখ : ৪/৮১-৮২)

আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে, বর্তমানে যে সাতটি মহাদেশ আছে, সেগুলো মূলত একটি মহাদেশ আকারে ছিল। যাকে বলা হয় Mather Continent বা Pangaea. পরবর্তী সময় এগুলো একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরতে সরতে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছে।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম ইবাদতের ঘর কাবা শরিফ

মহান আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কাবাঘর নির্মাণ করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। এটি বরকতময় ও হেদায়েত বিশ্ববাসীর জন্য। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬)

হজরত আবু জর গিফারি থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, রাসুল (সা.) তাঁর একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এর পরে হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারামের ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৬)

হজরত আদম (আ.) আল্লাহর আদেশে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। এর পর থেকে আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতেন, কাবাপ্রান্তে সমবেত হয়ে আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতেন। এভাবে চলতে চলতে শত শত, এমনকি হাজার হাজার বছর অতিবাহিত হলো। আদম (আ.) থেকে আখেরি নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) পর্যন্ত পৃথিবীতে যত নবী-রাসুলের আগমন ঘটেছে, সবাই কোনো না কোনো সময় পবিত্র মক্কানগরীতে এসে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করেছেন। (ফাজায়েলে মক্কা, হাসান বসরি : পৃ. ২২০)

কাবা শরিফ পুনর্নির্মাণের সময় দোয়া

হজরত ইবরাহিম (আ.) ইসমাঈল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর সংস্কারের পর আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন—‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ করুন, আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি করুন, আমাদের হজের বিধান দান করুন এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। হে প্রতিপালক! এদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন রাসুল প্রেরণ করুন, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াত তেলাওয়াত করবেন, তাদের কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি মহাপরাক্রমশালী। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৭-১২৯)

মহান আল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর বংশ থেকে সমগ্র পৃথিবীর হেদায়েতের জন্য মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শেষ নবী ও রাসুল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।

ওয়াসিলা ইবনে আসকা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর সন্তান থেকে ইসমাঈল (আ.)-কে নির্বাচন করেন এবং ইসমাঈল (আ.)-এর বংশ থেকে বনি কেনানাকে নির্বাচন করেন, বনি কেনানা থেকে কুরাইশকে নির্বাচন করেন, কুরাইশ থেকে বনি হাশেমকে নির্বাচন করেন এবং বনি হাশেম থেকে আমাকে নির্বাচন করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৭৬)

মক্কানগরীর ফজিলত ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম ও সর্বাধিক প্রিয় নগরী হলো মক্কা। ’ (মুসনাদে বায্যার, হাদিস : ৭৮৭৪)

ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। মক্কানগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় মহান আল্লাহ কাবাঘর মক্কায়ই স্থাপন করেন। গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা জানি যে বছরের একটি বিশেষ দিনে মধ্যাহ্নে সূর্য কাবা শরিফের ঠিক মাথার ওপরে অবস্থান করে। তখন কাবা শরিফ বা মক্কা শরিফে অবস্থিত কোনো অট্টালিকা বা কোনো স্থাপনারই ছায়া চোখে পড়ে না। পৃথিবীর অন্য কোনো স্থানে এরূপ ঘটে না। এতে প্রমাণিত হয়, পবিত্র কাবা ভূমণ্ডলের ঠিক মধ্যস্থলে অবস্থিত। ভূপৃষ্ঠের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় কাবাকে পৃথিবীর কেন্দ্র বা হৃদয় বলা যায়।

এ জন্যই আল্লাহ বলেন, ‘আর এভাবেই আমি তোমার ওপর আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছি, যাতে তুমি মূল জনপদ ও তার আশপাশের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে পারো, আর যাতে একত্রিত হওয়ার দিনের ব্যাপারে সতর্ক করতে পারো, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। ’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৭) ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকেও মক্কানগরী মানবসভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। এ নগরীতে হাজেরা (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত সাফা-মারওয়া, জমজম কূপ ও জান্নাতি পাথর হাজরে আসওয়াদসহ আল্লাহ তায়ালার অনেক নিদর্শন রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৮)

মক্কা শরিফের রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য

তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিকভাবে পৃথিবীর চারটি সাম্রাজ্য ছিল। এক. রোম সাম্রাজ্য, যা ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু অংশে বিস্তৃত। দুই. পারস্য সাম্রাজ্য, যা এশিয়ার একটি বড় অংশ আফ্রিকার কিছু অংশ নিয়ে বিস্তৃত। তিন. হিন্দুস্তান সাম্রাজ্য। চার. চীন সাম্রাজ্য। আর এসব সাম্রাজ্যই মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ও পতনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়, যার কোনো সমাধান তাদের কাছে ছিল না। ফেতনা-ফাসাদ, মারামারি-হানাহানি, অবাধ যৌনতা, পশুত্বসহ মানব ইতিহাসের সর্বনিকৃষ্টতায় পৌঁছে যায়। তাই এহেন মুহূর্তেই প্রয়োজন ছিল ইসলামের আলো উদ্ভাসিত হওয়ার, মানবতার আলোকবর্তিকারূপে সারা জাহানকে আলোকিত করার। আর এর জন্য প্রয়োজন ছিল এমন একটি জায়গার, যা পূর্বে উল্লিখিত এসব সাম্রাজ্যের আয়ত্তের বাইরে। আর তা-ই হচ্ছে জাজিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপ। যেখানে নির্দিষ্ট কোনো সম্রাটের আয়ত্ত ও অধিকার ছিল না। যেখানে ওই মুহূর্তে কোনো হুকুমত, সেনাবাহিনী, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি, অর্থব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি কিছুই ছিল না এবং নিয়মতান্ত্রিক কোনো ধর্মেরও প্রভাব ছিল না; বরং সবাই তখন পৌত্তলিকতায় নিমজ্জিত ছিল। এমনই একটি প্রভাবশূন্য জায়গা থেকে নতুন বিপ্লব শুরু হওয়াই যৌক্তিক ছিল।

সঙ্গে সঙ্গে এই জায়গার মানুষজন যদিও উপরোক্ত চার সাম্রাজ্যের লোকদের মতো পাপের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল; কিন্তু তাদের বিশেষ কিছু গুণের জন্য পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠী থেকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল, যার কারণে তারাই ছিল নববিপ্লব সফল করার সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত জাতি। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্য থেকে তাদের বীরত্ব, আত্মমর্যাদাবোধ, ভাষার বিশুদ্ধতা, ত্যাগ, ধৈর্যক্ষমতা, সিদ্ধান্তে অবিচলতা, মেহমানদারি ও আত্মীয়তার সম্পর্কের বন্ধন ইত্যাদি অন্যতম।

গোটা পৃথিবী সে সময় দুই ভাগে বিভক্ত ছিল—আরব ও আজম। আরব মানে সাহিত্যপ্রেমী ও বিশুদ্ধভাষী। আর আজম মানে বোবা, মূক। মহানবী (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষাভাষী। তাই তাঁকে আরবে পাঠানো হয়েছে।

লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার

Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali
Managing Director: Akbar Hossain
Executive Editor: Mehedi Hasan
E-mail : abnanewsusa@gmail.com
Usa Office: 289 West Koach Avenue, Egg harbor City, New Jersey-08215, Bangladesh Office : 60/1. Purana Paltan (2nd Floor), Dhaka-1000, Usa. Phone: +16094649559, Cell:+8801711040113, +8801912-621573
Server mannarged BY PopularServer
Design & Developed BY PopularITLimited